ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

কৃষকের ৪৫ টাকার কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৪, ০৭:৫৫ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে পাইকারি বাজারে কৃষক কাঁচামরিচ বিক্রি করছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। সেই কাঁচামরিচ ওই হাট-বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। সারিয়াকান্দিতে চলতি বছরে প্রায় প্রতিটি চরাঞ্চলে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের  মরিচের আবাদ হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কৃষকরা জমি থেকে মরিচ উত্তোলন করে বাজারজাত শুরু করেছেন। এর ফলে বাজারে কাঁচামরিচের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে বরাবরের মতোই এ ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকেরা। যমুনার চরাঞ্চলের ফসলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উপজেলার নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় মরিচের আড়ৎ গুলো গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে কালিতলা নৌঘাট, মথুরাপাড়া, হাসনাপাড়া, পারতিত পরল, রৌহাদহ এবং কাচারি  আড়ৎ অন্যতম। প্রতিদিন আড়ৎ গুলোতে আনুমানিক কয়েক হাজার মণ কাঁচামরিচের আমদানি হয়।

কৃষক ও আড়ৎদারের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলায় কাঁচামরিচ ১৮শ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৪শ টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হয়। এই হিসেবে কৃষকেরা মরিচের দাম পাচ্ছেন ৪৫ টাকা কেজি থেকে শুরু করে ৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত।

এতে কৃষকদের মরিচ উত্তোলন ও আড়ৎ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পরিবহন খরচ বাবদ প্রতি কেজি ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তাই প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করে কৃষকের ৩০ টাকা করে ঘরে উঠছে।

উপজেলার হাট শেরপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া কৃষক মো. দিপন মিয়া বলেন, নয়াপাড়া চরে তিনি তিন বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করেছি। বেশ কয়েকধাপে মরিচগাছ থেকে মরিচ উত্তোলন করে বাজারজাত করেছি। প্রথমে আমি ৪৫শ’ টাকা মণ পর্যন্ত মরিচ বিক্রি করি। কিন্তু সোমবার (২ ডিসেম্বর) আমি ১৮শ টাকা মণ কাঁচামরিচ বিক্রি করলাম। তিনি বলেন, অসময়ের অতিবৃষ্টির কারণে এবছর মরিচ চাষ করতে খরচ বেশি হয়েছে। কিন্তু বাজারে দিন দিন মরিচের দাম কমে যাচ্ছে।

উপজেলার পাইকারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন উপজেলার হাসনাপাড়া আড়ৎ থেকে ৪০ মণ করে কাঁচামরিচ কিনছি। মরিচগুলো ২ থেকে ১ টাকা লাভে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছি। তবে বাজারে মরিচের দাম কীভাবে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে তার সঠিক কারণ আমার জানা নেই। আজ সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে হাসনাপাড়া আড়তে কাঁচামরিচ প্রতিমণ ১৮শ’ টাকা থেকে ২৪শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

সারিয়াকান্দি পৌর বাজারের এক খুচরা ব্যবসায়ী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, কেনা দামের চেয়ে সামান্য কিছু লাভে ৮০ টাকা কেজিতে মরিচ বিক্রি করছি। কাঁচামাল একটু এদিক সেদিক করে বিক্রি না করলে একেবারেই চালান থাকবে না।

বাজারের ক্রেতা খায়রুল ইসলাম সুজন বলেন, সব সবজির দাম বৃদ্ধি । সকালে ৫শ গ্রাম কাঁচামরিচ ৪০ টাকায় কিনলাম।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। মধ্যসত্ত্বভোগীদের জন্য কৃষকেরা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে তিনি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে বগুড়া জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মমতা হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বাজার মনিটরিং করতে বগুড়া জেলা সদর নিয়ন্ত্রণ করতেই হিমশিম খাচ্ছি। উপজেলা সদরে বেশি একটা যাওয়া হচ্ছে না। শুধুমাত্র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের তথ্যের ভিত্তিতেই যাওয়া হয়। কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে বাজার মনিটরিং করা হবে বলে জানিয়েছে বগুড়া জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।