সিলেটে নিয়ন্ত্রণে নেই বেসরকারি বিদ্যালয়সহ কিন্ডারগার্টেনগুলো। তাদের কারো নিবন্ধন নেই। ইচ্ছামতো চলছে তারা। এমনকি তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে কোনো দায়িত্বশীল অভিভাবক প্রতিষ্ঠানও নেই। বিশেষ করে মহানগরী সিলেটে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোটাই অভিভাবকহীন। এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিতেও আগ্রহী নয় সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। যে কারণে সিলেটে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। নিবন্ধন ও শিক্ষাবিষয়ক (একাডেমিক) স্বীকৃতি ছাড়াই চলছে কিন্ডারগার্টেনসহ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। কারিকুলাম, বেতন কাঠামো, শিক্ষার পরিবেশ, পরীক্ষা কোনো কিছুরই তদারকি করে না শিক্ষা অফিস। ফলে তারা চলছে নিজেদের মতো ইচ্ছাস্বাধীনভাবে।
এ কথা স্বীকার করেছেন সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াত এরশেদ। জানিয়েছেন, মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল এবং আমরা তাদের অনুমোদনও দিয়েছি। আর কোনো বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন নিতে আগ্রহ দেখায়নি। তারা ইচ্ছামতো চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট জেলায় কিন্ডারগার্টেনসহ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৫৪টি। এর মধ্যে বেশির ভাগই সিলেট মহানগরী এলাকায় অবস্থিত। পাড়া-মহল্লায় অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
অত্যধিক লাভজনক হওয়ায় সবচেয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কিন্ডারগার্টেন।
সিলেট সদরেই কিন্ডারগার্টেনসহ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে ৩০০টি। বাকিগুলোর মধ্যে বিশ্বনাথে ৫৩টি, বালাগঞ্জে ১৫টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ২৭টি, গোলাপগঞ্জে ৭২টি, বিয়ানীবাজারে ৫২টি, জকিগঞ্জে ৪৪টি, কানাইঘাটে ৪৬টি, জৈন্তাপুরে ৪৪টি, গোয়াইনঘাটে ১৯টি, কোম্পানীগঞ্জে ৬টি, দক্ষিণ সুরমায় ৭৩টি এবং ওসমানীনগরে ৩টি বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জে একটি ও গোলাপগঞ্জে দুটি বিদ্যালয় নিবন্ধিত। বাকি বিদ্যালয়ের কোনোটাই নিবন্ধন নেয়নি বা এর জন্য আগ্রহও দেখায়নি। এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে বিদ্যালয়গুলোর সংখ্যা জানা রয়েছে।
এর বাইরে এসব প্রতিষ্ঠানের আর কোনো তথ্যই তাদের কাছে নেই।
অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বেসরকারি বিদ্যালয় চালাতে নির্ধারিত শর্ত মেনে নিবন্ধন ও শিক্ষাবিষয়ক (একাডেমিক) স্বীকৃতি লাগবে। তা ছাড়া চালানো যাবে না। শিক্ষাবিষয়ক স্বীকৃতি দেবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং নিবন্ধন দেবে প্রাথমিকের বিভাগীয় উপপরিচালক। ২০২৩ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এমন আইন জারি করলেও তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বছরের ১১ নভেম্বর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন নীতিমালা, ২০২৩ গেজেট প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ সময় নিবন্ধন নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের হাঁকডাক থাকলেও গতি হারিয়ে বসে বাস্তবায়নে গিয়ে। গত ১১ মাসেও সব বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাঠদান অনুমোদন এবং নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা ঘোষণায় আশানুরূপ সাড়া দেয়নি। ফলে সিলেটে এসব স্কুলের সঠিক সংখ্যা নিয়ে যেমন রয়েছে অস্পষ্টতা, তেমনি এসব স্কুলে শিক্ষাব্যবস্থারও কোনো তদারকি হচ্ছে না।
সরকারি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কিন্ডারগার্টেনসহ সিলেটের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে নিবন্ধন ও শিক্ষাবিষয়ক (একাডেমিক) স্বীকৃতির আওতায় আনতে চায় সরকার। এ লক্ষ্য নিয়ে সিলেটে কাজও চলছে। উপজেলাগুলোতে কিন্ডারগার্টেনসহ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সদরের প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধন ও তথ্য প্রদানে অনেকটা অনীহা ভাব দেখাচ্ছে। এ জন্য মোট সংখ্যার হিসাব ছাড়া জেলা শিক্ষা অফিসে বিদ্যালয়গুলোর কোনো তথ্য নেই।
সাখাওয়াত এরশেদ বলেন, কিন্ডারগার্টেনসহ সিলেটের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে নিবন্ধন ও শিক্ষাবিষয়ক (একাডেমিক) স্বীকৃতির আওতায় আনতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের নিবন্ধনের আওতায় এনে শিক্ষা কার্যক্রমে শৃঙ্খলা আনতে জোর দেওয়া হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :