ময়মনসিংহের নান্দাইলে প্রেমে রাজি না হওয়ায় জোরপূর্বক তুলে নিয়ে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ধর্ষণ ও নির্যাতনে অসুস্থ মাদ্রাসা ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন নান্দাইল মডেল থানার ওসি মো. ফরিদ আহমেদ।
জানা গেছে, একই উপজেলার বাকচান্দা আব্দুস সামাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র কচুরী গ্রামের মো. হানিফ মিয়ার ছেলে হোসাইন (১৯) অষ্টম শ্রেণির সেই মাদ্রাসা ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মেয়ে সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত জুন মাসের এক তারিখে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘ তিন মাসেরও বেশি সময় অজ্ঞাত স্থানে রেখে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে। এরপর গত ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ির সামনে সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়।
খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন সেই মাদ্রাসা ছাত্রীকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখান থেকে ময়মনসিংহ ও পরে ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়।
মেয়েটির বাবা বলেন, আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তার মেয়েকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চোখের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলেন চিকিৎসকরা।
১৫ দিন চিকিৎসা শেষে মেয়ের ডান চোখ বাঁচাতে কর্ণিয়া তুলে ফেলা হয়। সেই কর্ণিয়া স্বজনরা ফ্রিজের মধ্যে রেখে দেন পরে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতিস্থাপনের জন্য। এ অবস্থায় তারা তাদের মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসেন। সোমবার দুপুরে মেয়েটি মারা যায়।
ছাত্রীটির বাবা বলেন, “আমার মেয়েটিকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই। হোসাইনকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।”
নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ আহম্মেদ বলেন, এই ঘটনাটি নিয়ে আদালতে মামলা হলে পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পায়। তারাই তদন্ত করছিল। এখানে আমাদের অন্য কিছু করার ছিল না। তবে এখন ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশমতো নতুনভাবে আইনি প্রক্রিয়া করা হবে।
অন্যদিকে, আদালতে বিচারের জন্য আবেদন করলে আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ময়মনসিংহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন পরিদর্শক মোসলেহ উদ্দিন। গত কয়েকদিন ধরেই তিনি বলছিলেন, সিআর মামলায় তার প্রতিবেদন ছাড়া কিছুই করার নাই। মৃত্যুর পর ফের জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি এখন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ পিবিআই পুলিশ সুপার মো. রকিবুল আক্তার জানান, এখন আমরা আমাদের মতো করে আইনি প্রক্রিয়া করবো। তারপরও নিহতের পরিবার যদি থানায় হত্যা মামলা করেন, সেটি করতে পারেন।
আপনার মতামত লিখুন :