অনিয়মের বিষয়ে তথ্য চাইতেই সাংবাদিকদের উপর ক্ষেপে উঠলেন লালমনিরহাট রেলওয়ের এক বিভাগীয় কর্মকর্তা। অনেকটা তেড়ে উঠে তার কক্ষে থাকা সাংবাদিকদের উগ্র মেজাজে লাঞ্চিত করে ‘গেট আউট’ বলে বেরিয়ে যেতে বলেছেন। সাংবাদিকদের লাঞ্চিত করা ওই রেলওয়ে কর্মকর্তার নাম তাসরুজ্জামান বাবু। তিনি লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলীর (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) দায়িত্বে কর্মরত। জানা গেছে, রেলওয়ের দুইজন পরিচর্যকের বিরুদ্ধে বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণকরা যাত্রীদের নিকট অবৈধ ভাবে টাকা তোলার অনিয়মের একটি ভিডিও তথ্য নিয়ে বক্তব্য চাইতে গিয়েই সাংবাদিকদের সাথে আপত্তি বাধে এই রেলওয়ে কর্মকর্তার।
গতকাল রোববার (১লা ডিসেম্বর) বিকেলে লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলীর কক্ষে এসব ঘটনা ঘটে। লাঞ্চিত ওই তিন সাংবাদিক হলেন দৈনিক খোলা কাগজ ও ঢাকা পোস্টের লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি নিয়াজ আহমেদ সিপন, ঢাকা ট্রিবিউনের মহসীন ইসলাম শাওন ও দূরবীন নিউজের জুয়াবের আহমেদ খান।
গত ১৯ নভেম্বর ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ আন্ত:নগর ট্রেনে ইউনিফর্ম পরিহিত দুই পরিচর্যক (অ্যাটেনডেন্ট) বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে অবৈধ পন্থায় টাকা নিচ্ছিল। এসময় ট্রেনে উপস্থিত থাকা একজন যাত্রী তার মোবাইলে এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ ধারণ করে। পরে ঘটনার কিছুদিন পর ওই ভিডিও ফুটেজটি সাংবাদিকদের হাতে আসে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, যাত্রীদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে দরদাম করে টাকা নিচ্ছেন লালমনিরহাট রেলওয়ের ক্যারেজ পরিচর্যকের দায়িত্বে থাকা সোহেল রানা ও মো: রাহাত মিয়া। পরে ভিডিও ফুটেজের বিষয়ে বক্তব্য নিতে রোববার বিকেলে ‘বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া’ প্রসঙ্গে পরিচর্যকদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা রেলওয়ের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী তাসরুজ্জামান বাবু’র কক্ষে যান সাংবাদিকরা। এসময় নিজেদের পরিচয় দিয়ে ওই ঘটনা প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে সাংবাদিকদের উপর ক্ষেপে ওঠেন তিনি। অনেকটা চড়াও হয়ে ওই কর্মকর্তা নিজেকে দেশের প্রথম ‘শিশু সাংবাদিক’ দাবি করে নানা ধরণের দম্ভোক্তি দেখাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের ‘গেটআউট’ বলে তার কক্ষ থেকে বের করে দেন।
এ বিষয়ে জানতে রোববার রাতে রেলওয়ের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী তাসরুজ্জামান বাবুকে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
রেলওয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, প্রতিনিয়ত বিনা টিকিটে রেল ভ্রমনকারী যাত্রীদের কাছে পরিচর্যকরা কোনো রিসিভ ছাড়াই টাকা আদায় করে থাকেন । আর আদায়কৃত অর্থের একটি অংশ যায় ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগনের প্রকৌশলী তাসরুজ্জামান বাবুর পকেটে। এর আগে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠার পর গত ১ অক্টোবর তাকে ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগনের প্রকৌশলীর পদ থেকে বিভাগীয় পার্সোনাল অফিসার হিসাবে বদলি করা হয়। কিন্তু সেই পদে যোগদান না করে নানা কৌশল খাটিয়ে তিনি আগের পদেই থেকে যান। এছাড়াও কিছু কর্মচারী ও ভাড়া করা লোকজন দিয়ে বদলি প্রত্যাহারের দাবিতে তিনি মানববন্ধনও করান। পরে এবিষয় ফাঁস হওয়ার পর তিনি ফের শোকজ পান বলে জানা গেছে। তাছাড়াও অন্য একটি সূত্র জানিয়েছেন, আওয়ামীলীগ সরকারের দলীয় আশীর্বাদ ও খুঁটির জোরে তিনি লালমনিরহাট থেকে সরেননি। শুধু তাই নয় বিভিন্ন ঠিকাদারের সঙ্গে আতাত করে রেল বিভাগের বিভিন্ন কাজের টাকায় তিনি ভাগ বসাতেন। এদিকে লালমনিরহাটে রেলওয়ের ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানোর জন্য সম্প্রতি প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে ওই কর্মকর্তার নেতৃত্বে নতুন করে ‘টার্নটেবিল’ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেটি উদ্বোধনের আগেই ভার বহনে অক্ষমতার প্রমাণ দেয়।
এই বিষয়ে জানতে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) মো. আব্দুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যাত্রী সেবা সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো ধরণের অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ সাংবাদিকদের লাঞ্চিত করার বিষয়েও তিনি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :