যশোরের শার্শা উপজেলার দক্ষিনাঞ্চলের মাখলা, ঠেঙামারী ও গোমর বিলে এখনও ১০ ফুট পানি। ফলে ইরি বোরো ধানের চাষ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষীরা। জলাবদ্ধতায় সাড়ে ৫০০ একর জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা কৃষি বিভাগের। আষাঢ় মাসের শুরু থেকে এ বছরে একটানা ভারি বর্ষনে এলাকার ছোট বড় ও মাঝারি সব বিল তলিয়ে যায়। এখন অগ্রহায়ন
মাস। পানিতে টুইটম্বুর উপজেলার অধিকাংশ বিল। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থা।
রুদ্রপুর গ্রামের আজিজুল অভিযোগের সুরে বলেন, ১৯৭০ সালের পর থেকে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত নির্ধারনী ইছামতী নদী তার নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। আর সেই থেকেই কপাল পুড়েছে এ অঞ্চলের চাষীদের। বিলের পানি আগের মত আর নিষ্কাশিত হতে পারেনা। উপরন্ত নদীর উজানের পানি উপজেলার রুদ্রপুর-দাউদখালী খাল দিয়ে মাখলা ও সোনামুখি বিলে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। ৬ মাস ধরে বিল তলিয়ে থাকে। এর সমাধানের জন্য ৮০ এর দশকে রুদ্রপুর-দাউদখালী খালের ওপর ৩ ব্যান্ডের একটি স্লুইসগেট নির্মান করা হয়। কিন্তু এতেও উজানের পানি রোধ করা যায়নি। এরপর ৯০ দশকে ২০ গজ দুরত্বে আরও একটি ৫ ব্যান্ডের স্লুইসগেট নির্মান করা হয়। এতে নির্মান কাজে ক্রুটি থাকায় আগের মতই উজানের পানি প্রবেশ করে মাঠ ঘাট তলিয়ে যেতে থাকে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে দাউদখালী খালের প্রবেশ মুখে বাঁধ দিয়ে স্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি সেচে ঠেঙামারী বিলে ধান রোপনের ব্যবস্থা করা হয়।
তবে এ বছর পানির চাপ অনেক বেশি থাকায় ও অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় সেটিও সম্ভব হবেনা বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
রুদ্রপুর গ্রামের চাষি সিরাজুল ইসলাম জানান, ঠেঙামারী বিলে এখনও ৮ থেকে ১০ ফুট পানি রয়েছে। যে কারনে চলতি মৌসুমে ধান চাষ করা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বাগআঁচড়া ইউনিয়ন এর সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, প্রতিবছর দক্ষিণ শার্শা মাখলার বিলে ৪০০ একর, ঠেঙামারী বিলে ৫০০ একর ও গোমর বিলে ২০০ একর জমিতে ইরি বোরো ধানের চাষ হয়। এবার বিলে জলাবদ্ধতার কারনে চলতি মৌসুমে মাখলা বিলে ২০০ একর, ঠেঙামারী বিলে ২৫০ একর ও গোমর বিলে ১০০ একর জমি পতিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পানি নিষ্কাশিত হলে অল্প কিছু জমি বাদে সব জমিতে ইরি চাষ করা সম্ভব।
আনিছুর বলেন, আমরা পানি নিস্কাশনের জন্য গোমর বিলের মাঝখান দিয়ে খাল কেটে কলারোয়ার সোনাই নদীতে সংযোগ করার জন্য নকশা সহকারে সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বিলের পানি সোনাই নদী দিয়ে ভারতের ইছামতী নদীতে ফেললেই জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে।
রুদ্রপুর গ্রামের কৃষক নায়েব আলী কাজী বলেন, এক কালে এই এলাকায় যারা ধনী চাষি পরিবার ছিল, আজ তারা অসহায় হয়ে পড়েছে। ঠেঙামারী বিলসহ আশেপাশের আওয়ালী বিল ও গোমর বিলসহ বেশ কয়েকটি বিল আষাঢ় মাস থেকে পানির নীচে ডুবে আছে। যার দরুন রুদ্রপুর, দাউদখালী, ভবানীপুর, কায়বা, পাঁচকায়বা, গাজীর কায়বা, পাড়ের কায়বা ও বাইকোলাসহ কায়বা ইউনিয়নের ৮ গ্রামের হাজার হাজার চাষী আমন ধানের চাষ করতে না পেরে পথের ফকির হয়ে গেছে।
দাউদখালী গ্রামের আকবর হোসেন বলেন, আমাদের পরিবারের সবাই কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। লাভ-লোকসান যেটাই হোক কৃষি কাজ করে চলতে হয়। এবার হঠাৎ অতি বৃষ্টির কারণে আমাদের সব কিছুই ডুবে যায়। বিলের পানি না সরলে ইরি ধানেও আমাদের মার খেতে হবে।
টেংরা গ্রামের শামীম আহমেদ বলেন, আমাদের অধিকাংশ জমি মাখলার বিলে। অতিববৃষ্টিতে আমাদের আমনের স্বপ্ন বৃষ্টির পানির নিচে চাপা পড়ে। আগাম চিন্তা করছি ইরি ফসল নিয়ে, অনেক স্বপ্নও দেখছি। ফসল উঠে পাওনাদারের দেনা পরিশোধ করব। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বিল এখনও পানিতে পরিপূর্ণ।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আমি বিলের মাঠ পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য অবহিত করা হয়েছে।
কত একর জমি অনাবাদি থাকবে জানতে চাইলে দীপক কুমার বলেন, এখনি তো বলা সম্ভব হবে না। বোরো ধান করার সময় তো এখনও আছে। তবে এখনও বিলে অনেক পানি রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :