ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

তীব্র শীতে কাঁপছে লালমনিরহাট, জনজীবন বিপর্যস্ত

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৪, ০৮:৫৬ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পৌষ মাসের ঘরে পা না রাখতেই তীব্র শীত ও হিম বাতাসে লালমনিরহাটের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা কয়েকদিন থেকে ঘন কুয়াশা আর হাঁড় কাপানো শীতে চরম বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষজন। অনেকেই আবার শীতের ঠান্ডা থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। উত্তরের হিমালয়ঘেঁষা এ জেলায় মৌসুমের আগেই শীতের আগমন ঘটে। তবে এবারের শীতেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। শীতে এই অঞ্চলের সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছে তিস্তা ও ধরলা নদীর চরঞ্চলের বসবাসরত মানুষরা। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবসময় এখানে শীতের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। পাশাপাশি গবাদিপশু  নিয়েও চরম বিপাকে রয়েছে এই এলাকার মানুষজন।

সোমবার ৯ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের প্রাপ্ত তথ্যমতে লালমনিরহাটের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল গড়িয়ে দুপুর পেরুলেও  টানা দুইদিন থেকে সূর্যের দেখা মিলছে না।  দিনের অধিকাংশ সময়ই সুর্য মেঘে ভিতরে ঢাকা পড়ছে । আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঠান্ডার দাপট আরও বেড়ে যাবে। এ জেলা হিমালয়ের অনেকটা কাছাকাছি হওয়ায় তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ঘন কুয়াশা এবং হিমশীতল বাতাসের প্রবাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের তীব্রতা। এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষের যেনো দুর্ভোগের শেষ নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘনকুয়াশার কারণে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে যাতায়াত করছে। অন্যদিকে, কুয়াশা ও শীতের কারণে কৃষি শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কাজের গতি অনেকটা কমে গেছে। শীতের কারণে তারা সময়মতো কাজে যেতে পারছেন না।

তীব্র ঠান্ডার পরিস্থিতি জানতে সকালে সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের রিকশা চালক আলম মিয়া’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ভোরে রিক্সা নিয়ে বের হয়েছি। এখন সকাল ১০টা বাজে কিন্তু এই পর্যন্ত পঞ্চাশ টাকাও আয় করতে পারিনি। সকালে বৃষ্টির মতো  কুয়াশা পড়ে। তাই সেসময় তেমন কোনো যাত্রীও পাওয়া যায় না। তবে দুপুরে দিকে ঠান্ডা একটু স্বাভাবিক হলে তখন যাত্রী পাওয়া যায়। কিন্তু সকাল ও সন্ধ্যার পর তেমন কোনো যাত্রী পাওয়া যায় না। ফলে বর্তমানে আয় উপার্জনও কমে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, দিন দিন কুয়াশার সাথে ঠান্ডার মাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকেই উত্তরের হিম বাতাসে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। ভোরের তীব্র শীতে মোটা গরম কাপড় পরেও তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায়না । রাতে টিনের চালে বৃষ্টির মতো টিপটিপ করে শিশির পড়তে  থাকে। সন্ধ্যা থেকেই এখন গায়ে কম্বল ও কাঁথা নিতে হচ্ছে।

এ অঞ্চলে অন্যান্য জেলার আগেই শীতের আগমন ঘটে। সকালে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির সামনে আগুন জ্বালিয়ে শিশু ও বৃদ্ধ মহিলারা শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। ঘন কুয়াশায় সকাল থেকেই কর্মব্যস্ততায় জড়িয়ে আছে বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ। কৃষক, দিনমজুর,ভ্যান চালকরা কাজে বেরিয়েছে। অনেকেই আবার এখনো ধান মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। 

সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের অটো চালক মো. সোহেল রানা বলেন, আগের থেকে ঠান্ডা অনেক বেশি পড়েছে। আমাদের মতো অটো রিকশা চালকদের জন্য শীত অনেক কষ্টের। দিনের বেলা সামান্য গরম থাকলেও সন্ধ্যার পর প্রচুর ঠান্ডা লাগে। একই এলাকার দিনমজুর নুর মোহাম্মদ মিয়া (৩৫) জানান, কয়েকদিন ধরেই কুয়াশা ও শীতের সাথে ঠান্ডার পরিমাণ বেশি। বিশেষ করে দুইদিন ধরে সকালে ও রাতে ঠান্ডা বেশি লাগছে। এমন ঠান্ডা চলতে থাকলে সকাল সকাল হয়তো আর কাজে বের হওয়া সম্ভব হবে না।

আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন চরের কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, শীতের সময় চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে থাকা অনেক কষ্টকর। বাঁশ ও ভাঙা বেড়া দিয়ে ঘরে শীত  ঢুকে বিছানাও ঠান্ডা হয়ে থাকে। এ কারণে রাতেও ঘুম হয় না। শুরু হওয়া শৈত্যপ্রবাহের হিমেল বাতাসে বুকের ভিতরেও ঠান্ডা লাগে। এই ঠান্ডাতেও পেটের দায়ে মাঠে কাজ করছি। কাজ না করলে তো পুরো পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

এদিকে তীব্র ঠান্ডায় এ জেলায় বেড়েছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি। প্রায় ঘরে ঘরে শিশু ও বৃদ্ধদের সর্দি, কাশি ও জ্বর হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। লালমনিরহাটে পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বাড়তে শুরু করেছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা । নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে রোগীরা। লালমনিরহাট সদরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আব্দুল মোকাদ্দেম জানান, হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা কয়েকদিনের তুলনায় বেড়েছে। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোগীদের সেবা প্রদানে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, প্রতি বছর এই এলাকায় শীতের দাপট অনেকটাই বেশি থাকে। তাই  প্রতিবারের মতো এবারেও ঠান্ডায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে। আমরা ইতোমধ্যে ইউএনওদের কাছ থেকে তালিকা চেয়েছি। চুড়ান্ত তালিকা করে পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।