বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে চোখে গুলিবিদ্ধ হন নাটোরের লক্ষিপুর খোলাবাড়িয়া গ্রামের সাব্বির রহমান। শর্টগানের গুলির ১৪টি স্পিন্টার লাগে তার চোখে মুখে৷ একটি গুলিবিদ্ধ করে তার বাম চোখ ৷ উন্নত চিকিৎসার অভাবে অন্ধত্বের পথে দরিদ্র ইসমাইল হোসেনের একমাত্র ছেলে সাব্বির রহমান।
জানা যায়, জুলাইয়ের শুরুতে ঢাকার মিরপুরে এক ইন্টারনেট কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন তিনি। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে ১৭ জুলাই জনতার সাথে মিরপুরেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এই তরুন। পুলিশ সামনে থেকে গুলি চালায় তাদের উপর। কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন সেখানে, শর্টগানের ১৪ টি স্প্রিন্টার লাগে সাব্বিরের চোখে মুখে। পরে সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা করান। অপারেশন করে চোখের গুলি বের করা গেলেও,সেই চোখে আর দৃষ্টি ফিরে আসেনি। তার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না, অন্ধত্বের পথে জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধা সাব্বির রহমানের।
বাম চোখে গুলি বিদ্ধ সাব্বির রহমান বলেন, "চোখ হারালেও দেশ তো স্বাধীন হয়েছে। ১৭ জুলাই গুলি বিদ্ধ হই, তার পর জ্ঞান হারাই, সহযোগীরা উদ্ধার করে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা করাতে পারি নি। চার দিন পরে অপারেশন করা হয় ঢাকায়। গুলি বের করা গেলেও আমার চোখে দৃষ্টি ফিরেনি। আহত হওয়ার পর থেকে কর্ম হীন হয়ে পরেছি। দরিদ্র বাবার পক্ষে আমার উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না।
গুলিবিদ্ধ সাব্বিরের বাবা ইসমাইল হোসেন বলেন, আমার তরুন ছেলে। তার চোখে ১৭ জুলাই গুলি লাগে। ঢাকা, রাজশাহীতে ঘুরেও উন্নত চিকিৎসা করতে পারিনি একমাত্র সন্তানের। বর্তমানে কর্মহীন ছেলের চিকিৎসা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত আমরা।
গুলিবিদ্ধ সাব্বিরের মা নাজমা বেগম বলেন, দেশের জন্য আমার ছেলে এত বড় ত্যাগ করল, কিন্তু সরকার তার কোন খোঁজ নিল না। আমার ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। উপার্জন করে সংসারে সচ্ছলতা আনবে। সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে আমাদের। আমার ছেলের চোখের আলো ফেরাতে, যেখানে নিলে চিকিৎসা সম্ভব, সেখানে নেওয়া হোক, প্রয়োজনে বিদেশে। ছেলে সুস্থ হয়ে আবার কর্মজীবি হবে। কিন্তু এই স্বপ্ন কে করবে পূরণ?
স্থানীয় গ্রাম প্রধান আবুল কালাম বলেন, দরিদ্র ইসমাইল হোসেনের দ্বারা সম্ভব হচ্ছে না, ছেলে চোখের চিকিৎসা করানো। আমি বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের প্রধানের কাছে অনুরোধ করব, এই বীর সন্তানের সুস্থতার জন্য চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মিজ আসমা শাহীন এই বিষয়ে বলেন, জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসাসহ সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।