ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

কলা চাষে বদলে যাচ্ছে চরাঞ্চলের অর্থনীতি

মাসুদ রানা, কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২৪, ০৩:৩৫ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কলা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল। অন্যান্য ফলের তুলনায় এটি সস্তা এবং সহজলভ্য। সারা বছর কলার চাহিদা থাকায় কুড়িগ্রামের নিষ্ফলা চরভূমিতে এখন বাণিজ্যিকভাবে কলাচাষ করা হচ্ছে। আবাদ ভালো হওয়ায় বদলে যাচ্ছে চরবাসীর অর্থনীতি। সেই সঙ্গে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ কলা বেচাকেনায় গড়ে উঠেছে কলার হাট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কলা কিনতে এই হাটে আসছেন বেপারি-পাইকার-মহাজনরা। ফলে এই হাট ঘিরে হয়েছে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান।

জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমারসহ ১৬ নদনদীর বুকজুড়ে এবং দুপাড়ে রয়েছে বিশাল ধু-ধু বালুচর। আগে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কাশফুল এবং ফাঁকে ফাঁকে ঝাউবন ছাড়া কিছুই চোখে পড়ত না। নিষ্ফলা এই জমিতে ফসল বলতে ছিল কাউন আর চিনা বাদাম। তাও কোনোবার হতো, কোনোবার হতো না। লাভের খাতা থাকত শূন্য। মাত্র বছর চারেক আগেও এই দৃশ্যই চোখে পড়ত। এখন চরগুলোতে সবুজের সমারোহ। বাণিজ্যিকভাবে করা হচ্ছে অমৃতসাগর, কবরি, সবরি, চাঁপা, বিচি ও কাবলি কলার চাষ।

ধরলা পাড়ের সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নে কলার চাষ হচ্ছে বেশি। শহর লাগোয়া চর মাধবরাম থেকে শুরু করে উত্তর দিকের আরাজী পলাশবাড়ী, সুভারকুটি, চর সুভারকুটি, মাস্টারের হাট, হেমের কুটি, হলোখানা, চর হলোখানা, চর সারোডোব, সারোডোব ও ছাট কালুয়াসহ ছোটবড় সব চরে এখন কলাচাষ করা হচ্ছে। কলা চাষ করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করছেন এসব চরের মানুষ।

ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চরমাধবরামের কলা চাষি আম্বিয়া বেগম বলেন, আমরা তিন বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছি। এতে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ও বাজার দর ভালো পেলে এ মৌসুমে অন্তত দুই লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছি। কলা চাষে ব্যয় কম লাভ বেশি। চারা লাগানোর এক বছর পর গাছে কলা ধরে। একবার চাষ করলে তিন সিজনে কলা বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়। আমরা কয়েক বছর থেকে কলা চাষ করে আসছি। আমার এলাকার আমিনুর, ইউনুছ, লোকমান আলী সহ অনেকেই কলা চাষ করে  লাভবান হচ্ছে।

ওই এলাকার আরেক চাষি লোকমান হোসেন বলেন,  এক বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছি। কলা চাষে অল্প শ্রমে ও কম খরচে লাভবান হওয়া যায়। আমার অন্তত অর্ধেক গাছে কলা ধরেছে। বাজার দর ভালো পেলে প্রতিবারের ন্যায় এবারও লাভের আশা করছি।

এখানকার উৎপাদিত কলা বেচাকেনার জন্য জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের পাশে কাঁঠালবাড়ীতে গড়ে উঠেছে কলার হাট। সপ্তাহের সোম ও শুক্রবার বসছে হাট। জমি থেকে কলা কিনে এনে এই হাটে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন অনেক পাইকার-বেপারি।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, জেলার নয়টি উপজেলা মিলে এখন পর্যন্ত ৪৩০ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছে। সামনে আরও চাষাবাদ হবে। গত মৌসুমে ৭০০ থেকে ৮০০ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছিল। বর্তমানে কলার বাজার দর ভালো থাকায় চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা কলাচাষিদের পরামর্শ অব্যাহত রেখেছি। আমাদের পরামর্শে অনেক কৃষকই কলা বাগানের ফাঁকা সারিতে সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন ফসল লাগিয়ে আরও লাভবান হচ্ছেন। ফলে চাষিদের কলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এতে নিষ্ফলা চরভূমিগুলো ক্রমেই আবাদি হয়ে উঠছে।