উত্তরে হিমঘেঁষা জেলা লালমনিরহাটে সময়ের আগেই শীতের আগমন ঘটে। তাই শীতকে ঘিরে এ জেলায় তীব্রতার সঙ্গে বেড়েছে লেপ, তোশক, জাজিমসহ বিভিন্ন কম্বলের কদর। ফলে এসব সামগ্রী তৈরিতে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা।
সরেজমিনে লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের চাহিদা মতো হরেক রকমের তুলা দিয়ে ছোট বড় লেপ বা তোশক তৈরি করছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা । বর্তমানে কারিগরদের ব্যস্ততা সঙ্গে ক্রেতাদের ভীড়ও বেড়েছে। দোকানিরা ক্রেতাদের বিভিন্ন মানের কাপড় ও তুলা দেখাচ্ছেন, নিচ্ছেন অর্ডারও। কারিগররা তৈরি করছেন বিভিন্ন সাইজের লেপ- তোশক- জাজিম। জেলা শহরের ১৪ থেকে ১৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লেপ-তোশক তৈরিতে কর্মযজ্ঞ চলছে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। বাজারে সব রকমের জিনিসের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লেপ-তোশক তৈরির উপকরণের খরচও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার প্রতি গজ লেপ তৈরির কাপড়ের দাম ৫০-৬০ টাকা, তোশকের প্রতি গজ কাপড়ের দাম ৪৫-৫০টাকা এবং প্রতি গজ জাজিম তৈরির কাপড়ের দাম রাখা হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা করে। প্রকারভেদে গার্মেন্টস তুলা ৫০ থেকে ১০০ টাকা, ফোম তুলা ২০০, শিমুল তুলা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি জুটের দাম রাখা হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা করে। এ বছরের প্রায় সব ধরনের তুলার কেজিতে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এক পিস রেডিমেট লেপ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে, তোশক বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১৭০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও জাজিম বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে। বালিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকায়।
সদর উপজেলার বড়বাড়ী বাজারে লেপ-তোশকের কারিগর শরিফুল ইসলাম বলেন, ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজের চাপও বেড়েছে। এখন রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করেও মহাজনের চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। তাই গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছি।
কারিগর মাসুদ বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও শীতের আগে ব্যস্ততা বেড়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লেপ-তোশক তৈরির কাজ চলে আমাদের। একটি লেপ তৈরি করলে আকারভেদে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা এবং তোশক তৈরি করতে পারলে দের’শ-তিন’শ টাকা মজুরি পাই।
স্থানীয় ক্রেতা আকবর বলেন, লেপের জন্য দোকানে গিয়ে অর্ডার দিচ্ছি দুটি লেপের।এতে মোট খরচ পড়েছে চার হাজার ৪০০টাকা । রাতে শীতের তীব্রতা বাড়ে। কাঁথা দিয়ে শীত নিবারণ হয় না। এ কারণে অল্প টাকা দিয়ে লেপ বানিয়ে নিচ্ছি।
লালমনিরহাটের বিডিয়ার গেট এলাকার প্রবীণ কারিগর আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বছরের বেশিরভাগ সময়ই আমাদের বসে থাকতে হয়। বছরে শীতের এই তিন মাসই আমাদের সিজন চলে। এ সময়ে ব্যস্ততা বেশি থাকে। এ বছর আগেভাগেই শীতের মৌসুম চলে এসেছে। তাই লেপ-তোশক তৈরির কাজের চাপও বেড়েছে। সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করে ক্রেতাদের চাহিদামতো ডেলিভারি দিতে হচ্ছে। একেকজন কারিগর প্রতিদিন গড়ে ৪-৫টি করে লেপ বানাতে পারে। এতে তাদের দৈনিক ৫০০-৭০০ টাকা আয় হয়। কিন্তু বর্তমানে বাজারে এ আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।`
আপনার মতামত লিখুন :