সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাহপরীর দ্বীপের ১৫১ কোটির বেড়িবাঁধ বিলীনের পথে

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২৫, ০৫:২০ পিএম

শাহপরীর দ্বীপের ১৫১ কোটির বেড়িবাঁধ বিলীনের পথে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জুন মাসে প্রায় ১৫১ কোটি টাকা খরচ করে টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা হয়।জোয়ারের ধাক্কায় বেড়িবাঁধের অন্তত ১৫টি স্থানে সিসি ব্লক ধসে পড়তে শুরু করেছে। বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় প্রায় ৪০ হাজার মানুষের মধ্যে। স্থানীয়দের ভয়, সিসি ব্লকের নিচে মাটির বাঁধ। জোয়ারের ধাক্কায় মাটির বাঁধ ভেঙে গেলে পুরো শাহপরীর দ্বীপ ঝুঁকিতে পড়বে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহপরীর দ্বীপ তিন রাস্তার মাথার এলজিইডির সংযোগ সড়ক দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে বেড়িবাঁধের অবস্থান। বাঁধের পশ্চিম দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকার ১৫টি জায়গায় বেড়িবাঁধের সিসি ব্লক ধসে পড়ছে। বেড়িবাঁধের ঢালুতে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি এবং নিচের একাধিক অংশের আরও ২০টির বেশি সিসি ব্লক সরে গেছে।

জোয়ারের ধাক্কায় বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাড়া থেকে দক্ষিণ পাড়া পর্যন্ত আরও এক কিলোমিটার অংশে একাধিক জায়গায় (নিচে স্থাপিত) সিসি ব্লক ধসে পড়েছে। ধসে পড়া অংশের ফাঁকে ফাঁকে বালুর জিও-ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বলছে,পূর্ণিমার জোয়ার ও বর্ষা মৌসুমে পানির ধাক্কার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আবার নতুন করে সিসি ব্লক স্থাপন করার জন্য বিশেষ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসি ব্লক নির্মাণ ও বাঁধের ব্লকগুলো প্রতিস্থাপন করার কাজ শুরু করবে।

পশ্চিম পাড়া এলাকার এনায়েত উল্লাহ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এ কেমন ব্লক! সামান্য জোয়ারের পানির ধাক্কায় ভেঙে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাস হলে অবস্থা কী হবে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। আবারও কি তাহলে শাহপরীর দ্বীপের ৪০ হাজার মানুষের কপালে দুঃখ ঘনিয়ে আসছে?

টেকনাফ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুয়ায়ী, ২০১২ সালের ২২ জুলাই জোয়ারের তোড়ে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার বেড়িবাঁধের তিন কিলোমিটার সাগরে বিলীন হয়। ভেঙে যায় টেকনাফ-শাহ পরীর দ্বীপ সড়কটি। তখন কয়েকশ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছিল।

২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট ২ দশমিক ৬৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারে প্রথমে ১০৬ কোটির টাকা বরাদ্দ হয়। প্রকল্পে দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হয় অতিরিক্ত আরও ৪০ কোটি এবং তৃতীয় দফায় নকশার ত্রুটির জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয় আরও পাঁচ কোটি টাকা।

পাউবোর তত্বাবধানে বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারি। ২০২০ অর্থবছরের জুন মাসে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তিন দফা সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে বাঁধটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়।

শাহপরীর দ্বীপের মাঝের পাড়ার বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বলেন, কয়েক বছরে বেড়িবাঁধ ভাঙনের ফলে কয়েক হাজার মানুষ বাপ-দাদার ভিটি-জমি ছেড়ে টেকনাফসহ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছেন। প্রতিবারই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতির কারণে বাঁধে স্থাপিত সিসি ব্লক ধসে পড়েছে। 

কোটি কোটি টাকা ব্যয় করার পরও স্থানীয় বাসিন্দারা শান্তিতে বসবাস করতে পারছেন না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পকেট ভারি হলেও সর্বনাশ হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তারা হারাচ্ছেন বাড়িঘর ও জমিজমা।

দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা আজম উল্লাহ বলেন, বাঁধ নির্মাণ করে কোটি কোটি টাকা জলে ফেলা হচ্ছে। বছর ঘুরে আসতেই ব্লকগুলো ধসে পড়ছে। বড় ধরনের ক্ষতির আগেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন,গত কয়েক বছরে এখানকার অনেক মানুষ জমিজমা ও বসতঘর হারিয়েছেন। সাগরে বিলীন হয়ে গেছে দক্ষিণপাড়া ও পশ্চিমপাড়া। এরপর ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হলে এলাকার শত শত লোকজন আশার আলো দেখতে শুরু করে। কিন্তু সিসি ব্লক ধসের খবরে আবারও স্থানীয়রা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

শাহ্পরীর দ্বীপ রক্ষা ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি জাহেদ হোসেন বলছেন, “মৎস্য আহরণের অন্যতম স্থান শাহপরীর দ্বীপ এখন আতঙ্কগ্রস্ত একটি জনপদ। গত কয়েক বছরে জলোচ্ছ্বাসে শাহ পরীর দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার একরের চিংড়ি ঘের ও ফসলি জমি সাগরগর্ভে তলিয়ে গেছে। বিলীন হয়েছে মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অন্তত চার হাজার ঘরবাড়ি।

“দুই বছর আগে নিমিত বেড়িবাঁধটির সিসি ব্লক আবারও ধসে পড়ায় শাহপরীর দ্বীপের লোকজনকে ঝুঁকি ও আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। বেড়িবাঁধ রক্ষা করতে হলে আরও বেশি সিসি ও ডাম্পিং ব্লক দেওয়া দরকার বলে মনে করেন জাহেদ।

পাউবোর টেকনাফের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, “নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এবং পাউবোর নিয়মিত তদারকিতে বেড়িবাঁধটি কাজ শেষ হয়েছিল। তবে বর্তমানে জোয়ারের পানিতে বাঁধের সিসি ব্লকগুলো সরে যাচ্ছে।

বিভিন্ন সময়ে ব্লক ধসে পড়ায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ মিটারের নতুন ব্লক বসানোর জন্য একটি প্রতিষ্ঠান কাজ বরাদ্দ পেয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ব্লক নির্মাণ ও স্থাপনের কাজ শুরু করবে বলে পাউবোর এ প্রকৌশলী জানান।

পাউবোর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্র জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে গেছে। শাহ পরীর দ্বীপে নির্মিত বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে বেজা বড় বড় পাইপ দিয়ে নাফ নদী থেকে বালু উত্তোলনের সময় বেড়িবাঁধের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন অংশে ব্লক সরে যাচ্ছে। বাঁধটি নির্মাণ করার সময় চরটা অনেক দূরে ছিল। সাগরের অব্যাহত ভাঙনে বর্তমানে বাঁধের কাছে চলে আসায় বড় ঢেউগুলো বাঁধের ওপর ব্লকে আঁছড়ে পড়ছে। তাই ব্লক ধসে পড়ছে। এজন্য নতুন করে একটি প্রকল্প বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত কাজ শুরু করবে।

সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, কক্সবাজার জেলায় শাহ্পরীর দ্বীপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন রোধ করতে না পারলে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের জীবন হুমকিতে পড়বে। ধ্বসে পড়া স্থান চিহ্নিত করে টেকসই পুননির্মাণ খুবই জরুরি।

আরবি/জেডআর

Link copied!