ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

বিএনপির ১৫ নেতাকর্মীকে শোকজ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ১১:১০ পিএম

বিএনপির ১৫ নেতাকর্মীকে শোকজ

ছবি: সংগৃহীত

নব গঠিত আহবায়ক কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া ১৫ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) করেছে দলটির জেলার আহ্বায়ক কমিটি।  কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার স্বাক্ষরিত পাঠানো নোটিশ প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অধিকাংশ নেতা চিঠি হাতে পেলেও গতকাল শনিবার জানাজানি হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, শোকজের জবাব না দিলে একতরফাভাবে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপির সাবেক ও আহবায়ক কমিটিতে থাকা এসব শোকজ পাওয়া নেতা।

কিন্তু নোটিশ পাওয়া বিএনপি নেতারা বলছেন, এটা দুই নেতার স্বেচ্ছাচারিতা। তারা সংগঠনের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে। যার কোন ভিত্তি নেই। এতে প্রতিবাদ থামবে না।

শোকজ চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটির অনুমোদন ও ঘোষণা দিয়েছেন। অনুমোদিত কমিটি এবং নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আপনি অগঠনতান্ত্রিক, বে-আইনি, উচ্ছৃঙ্খল ও হাটকারিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে “দায়িত্বজ্ঞানহীন তথাকথিত কর্মসূচীতে” বারবার অংশ নিয়ে অসত্য, বিদ্বেষপূর্ণ, অশালিন ও হুমকিমূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন। যা দলের গঠনতন্ত্রের “৭” এর “খ” ধারা মতে দলের চেয়ারম্যানের কর্তব্য, ক্ষমতা ও দায়িত্বকে অস্বীকৃতি জানানো। এবং “৫” এর “গ” ধারামতে দলবিরোধী শাস্তিযোগ্য কর্মকান্ড হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।’ নোটিশ প্রাপ্তির ৩ দিনের মধ্যে উত্থাপিত অভিযোগের লিখিত জবাব দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। 

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারকে সদস্য সচিব করে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ৩১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে তাঁদের অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন অত্যাচারের সময় মাঠে ছিলেন না। এরপর কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিতে একাধিকবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। 

বিক্ষোভ সমাবেশে আহবায়ক কমিটিতে থাকা কয়েকজন ত্যাগী নেতারাও অংশ নেন। ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে কমিটি ভেঙে দিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তারা। সর্বশেষ ১৭ নভেম্বর আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিতে আবারও মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন পদবঞ্চিতরা।

আন্দোলন থেমে থাকবে না জানিয়ে শোকজ নোটিশ পাওয়া জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন চৌধুরী মিলন বলেন, ‘কমিটিতে দুর্দিনে দলের হাল ধরা অনেক নেতাকর্মীদের যায়গা হয়নি। 

অযোগ্যদের বাদ দিয়ে দলের পাশে থেকে দলের জন্য যারা ত্যাগ শিকার করেছে তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে আন্দোলন করেছি। ওই শোকজ চিঠির কোন প্রশাসনিক গ্রহণযোগ্যতা নেই। শোকজ চিঠির ধরণ দেখে মনে হচ্ছে সদস্য সচিব ব্যক্তিগত চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে যে ধারা উল্লেখ করা হয়েছে সেই ধারা মোতাবেক সদস্য সচিব শোকজ চিঠি পাঠাতে পারেন না। কেউ অনিয়ম বা সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ড করলে সদস্য সচিব কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠাতে পারেন। তারপর সিদ্ধান্ত কেন্দ্র নেবে।’ 

শোকজ নোটিশ পাওয়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু বলেন,‘আমরা কোন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করি নাই। কুতুব উদ্দিন-জাকির হোসেন সরকারের পকেট কমিটির বিরুদ্ধে আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছি। দলের গঠনতন্ত্র মেনেই প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, কারণ দর্শানোর নোটিশ আহবায়ক কমিটির এখতেয়ারভুক্ত। যারা দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাদেরকে শোকজ করা হয়েছে এবং জবাব দিতে বলা হয়েছে। এমন সম্ভাব্য ১৫ জন হতে পারে। এটা কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা না। তবে যারা নোটিশের জবাব দিবেন না তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এতে বিএনপির তৃণমূলে বিভেদ বাড়তে পারে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে জাকির হোসেন সরকার বলেন,‘তারা সংখ্যায় খুব বেশি নয়। তাই আমি মনে করি না এতে দলীয় বিভেদ তৈরি হতে পারে।’

 

আরবি/জেডআর

Link copied!