ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
ভোগান্তিতে পাসপোর্টযাত্রীরা

৩ দিন ধরে বন্ধ বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল

মো. জামাল হোসেন, বেনাপোল

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৭:০৪ পিএম

৩ দিন ধরে বন্ধ বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

তিনদিনেও কোন সমঝোতা না হওয়ায় বেনাপোল থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার সব পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর আগে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পরিবহনে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন ব্যবসায়ী সমিতি। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের সাথে বাস মালিকদের আলোচনা হলেও কোন সমাধান হয়নি।

এতে চরম ভোগান্তি ও নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে পাসপোর্টযাত্রীরা। বিকল্প ব্যবস্থায় অনেকে বাড়ি ফিরছেন অতিরিক্ত খরচ করে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, তারা কেন যে ধর্মঘট ডেকেছে সে বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি।

পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রশাসনের সাথে বৈঠকের পর থেকে সকল পরিবহনের বাসগুলো পৌরসভার নির্দেশনা মতো চলছিল। ঢাকা থেকে রাতে ছেড়ে আসা বাসগুলোর পাসপোর্টযাত্রীদের বেনাপোল চেকপোস্টে নামিয়ে দিয়ে খালি বাস পৌরবাস টার্মিনালে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে শুক্রবার রাত তিনটার দিকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেনাপোলে আসা যাত্রীদের জোরপূর্ব টার্মিনালে নামিয়ে দেয়া হয়।

এ সময় যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং হয়রানির শিকার হয়। পরে সেই যাত্রীগুলো লোকাল বাসে করে চেকপোষ্টে পাঠান টার্মিনালের থাকা পৌরসভার লোকজন। কোন কিছু না জানিয়ে প্রশাসনের এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে বাস মালিক সমিতি তিনদিন ধরে সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

এদিকে, আজ রোববার (২৪ নভেম্বর) সকালে যশোর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে উভয় পক্ষের মধ্যে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দু’পক্ষই তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় কোন সমঝোতা হয়নি।

প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে যানজট নিরসনে নৌ-পরিবহন উপদেষ্টার নির্দেশে এটা করা হয়েছে। উপদেষ্টার নির্দেশ ব্যতিত আমাদের পক্ষে কোন কিছু করা সম্ভব নয়। পৌর টার্মিনাল থেকেই যাত্রী ওঠাতে হবে এবং নামাতে হবে। অপরদিকে, পরিবহন মালিক সমিতি থেকে বলা হয়েছে আগের নিয়মে বাস চলাচল করতে হবে। তা না হলে তারা বাস চলাচল বন্ধ রাখবে।

পাসপোর্টযাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, পার্শ্ববর্তী ভারতের পেট্রাপোলে যাত্রীদের সুবিধার্থে ইমিগ্রেশনের সাথেই নির্মাণ করা হয়েছে যাত্রী টার্মিনাল কিন্তু বাংলাদেশে বর্ডারে চালু টার্মিনাল বন্ধ করে দিয়ে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টার্মিনালে পাঠানো হচ্ছে যাত্রীদের। এতে চরম ভোগান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাদের।

ভারত থেকে আসা ঢাকার শ্যামল কুমার সাহা নামের একজন জানান, পরিবারসহ ভারত গিয়েছিলাম। আজ ফিরে শুনি বাস বন্ধ। সে কারণে ট্রেনে যাচ্ছি। অপর যাত্রী মোকলেছুর রহমান জানান, আমি প্রাইভেট ভাড়া করে যশোরে এক আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছি। ওখান থেকে পরে ঢাকায় যাবো। বেনাপোলে বাস বন্ধ না থাকলে সরাসরি ঢাকায় যেতাম।

পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা জানান, কয়েকদিন আগে শার্শা ইউএনও ও সুধী সমাজের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়। সেখানে যানজট নিরসনে পরিবহনগুলো নতুন পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী আমরা এই টার্মিনাল ব্যবহার করছি। তবে, যাত্রী হয়রানি ও নিরাপত্তার জন্য শেষরাতের দূরপাল্লার পরিবহনগুলো যেন সীমান্ত ঘেঁষা পুরনো টার্মিনালটি ব্যবহার করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

জানতে চাইলে যশোরের শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. নাজীব হাসান বলেন, কী কারণে তারা (পরিবহন মালিক-শ্রমিক) ধর্মঘট ডেকেছে, আমরা সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল নই। তাদের কোনোকিছু বলার থাকলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করতে পারে।

তিনি বলেন, নতুন পৌর বাস টার্মিনালের নিরাপত্তার জন্যে আনসার সদস্য মোতায়েন, নারী-পুরুষের জন্যে পৃথক নামাজের স্থান, ব্রেস্ট ফিডিংয়ের জন্যে কর্নার সবকিছুই রয়েছে। আমরা বলেছি, পাসপোর্টযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্যে রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তারা সীমান্তে যাত্রী নামিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু কোনো বাস আমরা সেখানে থাকতে দেবো না।

এ ব্যাপারে বেনাপোল পরিবহন সমিতির সভাপতি বাবলুর রহমান বাবু জানান, প্রশাসনের সাথে বৈঠকের পর কোন সমঝোতা হয়নি। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ হয়রানির হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছি। আমাদের পরিবহন বাসগুলো তো কোন যানজটের সৃষ্টি করে না বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে অহেতুক যানজট সৃষ্টি করে না। তাহলে কেন আমাদের সাথে এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করছে প্রশাসন।

আরবি/ এইচএম

Link copied!