ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
কালিয়াকৈর উপজেলা ভূমি অফিস

অফিস নামজারি আবেদন নামঞ্জুর হয়রানির শিকার গ্রাহকরা

জহিরুল ইসলাম, গাজীপুর

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ০১:১৮ এএম

অফিস নামজারি আবেদন নামঞ্জুর হয়রানির শিকার গ্রাহকরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলা ভূমি অফিসে নামজারির আবেদন নামঞ্জুর করে গ্রাহকদের হয়রানির শিকারের অভিযোগ এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ভূমি অফিসের এসিল্যান্ডের খামখেয়ালিভাবে নামজারি আবেদন বাতিল করায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন আবেদনকারীরা। এতে উপজেলাজুড়ে কমে গেছে জমি ক্রয়-বিক্রিয়। ফলে একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, অন্যদিকে খারিজ না হওয়ায় জমি বিক্রয় করতে না পেরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে জমির মালিকরা। গত কয়েক মাসের ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে নামজারি মঞ্জুরের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শত শত নামজারি আবেদন বাতিল করেছেন। এতে ব্যাংক বীমাসহ অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নামজারির সৃজিত খতিয়ান প্রয়োজন থাকায় ঋণ পেতে ভোগান্তীর সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পমালিকরা। এ ছাড়াও জমি বিক্রি করতে না পারায় জরুরি প্রয়োজন মিটাতে পারছেন না বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে এসিল্যান্ড বলেন, সঠিক কাগজপত্র না থাকায় নামজারি আবেদন নামঞ্জুর করা হচ্ছে।

জানা যায়, কালিয়াকৈর উপজেলার আয়তন ৩১৪.৮০ বর্গ কি.মি.। একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় পাঁচটি তহশিল অফিস রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে অর্ধশত নামজারি আবেদন জমা পড়ে এই অফিসটিতে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিল আফরোজ গত ৭ জুলাই অফিসটিতে যোগদান করার পর থেকেই নামজারি আবেদনকারীরা তাদের নামজারি পেতে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণায়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, আবেদন মঞ্জুর হার মাত্র ৭ শতাংশ। যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। ৯৩ শতাংশ নামজারি আবেদনই নামঞ্জুর করেছেন তিনি। গত ২১ সেপ্টেম্বর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, আবেদন মঞ্জুরের হার মাত্র ১৫ শতাংশ। ৮৫ শতাংশ নামজারি আবেদনই নামঞ্জুর করেছেন। এই রিপোর্ট লেখার সময় (২৩ নভেম্বর) দেখা যায়, ৩৬ শতাংশ আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। বাকি ৬৪ শতাংশ নামজারি আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে। এভাবে গত পাঁচ মাসে এসিল্যান্ড কয়েক হাজার নামজারি আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। গাজীপুর জেলায় ছয়টি রাজস্ব সার্কেল রয়েছে।

এগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কাপাসিয়ায় আবেদন মঞ্জুরের হার ৫৬ শতাংশ। কালীগঞ্জে মঞ্জুরের হার ৭১ শতাংশ। গাজীপুর সদরে মঞ্জুরের হার ৭৬ শতাংশ। শ্রীপুরে মঞ্জুরের হার ৫৪ শতাংশ। টঙ্গীতে আবেদন মঞ্জুরের হার ৮০ শতাংশ। আর কালিয়াকৈরে মঞ্জুরের হার মাত্র ৩৬ শতাংশ এবং বাতিল ৬৪ শতাংশ । যা গাজীপুর জেলার সর্বনিম্ন।

কালিয়াকৈর উপজেলা ভূমি অফিসের নামজারি কেস নং ৩২৪৪/২৪-২৫ এর আবেদনকারী ছেওড়াতলী এলাকার পুশন সাহা। তিনি বলেন, শুনানির দিন সশরীরে হাজির হলেও তার শুনানি গ্রহণ করা হয়নি। পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ না রেখে নামজারি আবেদনটি নামঞ্জুর করেন এসিল্যান্ড।

২৪২৯/২৪-২৫ এর আবেদনকারী বোয়ালী এলাকার প্রভাস কুমার সরকার বলেন, প্রয়োজনীয় দলিল ও এসএ খতিয়ান নাই মর্মে তহশিলদারের মিথ্যা প্রতিবেদনের আলোকে পুনর্বিবেচনার সুযোগ না রেখে আমার নামজারি আবেদনটি নামঞ্জুর হয়। তিনি আরও বলেন, শুনানি ছাড়া নামজারি আবেদন বাতিল করার কোনো সুযোগ নেই।

প্রভাস কুমার আরও বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী, নামজারি জমাভাগ আবেদন চূড়ান্তভাবে বাতিল না করার নির্দেশনা রয়েছে এবং ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সহকারী কমিশনার ভূমি তা পালন করছেন না। তিনি স্বেচ্ছাচারিভাবে তার অফিস চালাচ্ছেন। এতে শুধু নামজারি জমা খারিজের আবেদনকারীরাই নয়, মিসমোকদ্দমা, আদালতের প্রতিবেদন, লিজ নবায়নসহ অন্যান্য সেবাপ্রার্থীরা চরম বিপাকে রয়েছেন।

৩১৮৩/২৪-২৫ এর আবেদনকারী ঢাকা মিরপুরের লাইলী আক্তার বলেন, বায়া দলিল নাই, দখল ও মূল কাগজ প্রদর্শন করে নাই মর্মে তহশিলদারের মিথ্যা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পুনর্বিবেচনার সুযোগ না রেখে নামজারি আবেদনটি নামঞ্জুর করেন এসিল্যান্ড।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আবেদনকারী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এসিল্যান্ড ব্যক্তিগত শুনানিতে মূল কাগজপত্র দেখার কথা থাকলেও অনলাইনে আপলোডকৃত কাগজপত্রে নানা জটিলতা দেখিয়ে নামজারি আবেদন নামঞ্জুর করছেন। অফিসে জমাকৃত নথির হার্ডকপি দেখলেও অনলাইনে আপলোডকৃত নথি বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। ফলে নামজারি মঞ্জুরে জটিলতা আরও বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, কোনো কারণে সার্ভার হ্যাক বা ধ্বংস হয়ে গেলে কি হবে? তার মতে, অনলাইনের চেয়ে হার্ডকপিতে গুরুত্ব বেশি দেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিল আফরোজ বলেন, আমি ব্যাক্তিগতভাবে শুনানি করার জন্য নোটিশ করে থাকি। অনেকেই শুনানিতে আসেন না। ফোন দিলেও জমির মালিক ব্যতিত অন্য লোক ফোন ধরেন। সঠিক কাগজপত্র ও জমির মালিক নিজের ফোন নম্বর ব্যবহার করে আবেদন করলে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। 

গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) মুঠোফোনে কল দিলে তিনি জরুরি মিটিংয়ে আছেন বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। বিভাগীয় কমিশনার শরফউদ্দিন আহমদ চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

আরবি/জেডআর

Link copied!