ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

গৌরনদীতে চার বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ

আহাদ তালুকদার, আগৈলঝাড়া

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৪, ০৬:৫৮ পিএম

গৌরনদীতে চার বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ইল্লা স্ট্যান্ড থেকে তুলাতলা বাজারে যেতে খালের ওপর আরসিসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরুর চার বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে ২৩ মিটারের এই সেতুটি পার হতে বিকল্প রাস্তায় পাড়ি দিতে হয় প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ। এছাড়াও সরকারি খাস জমি রেখে জোরপূর্বক স্থানীয় বাসিন্দাদের মালিকানা সম্পত্তিতে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ইল্লা স্ট্যান্ড থেকে তুলাতলা বাজারে যেতে খালের ওপর ২৩ মিটার দৈঘের্যর আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২ কোটি ৭৩ লাখ ৫১ হাজার ১৯৯ টাকার এই সেতুটির নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের শেষের দিকে এসে এখনও শেষ হয়নি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের অধীনে গৌরনদী উপজেলায় আরও ১৬টি সেতু র্নিমাণ কাজ এখনও চলমান রয়েছে। যার একটিও র্নিধারিত সময় শেষ করতে পারেননি এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। 

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, কাজ শুরুর কয়েক মাসের মাথায় ২০২১ সালের শেষের দিকে ইল্লা স্ট্যান্ড থেকে তুলাতলা বাজারে যেতে খালের ওপর আরসিসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণকাজ ৭০ ভাগ শেষ করে কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। পরর্বতীতে প্রায় চার বছর পর সেতুটির কাজ তড়িঘড়ি করে সম্পন্ন করতে চলতি বছরের ডিসেম্বরে আবার কাজ শুরু করা হয় এবং বিকল্প চলাচলের বাইপাস সড়কটির (সংযোগ সড়ক) মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে এপ্রোচ সড়কের কাজে লাগাচ্ছে ঠিকাদার। এতে করে গত এক সপ্তাহ ধরে বাইপাস সড়ক না থাকায় ভোগান্তিতে পরেছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকাবাসী।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা মৃত গঞ্জে আলী সরদারের ছেলে সিরাজ সরদার অভিযোগ করে বলেন, আমাদের মালিকানা রের্কডিও প্রায় ৪ শতাংশ জমির মধ্যে জোরপূর্বক সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এ সময় নিষেধ করলে আমার কথা শুনেন নি তারা। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে আমাদের বসবাস করতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। স্থানীয় সাদের আলী হাওলাদারের ছেলে রশিদ হাওলাদার জানান, সেতুর নির্মাণের জন্য আমার জমি দখল করে নেয়া হচ্ছে দেখে আমি নিষেধ করি কিন্তু তারা আমার কথা শুনেন নি। তাই আমি ইএনও’র কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

পথচারী সুরুজ মিয়া বলেন, এতদিন সেতুর কাজ বন্ধ থাকলেও অন্তত সংযোগ সড়ক দিয়ে কোন ভাবে হেটে পার হওয়া যেত কিন্তু এখন কাজ শুরু করে আরও ভোগান্তি হল। এখন না আছে বাইপাস সড়ক না আছে এপ্রোচ সড়ক। এতে করে সেতুটি দিয়ে যানবাহন চলাচল ও সাধারন পারাপার বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ২৩ মিটারের এই ব্রিজটি পার হতে হলে বিকল্প রাস্তায়  এখন প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তা পারি দিতে হয়।

চিকিৎসা নিতে যাওয়া সাহিদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমরা জানি সেতুর কাজ চলমান থাকালেও বাইপাস সড়ক ব্যবহার করে হেটে যাওয়া যায়। এখন যে অবস্থা তাতে চলাচল করতে আমাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে।

খালের পাড় ভাঙ্গা ও বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে সেতু নির্মাণে দেড়ি হয়েছে বলে কহিনুর এন্টারপ্রাইজের প্রকল্প পরিচালক মো. কাইউম খান জানান, সেতুর র্নিমাণ কাজ শেষ। শুধুমাত্র এপ্রোচ সড়কের কাজ চলমান রয়েছে যা ৩-৪ দিনের মধ্যে শেষ হবে আর এইসব কাজে জনগনের একটু ভোগান্তি হবেই।

মালিকানা জমিতে জোরপূর্বক সেতু নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা পূর্বের সেতু ভেঙ্গে খাল বরাবর নতুন করে কাজ শুরু করেছি।

গৌরনদী এলজিইডি প্রকৌশলী অহিদুর রহমান জানান, ব্যক্তি মালিকানা কিংবা সরকারী খাস জমিতে সেতু নির্মাণ হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে বিলম্ব হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

মালিকানা জমিতে জোরপূর্বক সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানতে চাইলে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু আবদুল্লাহ খান জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!