নওগাঁ জেলা সড়ক ও জনপথের (সওজ) জমি লীজের নামে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন সার্ভেয়ার আব্দুল আজিজ। বনে গেছেন দূর্নীতিবাজ কোটিপতি। ২০০৯ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সার্ভেয়ার পদে যোগদানের পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সওজের জমি লীজের নামে বহু মানুষের নিকট থেকে তিনি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে মাত্র ১৪ বছরে বনে গেছেন কোটিপতি। গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার নামে বেনামে সম্পদ ও স্বর্ণ অলংকার। আজিজ মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউপির কুসুম্বা ঠনঠনিয়া পাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল জলিলের ছেলে। বর্তমানে তিনি চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায় উপ-সহকারি প্রকৌশলী হিসাবে সওজে কর্মরত আছেন।
অভিযোগ আছে, তিনি নওগাঁ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কর্মরত থাকা অবস্থায় রাস্তার দুই পার্শ্বের জমি লিজ ও সরকারি জমিতে ভবন নির্মান কাজে সহযোগিতার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর এসব করে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। সরকারি জমিতে নির্মাণাধীন ভবন ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েও অনেক ভুক্তভোগীর নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে। আবার কারো ভবন রক্ষার নামে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
নওগাঁ জেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি সতিহাট এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ মকছেদ আলীর নিকট থেকে সওজের জমি লিজ দেওয়ার নামে ৮ লাখ টাকা চুক্তি করে অগ্রিম ৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন। পরে উক্ত জমি লিজ না দিয়ে টালবাহানা করে সমুদ্বয় টাকা আত্মসাত করেন তিনি। পরে প্রদানকৃত অর্থ ফেরত চাইলে তিনি বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করেন ভুক্তভোগীকে। একইভাবে সতিহাট এলাকার "রায়হান সাইকেল ষ্টোরের মালিক" আব্দুল মোত্তালেব এর নিকট থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
আরো জানা গেছে, মান্দা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোল্লা মো. এমদাদুল হকের নিকট থেকে ফেরিঘাট এলাকায় অবস্থিত তিন তলা ভবন রক্ষার নামে ৭ লাখ টাকা গ্রহন করেছেন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। হিতে বিপরীত। পরে সওজের জমিতে অবস্থিত তার ভবনটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এভাবে ফেরিঘাট এলাকার অধ্যক্ষ মনিমুলের নিকট থেকে ১ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মনিমুল আরো জানান, তার আপন খালুর নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা একইভাবে গ্রহণ করেছেন।
আরো গুঞ্জন আছে, উপজেলার দেলুয়াবাড়ী বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আনোয়ার নিকট থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নওগাঁ সদর সিনেমা হলের মালিক পরিতোষের নিকট থেকে ১৫ লাখ টাকা কাজ করে দেওয়ার নামে নিয়েছেন তিনি। সাবাইহাটের এক মহিলার নিকট থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এভাবে জেলা ও উপজেলা জুড়ে কোটি কোটি টাকার লীজ বানিজ্য করেছেন সার্ভেয়ার আজিজ।
অধ্যক্ষ মনিমুল বলেন, আব্দুল আজিজ আমার আত্নীয় হয়েও আমার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন। আমি তার বিরুদ্ধে মিনিস্ট্রিতে অভিযোগ করবো। সে সময় আরো কয়েকজন ভুক্তভোগীর কথা জানান তিনি।
বিশিষ্ট ইটভাটা ব্যবসায়ী মকছেদ আলী বলেন, আব্দুল আজিজ সরকারি জমি লীজ দেওয়ার নামে আমার কাছ থেকে ৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন। এখন সে আর টাকা ফেরত দিচ্ছেনা।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল আজিজের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সওজের ওয়েবসাইট নাম্বারে যোগাযোগের জন্য চেষ্টা করা হলে নাম্বারটি আর ব্যবহার হচ্ছে না। অথচ কিছুদিন আগে এই নাম্বারটি সচল ছিল। পরবর্তীতে তার বক্তব্যের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ সওজের অফিসে গেলে সেখানেও তাকে পাওয়া যায়নি।
নওগাঁ জেলা দূর্নীতি দমন অফিসের উপপরিচালক মাহফুজ ইকবাল বলেন, সরকারি অফিসের কোন কর্মচারী যদি ঘুষ দূর্নীতি ও অনিয়ম করে নামে বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জন করে থাকে তাহলে অবশ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :