কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এতে তিন ছাত্রী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে টেকনাফ কচুবনিয়া এমপি বদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আকবর সাজ্জাদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীর পরিবার।
সোমবার দুপুরে অভিযোগ পাওয়া কথা স্বীকার করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা খুব ন্যাক্কারজনক। অভিযোগ তদন্ত প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা জানান, ওই শিক্ষক পাঠদানের সময় প্রায়ই ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। তাঁরা বিষয়ভিত্তিক পাঠদান বাদ দিয়ে অশালীন ও আপত্তিকর বিষয়ে কথাবার্তা বলেন। শুধু তা-ই নয়, ওই শিক্ষক পাঠদান শেষে, কক্ষে নিয়ে কৌশলে শিক্ষার্থীদের স্পর্শকাতর স্থানেও হাত দেন।
এদিকে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষক আলী আকবর সাজ্জাদ চতুর্থ শ্রেণীর তিন ছাত্রীকে প্রায়ই সময় বিভিন্ন অজুহাতে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। এতে ছাত্রীরা লজ্জাবোধ করে কান্নায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এ ধরনের ঘটনায় একাধিকবার পুনরাবৃত্তি করে। এ ঘটনার পর স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। গত বছর ওই শিক্ষকের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিল আরেক শিক্ষার্থী। সেময় রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়। ভুক্তভোগী পরিবার প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার নিরাপত্তা পরিবেশ দাবি করে করেন অভিযোগে।
সরেজমিনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও পরিবার জানান, ‘স্কুলে পাঠদান শেষে শিক্ষার্থীদের আটকে রাখে ওই শিক্ষক। পরীক্ষা ভালো নম্বর দিয়ে পাস করে দেওয়ার কথা বলে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। অনেকে এই অত্যাচার সহ করতে না পেরে অন্য বিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে। আর কোন শিক্ষার্থী যাতে এ ধরনের ঘটনার শিকার না হয়, সেজন্য ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানায়।’
ভুক্তভোগীর এক অভিভাবক নুর হোসেন (ছদ্ম নাম) বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক যদি এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িত থাকে, তাহলে আমরা কোথায় যাবো। এ শিক্ষ বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ ও অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন। এ নিয়ে বিদ্যালয়ে বেশকয়েকবারও বিচার হয়েছিল। কিন্তু এরপরও শিক্ষকের আচরণ পরিবর্তন হয়নি। অনেক অভিভাবক মানসম্মান হারানোর ভয়ে মুখ খুলতে চান না। চিনতা করছি মেয়েকে মহিলা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিব।’
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু মোহাম্মদ নোমান বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়ে তদন্তে এসেছি। ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তাদের পরিবারদের সঙ্গে কথা বলছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক আলী আকবর সাজ্জাদ বলেন, ‘বিষয়টি শুনে আমি হতভাগ। এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। তবে এটা সত্য যে গত ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝির সময়ে ম্যানেজিং কমিটিতে এ ধরনের একটি মিথ্যা অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ে সালিশ হয়েছিল।
আপনার মতামত লিখুন :