কয়েক দফা বন্যার পর তিস্তার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই তিস্তার বুকে জেগে ওঠা ধুধু বালুচরে ভুট্টার বীজ বুনতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন চাষিরা। তিস্তার বিস্তীর্ণ চরে ভুট্টার পাশাপাশি আলু, পিয়াজ, রসুন, বাদাম ও বিভিন্ন শাক সবজি চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা।
প্রতিবছর তিস্তার বালুচরে লাখো কৃষক বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে স্বপ্ন দেখছেন নিজের দিনবদলের। আগাম লাভের আশায় তিস্তার বুক চিরে ভুট্টা বীজ বুনতে শুরু করেছেন চরের কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তার বালু চরে ভুট্টা, আলু, পিয়াজ, রসুনসহ অন্যান্য ফসলের বীজ বুনতে শুরু করছেন কৃষকেরা। কোথাও দেখা গেছে ভুট্টা চারা গজিয়েছে। পোকামাকড়ের হাত থেকে ভুট্টার গাছ বাঁচাতে অনেকে কীটনাশক স্প্রে করছে।
লালমনিরহাটে ব্যাপক ফলনের কারণে এ জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে স্থান পেয়েছে ভুট্টা। জেলার পাঁচটি উপজেলা জুড়ে সবুজ পাতায় স্বপ্ন বুনছেন ভুট্টা চাষিরা। ইতোমধ্যে বীজ বপন ও কোথাও কোথাও তরতাজা হয়ে গাছ বেরিয়ে আসছে। বর্তমানে ভুট্টার বীজ ও সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা। গতবছরের তুলনায় এবছর প্রতি কেজি বীজের দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবারে রবি মৌসুমে ভুট্টা ৩২ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে ভূট্টা চাষআবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপর দিকে জেলার তিনটি উপজেলায় চর উন্নয়ন প্রকল্প চালু হয়েছে। এতে প্রতি ব্যাচে ৩০ জন করে ১৬টি ব্যাচে কৃষকদের মাঝে প্রযুক্তি কলাকৌশলে ট্রেনিং প্রদান করা হচ্ছে।
চরাঞ্চলের কৃষকরা বলেন, এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ও পোকার আক্রমণ না থাকলে ভূট্টার বাম্পার ফলনের হবে বলে আশা করছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসলি ক্ষেত পরিচর্যা করছেন তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষক- কৃষাণীরা।
তিস্তা চরের কৃষক মহির আলী বলেন, কয়েক বছর ধরে ভুট্টা চাষ আবাদ করছি। অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভূট্টায় চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। তাই আমরা চরের কৃষকরা প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে ভূট্টা চাষ করি।
হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গতবারের চেয়ে এবছর ভুট্টা বীজের দাম চরা। প্রতিকেজি বীজ ৭শ থেকে ৮শ টাকা করে নিচ্ছে ব্যসায়ীরা। এ ভাবে সার ও বীজের দাম বাড়লে তো আমরা বিপাকে পড়ব।
হাতীবান্ধা উপজেলার কৃষি অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, অত্র উপজেলার চর এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভুট্টার চাষাবাদ হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য ফসলও চাষাবাদ হচ্ছে। ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করে কৃষকদের জীবন পরিবর্তন হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, তিস্তার পানি নেমে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে প্রাণ চাঞ্চল্য শুরু হয়েছে। চরের কৃষকরা বসে নেই। জমির তৈরি করে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করছেন। কৃষকদের মাঝে উৎপাদনের কলাকৌশল টেকনোলজি কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :