হেমন্তের বিদায়লগ্নে হাড় কাঁপানো শীতের দাপট যেনো জেঁকে বসেছে উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে। সন্ধ্যা না নামতেই চারিদিকের কনকনে ঠান্ডা আবহাওয়া ও তীব্র হিম শীতল বাতাস যেনো পুরো পরিবেশকে শীতের দখলে রেখেছে। ভোরেও হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে থাকে এলাকার সকল রাস্তাঘাট।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) ভোর ৬টায় কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমালয়ের অনেকটা নিকটের জেলা হওয়ায় তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি কুয়াশা এবং হিমশীতল বাতাসের প্রবাহ দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের তীব্রতা।
স্থানীয়রা জানান, শহর ও গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় দিন দিন কুয়াশা ও শীতের মাত্রা অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকেই উত্তরের হিমেল বাতাস শরীরে শীত অনুভব করায়। কনকনে শীতের প্রকোপে মানুষজন গরম কাপড় পড়তে শুরু করেছে। রাতে টিনের চালে টিপটিপ করে শিশির পড়তে শোনা যায়। রাতে ঘুমাতে গেলেই গায়ে কম্বল ও কাঁথা নিতে হচ্ছে। এ জেলায় অন্যান্য জেলার আগেই শীতের আগমন ঘটে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত শীতের দাপট বেশি দেখা যায়।
সকালে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশা ভেদ করেই ছড়াচ্ছে সূর্যের আলো। কুয়াশার মাঝেই সকাল থেকে কর্মব্যস্ততায় রয়েছে বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ। তীব্র ঠান্ডাতেও দিনমজুর, ভ্যানচালকরা তাদের কাজে বেরিয়েছেন। এদিকে ক্ষেতগুলোতে ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা।
সদর এলাকার বড়বাড়ী ইউনিয়নের ভ্যানচালক রেজু মিয়া (৪০) বলেন, অভাবের সংসারে টাকা পয়সা ছাড়া শান্তি নাই । তাই নিজের জীবিকার তাগিদে ভোরেই ভ্যান নিয়ে বের হতে হয়েছে। আজ আগের থেকে অনেক বেশি ঠান্ডা পড়ে গেছে। ঠান্ডার মধ্যে অনেকেই ভ্যানে চড়তে চায় না। তবুও বের হয়েছি। একই এলাকার দিনমজুর মোহাম্মদ আলী (৫৫) বলেন, কয়েকদিন ধরেই কুয়াশা ও শীতের পরিমাণ বেশি মনে হচ্ছে। বিশেষ করে দুইদিন ধরে সকালে ও রাতে ঠান্ডা বেশি লাগে। এমন ঠান্ডা শুরু হলে কয়েকদিনের মধ্যে সকাল সকাল হয়তো কাজে যাওয়া সম্ভব হবে না। স্থানীয় মোহাম্মদ আলী (৬১) বলেন, আগের থেকে অনেক বেশি ঠান্ডা পড়েছে। আমাদের মতো বয়স্কদের জন্য শীত অনেক কষ্টের। দিনের বেলা গরম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে ঠান্ডা লাগতে শুরু করে। শীতের কাপড় বের করতে হয়েছে। রাত যতো বাড়ে শীতও ততো বাড়তে থাকে। রাতে কম্বল কিংবা মোটা কাঁথা নিতে হয়।
এদিকে রাতে ঠান্ডা ও দিনে গরম হওয়ায় বেড়েছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি। লালমনিরহাটে পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে বাড়তে শুরু করেছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা । নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে রোগীরা।
লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আব্দুল মোকাদ্দেম রূপালী বাংলাদেশ’কে বলেন, তীব্র শীতের কারণে হাসপাতালে কয়েকদিন থেকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। এরমধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি৷ আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে।
আপনার মতামত লিখুন :