ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোয় যাতায়াত করছে পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ

মোজাম্মেল হক আলম, লাকসাম

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৫:০৮ পিএম

ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোয় যাতায়াত করছে পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ

তিনযুগ ধরে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলছে মনোহরগঞ্জের ৪ গ্রামের শিক্ষার্থীসহ পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঝুুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে দীর্ঘদিন মনোহরগঞ্জ উপজেলার উত্তর হাওলা ইউনিয়নের ৪ গ্রামের প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ যাতায়াত করছে। তিন যুগের বেশি সময় ধরে তাদের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো। গ্রামবাসীর উদ্যোগে প্রতি বছর এই বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার উত্তর ফেনুয়া ও উত্তর হাওলা গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ডাকাতিয়া খাল। কোনো পাকা সেতু না থাকায় খালটির উপর নির্মিত অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো দিয়ে আশপাশের ৪ গ্রামের প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ যাতায়াত করেন প্রতিদিন। একটি পাকা সেতুর অভাবে হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ দোদুল্যমান এই বাঁশের সাঁকো।

এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে প্রতিবছর খরা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। আবার বর্ষা মৌসুমে তা পানিতে তলিয়ে যায়। আর প্রতিদিন সেই বাঁশের তৈরি সাঁকোর ওপর দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী, গর্ভবতী মহিলা, অসুস্থ রোগীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ পারাপার হন। উত্তর ফেনুয়া ও উত্তর হাওলা এবং শিকচাইল গ্রামের প্রায় ৫হাজার মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের তৈরি সাঁকোটি।

এটি ব্যতীত এ অঞ্চলের মানুষের উপজেলা সদরে পৌঁছাতে হলে ঘুরতে হয় ৩থেকে ৪কিলোমিটার। অথচ একটা ব্রীজ নির্মান হলে এতে ভোগান্তি ও সহজে যাতায়াত করতে পারবেন বলে জানান এতদাঞ্চলের সাধারণ জনগণ।

উত্তর হাওলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড উত্তর ফেনুয়া ও ৩নং ওয়ার্ড উত্তর হাওলা এবং খিলা ইউনিয়নের সিকচাইল গ্রামের সঙ্গে সদর ইউনিয়নের যোগাযোগের মাধ্যম হলো শিকচাইল হয়ে এই সড়কটি। এই সহজ যোগাযোগের একমাত্র বাধা হচ্ছে ডাকাতিয়া খাল। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এখানে একটি সেতু এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি হওয়ার পরও এখনো এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি।

উত্তর হাওয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, বৃষ্টির সময় ছাতা ও বই নিয়ে বিপদে থাকি। ছাতা হাতে ধরব, নাকি বই ধরব, না বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে ক্লাসে যাব এটা নিয়েই ভয়ে থাকি। মাঝে মাঝে আমার অনেক সহপাটি এই ব্রিজ থেকে পড়ে আহতও হয়েছে। দেশ উন্নত হচ্ছে কিন্তু আমরা এখনো পুরনো দিনেই রয়ে গেলাম।

উত্তর হাওলা গ্রামের বাসিন্দা মোখলেছ মিয়া বলেন, আমাদের বাপ-দাদার আমলের দু:খ মনে হয় গুজবে না। দিনদিন আমাদের রাষ্ট্র উন্নত হচ্ছে কিন্তু আমরা আশির দশকেই পড়ে রইলাম। এই ব্রিজটির কারণে যাতায়াতের কোন বাহন পাইনা, হেঁটে হেঁটে আগেকার দিনের মানুষের মতো বাজারে যেতে হয়।

উত্তর ফেনুয়া গ্রামের বাসিন্দা ও মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা মহিবুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে এই খালের উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও দাবিটি বার বারই উপেক্ষিত। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এই ব্রিজটি পারাপার হতে গিয়ে বহু দুর্ঘটনায় পড়তে হয়েছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী বিজ্র পারাপারের সময় পড়ে গিয়ে ভিজে নিয়মিত ক্লাসও করতে পারেনা। আমরা এর দ্রুত একটা সমাধান চাই।

মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহরিয়া ইসলাম জানান, বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো। পাশাপাশি একটি সেতু নির্মানের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে কাজ করবো। যেহেতু  স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে এবং সেই সাঁকো দিয়ে গর্ভবতী মা বোনেরাও যাতায়াত করছে তাই গুরুত্বসহকারে দেখবো।

মনোহরগঞ্জ  উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, মনোহরগঞ্জ উপজেলার প্রায় সকল সম্ভাব্য কাজগুলোকে আমরা তালিকা করেছি। আশা করি ক্রমান্বয়ে চাহিদার ভিত্তিতে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!