নাটোরের হালতিবিল ভ্রমন পিপাসুদের কাছে মিনি কক্সবাজার হিসেবে পরিচিতি। অন্যদিকে শীতে হয়ে উঠে দিগন্ত সবুজ প্রান্তর যেখানে দোল খায় সোনালী ধানের শীষ। তখন এসব জনপদের দিকে তাকালে চোখ জুড়ে যায়। আর বর্ষায় বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসেন দর্শনাথীরা। নাটোরের হালতিবিল ভ্রমন পিপাসুদের কাছে মিনি কক্সবাজার হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছে। দেশের বৃহত্তম বিল হিসেবে পরিচিত চলনবিল ছাড়াও নাটোরে রয়েছে হালতিবিল।
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার একপ্রান্তে প্রায় ৪০ হাজার একরের বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে এর অবস্থান। এখন এই বিশাল আয়তনের বিলের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই দূর দুরান্ত থেকে আসছেন দর্শনাথীরা।
বর্ষার এই সময়টা এলেই মন ছুটে চলে, নাটোরের কক্সবাজার খ্যাত বিলহালতির বুকে। যে দিকে চোখ যায় শুধুই অথৈ জলরাশি। চোখ মেললে দেখা যায়, সাপের ফেনার মত ঢেউ, আর ঢেউ ভেঙ্গে ছুটে চলে শ্যালো চালিত নৌকাগুলো। মাঝে মাঝে দিগন্ত রেখায় সবুজের কারুকাজ। নাটোর শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এ বিলের অবস্থান। হালতিবিলকে দেশের সবচেয়ে গভীর বিল বলা হয়ে থাকে।
প্রায় ১২ মিটার গভীর এই বিলে, প্রায় সারা বছরই পানি থাকে। বর্ষায় পানির পরিমাণ বেড়ে হয়ে যায় অনেক বেশি। শুকনো মৌসুমে বিলের আয়তন কমে গেলেও তা প্রান ফিরে পায় বর্ষা মৌসুমে। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকেই আসতে থাকেন দর্শনাথীরা। এর ফলে স্থানীয় বাজার এলাকায় ব্যবসায়ীদের ব্যাপক বেচাকেনা বেড়ে যায়। এই মৌসুমটায় অনেক বেকাররাও খুঁজে পায় কাজের সন্ধান। তবে এ বছর বন্যা কম হওয়ায় ব্যবসা কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ী ও নৌকার মাঝিরা।
বর্ষায় সব বয়েসের মানুষই আসেন এ বিলের র্দৃশ্য উপভোগ করতে। দর্শনের অন্যতম স্থান পাটুল ঘাট থেকে হালতিবিলের মধ্যে দিয়ে খাজুরা পযর্ন্ত নির্মিত সড়কটি।
২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্থানীয় সরকার উপমন্ত্রী এ্যাড. এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর প্রচেষ্টায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাটুলহাট থেকে খাজুরাহাট পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এই রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়।
এই সড়কটির বড় বৈশিষ্ট্য হল, শুকনো মৌসুমে এর উপর দিয়ে সবধরনের যানবাহন চলাচল করে এবং বর্ষা মৌসুমে সড়কটি ডুবে যায়। তবে যাতায়াতের জন্য সব সময় থাকে সাধারণ ও শ্যালো চালিত নৌকাগুলো। বর্ষার শুরুতে ও শেষে সড়কের দুধারে পানি থাকলেও সড়ক দিয়ে চলাচল করা যায়, নিজস্ব গাড়ী থাকলে এ দৃশ্য উপভোগ করা আরও সহজ হয়ে ওঠে। আর রাস্থা দিয়ে হাটার সময় সমুদ্র সৈকতের আমেজ পাওয়া যায়। দুপাশে পানি থাকায় মাঝে মাঝে ছোট বড় ঢেউ আছড়ে পরে।
বিলের পশ্চিম দিকে মাধনগর থেকে নলডাঙ্গা পযর্ন্ত রেললাইন জুড়ে লাখো পর্যটকের উপচে পরা ভিড় জমে। মাধনগর ও পাটুল থেকে প্রতিদিন যতদূরে যাওয়া যায় রাস্থা দিয়ে হেঁটে চলেন দর্শনাথীরা। কেউ কেউ দল বেধে আবার অনেকে পরিবার নিয়ে নৌকায় চেপে ভেসে চলেন বিলের মধ্যে। নাটোর অঞ্চলের মানুষের ভ্রমনের এমন সুযোগ আগে আর মেলেনি। দর্শনাথীরা অন্যান্য জেলা গুলো থেকে আসেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
আর মাটির উপর জল, আর জলের উপর ঢেউ এই নিয়ে বসবাস হালতিবিলাঞ্চলের জনগণের। বর্ষায় এই বিলে চোখ মেললে দেখা যাবে হালতি, নুরিয়াগাছা,খোলাবাড়িয়াসহ অন্য গ্রাম যেন এক একটি ভাসমান দ্বীপ। বিলাঞ্চল দেশের উত্তরাঞ্চলের সম্ভাবনাময় অথচ বিপন্ন জনপদ। বর্ষায় এই জনপদকে কুলহীন সাগরের মত দেখায়। অন্য দিকে শীতে হয়ে উঠে দিগন্ত সবুজ প্রান্তর যেখানে দোল খায় সোনালী ধানের শীষ। তখন এসব জনপদের দিকে তাকালে চোখ জুড়ে যায়।
বর্ষায় বিভিন্ন নদীর পানি বেড়ে বিলে প্রবেশ করে। বর্ষায় বিলে প্রকৃতি হয়ে উঠে ভয়াবহ উত্তাল। সামান্য বাতাসে বিলে প্রচন্ড ঢেউ উঠে, বড় বড় ঢেউ আচড়ে পড়ে গ্রামগুলোর উপর। বর্ষায় সময় মাছের নিরাপদ আশ্রয় স্থল হিসাবে বিবেচনা করা হয় বিলকে। তাই এই মৌসুমে ভ্রমন পিপাসুদের কাছে হালতিবিল হতে পারে উপযুক্ত ভ্রমন গন্তব্য।
আপনার মতামত লিখুন :