ভোলা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের দৌরাত্ম নিয়ে রূপালী বাংলাদেশে একটি সংবাদ প্রকাশের জেরে সদর হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে গেছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স।
এদিকে হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে পুরো দাপটের সাথে অবস্থান নেওয়া বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ফিটনেস সার্টিফিকেট ও চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ সুপার মো. শরিফুল হকের নেতৃত্বে মাঠে নেমেছে পুলিশ প্রশাসন। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভোলা ট্রাফিক বিভাগের ইনচার্জ আ. গনিকে।
সোমবার সকালে ভোলা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাতে গোনা দু`একটা বেসরকারি এম্বুলেন্স দেখা গেলেও বেশীরভাগ বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে দেখা যায় নি। এর আগে হাসপাতালে দেখা গেছে অন্ততঃ ১০ থেকে ১৫টি। সেখানে কয়েকজন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সাথে কথা বলছেন ভোলা ট্রাফিক বিভাগের ইনচার্জ আ. গনি।
তিনি বলেন, পুলিশ সুপার মো. শরিফুল হক আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর আমি সোমবার সকালে হাসপাতালসহ আশপাশের এলাকায় ফিটনেসবিহীন এম্বুলেন্সের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছি। এ সময় যুগিরঘোল এলাকা থেকে ফিটনেসবিহীন একটি অ্যাম্বুলেন্স আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যায় সকল বেসরকারি এম্বুলেন্স চালক ও অভিযোগকারীর সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ফিটনেসবিহীন অ্যাম্বুলেন্সসহ যে কোন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় কলেজছাত্র রাসেল বলেন, আমরা সব সময় ভোলা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসি। অনেক সময় আমাদের আত্মীয়রা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে এম্বুলেন্সে করে রোগীদের ঢাকা নিতে হয়। এক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্সগুলোর ফিটনেস না থাকলে আমাদের জীবনের ঝুঁকি থাকে। আর যদি এম্বুলেন্সগুলো ভালো থাকে তাহলে আমাদের জীবনও ঝুঁকিমুক্ত থাকে। তাই, আমরা চাই সকল এম্বুলেন্সের ফিটনেস থাকে।
ভোলা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে আসা রোগী, রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, গরীব রোগীরা ঠিকমতো এম্বুলেন্স সেবা পাচ্ছেনা। রোগীদের বাড়তি ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে ঢাকায়। হাসপাতালে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলে হাসপাতালকে অ্যাম্বুলেন্স এর ব্যবসা কেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছে। প্রতিদিন হাসপাতাল ভবনের সামনে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫টি প্রাইভেট এম্বুলেন্স রাখা থাকে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ চালক অদক্ষ।
হাসপাতাল এখন অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজ খানায় পরিণত হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় চলছে এসব অবৈধ ব্যবসা। সরকারি এম্বুলেন্স থাকলেও এম্বুলেন্স চালকরা রোগীদের সেবার চেয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসায় বেশি মনোযোগী থাকে। সদর হাসপাতালে আশা রোগীরা যেন এম্বুলেন্স চালক এবং তাদের পরিচালিত দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। প্রাইভেট এম্বুলেন্স মালিকদের সাথে হাত মিলিয়ে সদর হাসপাতালের চালকরা সিন্ডিকেট তৈরি করে এম্বুলেন্স বাণিজ্য করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. শরিফুল হক বলেন, ভোলা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে ফিটনেসবিহীন অবৈধ বেসরকারি কোন এম্বুলেন্স কিংবা সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভোলা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ আবু আহাম্মদ শাফী সোমবার বিকেলে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমি তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর দিনই সকল বেসরকারি এম্বুলেন্স হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়েছিলাম। এখন ফের সেগুলো অবস্থান করছে। তবে, এখন থেকে হাসপাতালের তিনটি সরকারি এম্বুলেন্স ছাড়া আর কোন বেসরকারি এম্বুলেন্সকে হাসপাতালে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে তিনি সবার সহযোগিতাও কামনা করেন।
উল্লেখ্য, রোববার রূপালী বাংলাদেশের অনলাইনে "ভোলা সদর হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট, রোগীদের ভোগান্তি" শিরোনামে নিউজ প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। নড়েচড়ে ওঠে প্রশাসন।
আপনার মতামত লিখুন :