শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সুজন মৃধা, কলাপাড়া

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৪, ০৩:৪৭ পিএম

ওরা এখন মাছ ধরে খায়

সুজন মৃধা, কলাপাড়া

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৪, ০৩:৪৭ পিএম

ওরা এখন মাছ ধরে খায়

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কেউ করে ব্যবসা কেউ করে চাকুরি আবার কেউ গৃহস্থলির কাজ। বলছি পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভার মধ্যে দিয়ে বহমান চিংগরিয়া খালের দুই পাড়ে বসবাসকারী কলাপাড়া পৌরসভার এতিমখানা, চিংগরিয়া, রহমতপুর ও টিয়াখালি ইউনিয়নের একাংশের বসবাসকারী সাধারন মানুষের কথা। যারা এখন সময় পেলে চিংগরিয়া খালে মাছ ধরে খায়।

একসময় চিংগরিয়া খালটি একাধিক বাঁধ নির্মাণ করে ঘের করে মাছ চাষ ও কিছু অংশ ভরাটের পায়তারা চলছিলো। এর পরিপেক্ষিতে বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশ কর্মীরা কলাপাড়া প্রেসক্লাব চত্ত্বর, কলাপাড়া শহীদ সুরেন্দ্র মোহন চৌধুরী সড়ক মনোহরি পট্টিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) চিংগরিয়া খাল নিয়ে রিট পিটিশন দাখিল করে। বর্ষা মৌসুমে খালের দুপাড়ের মানুষ জলাবদ্ধতার পাশাপাশি চাষাবাদের জমি অনাবাদি থাকায়। কলাপাড়া উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম, কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম রাকিবুল আহসান ও কলাপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে উপস্থিত থেকে কলাপাড়া উপজেলা প্রসাশনের সহায়তায় খালের বিভিন্ন অংশের বাঁধ কেটে দেয়। ফলে খালের পানি প্রবাহমান সচল হয়। এখন এই চিংগরিয়া খালে জোয়ার ভাটার পানি স্বাভাবিক ভাবে প্রবাহমান হওয়ায় সাধারণ মানুষ খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। গত ১৩ নভেম্বর কলাপাড়া পৌরসভার হল রুমে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ পরবর্তী চিংগরিয়া খালের বর্তমান অবস্থা ও করণীয় শীর্ষক পরামর্শমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, কলাপাড়া পৌরসভার ভিতর দিয়ে একটি খাল প্রবাহিত হয়েছে যা স্থানীয়ভাবে "চিংগরিয়া খাল" নামে পরিচিত। খালটি কলাপাড়ার খেপুপাড়া মৌজায় আন্ধারমানিক নদী হতে উৎপন্ন হয়ে কলাপাড়া পৌরসভার ১ থেকে ৭ নং ওয়ার্ডের অংশবিশেষের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম শেষে একই মৌজার চাকামইয়া-নিশানবাড়িয়া নদীর (দোন) সাথে মিশেছে। কলাপাড়া ভূমি অফিসের তথ্যানুযায়ী খালটির মূল স্রোতধারা খেপুপাড়া মৌজার ৪৪৩, ৫২৬ ও ৮৪২ নং দাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত। খালটি কলাপাড়া পৌরসভার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত একমাত্র খাল। ৫০০০ পৌরসভাবাসীর কাছে এ খালের গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষিকাজ, পানি নিষ্কাশন, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার্য পানির একমাত্র উৎস এ খালটি। কলাপাড়া পৌরসভাটি উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষাকালে ও জলোচ্ছাসের সময় সমুদ্রের লোনা পানিতে এখানকার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ডুবে যায়। লবণাক্ত এ পানি এ খাল দিয়েই দ্রুত নিষ্কাশিত হয়ে থাকে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ খালটি কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিস খাল হিসেবে চিহ্নিত ভূমির শ্রেণি নাল হিসেবে পরিবর্তন করে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক উল্লেখিত খালের অংশবিশেষ ব্যক্তিবিশেষের নিকট দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রদান করে। বন্দোবস্ত গ্রহীতাগণ খালের অংশে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় খাল ভরাট করে নির্মাণ করেছে বিভিন্ন স্থাপনা। ফলশ্রুতিতে জনগুরুত্বপূর্ণ এ খাল সংকীর্ণ হওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষি নির্ভর জনগোষ্ঠী। জলাবদ্ধতায় ফসল ফলাতে পারছে না শত শত একর জমির মালিকগণ। খালের ভূমি রেকর্ড সংশোধন ও শ্রেনী পরিবর্তন এবং বেআইনিভাবে প্রদানকৃত বন্দোবস্ত বাতিলসহ খালটি যথাযথ সংরক্ষণে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) একটি মামলা দায়ের করে।

কলাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় বসবাসকারী দিনমজুর নুর আলম বলেন, দিনমজুরের কাজ করি সময় পেলে মাছ ধরি। চিংগরিয়া খাল ছেড়ে দেবার পর আমি বেশির ভাগ সময় এ খালে মাছ ধরি। মাছ ধরে সংসারের মাছের চাহিদা মেটাই।

কবি নজরুল ইসলাম সড়কে বসবাসকারী আনোয়ার হাওলাদার বলেন, সময় পেলে চিংগরিয়া খালে সবসময় মাছ ধরি। বেশি মাছ পেলে বিক্রি করি। কম পেলে বাসায় নিয়ে খাই।

এতিমখানা এলাকার বাসিন্দা আল মামুন বলেন, ছোট চাকুরি করি সময় পেলে খালে মাছ ধরে খাই।

চিংগরিয়া ও টিয়াখালী এলাকার বাসিন্দা নরেশ ও সুমন বলেন, খাল উন্মুক্ত হওয়ার পর, সময় পেলে মাছ ধরতে আসি। জোবার সময় অনেকে বরশী, চল, জাল নিয়ে চিংগরিয়া খালে মাছ ধরতে আসে।

আমরা কলাপাড়াবাসী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, চিংগরিয়া খালের সীমানা নির্ধারণ করা, দখলদারদের তালিকা, খাল খনন, পরিষ্কার ও দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন তাহলে ভবিষ্যতে কেউ আর সরকারি সম্পত্তি দখলের সাহস পারবেনা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কলাপাড়ার নেটওয়ার্ক মেম্বর ও সংবাদকর্মী মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন, চিংগরিয়া খাল উদ্ধারে ২০১৩ সনের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর প্রধান নির্বাহী বরাবর একটি আবেদনকরি এবং এর প্রেক্ষিতে বেলা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট আবেদন করা হয়। উচ্চ আদালত খালকে কৃষি জমি দেখিয়ে বন্দবস্ত দেয়া কেসসমূহ কেন বাতিল করা হবেনা এ বিষয়ে একটি রুল জারি করেন। বর্তমানে খালের আংশিক বাঁধ কাটায় ওই অংশের পানির প্রবাহ সচল থাকায় সাধারণ মানুষ এখন মাছ ধরে ও ব্যবহার করতে পারে এটি একটি খুশির খবর। এখন জরুরি ভিত্তিতে খালটির পুরো অংশ উন্মুক্ত হলে কলাপাড়া পৌর শহর সহ টিয়াখালী ইউনিয়নের মানুষ উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারি লিংঙ্কন বায়েন বলেন, জনসাধারনের ব্যবহার্য চিংগরিয়া খালকে নাল দেখিয়ে ৯৯ বছরের জন্য লিজ প্রদান করা হয়েছে যা জনস্বার্থ ও আইন বিরোধী। ভূমি অফিসের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এ হেন কর্মকান্ড করা হয়েয়ে যা বেআইনী ও নিন্দনীয় বিষয়। জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে খাল শ্রেনীর ভূমি রেকর্ড সংশোধনের ও  খালের অংশে বন্দোবস্ত বাতিলের  নির্দেশনাশা চেয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার নম্বর ১৪৭২৯/২৩।

আরবি/জেডআর

Link copied!