টাঙ্গাইলে তিনদিন ব্যাপী লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসব শুরু হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি বুধবার বেলা ১১টায় শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে কালচারাল রিফরমেশন ফোরাম, টাঙ্গাইল এর আয়োজনে তিন দিন ব্যাপী লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসব ২০২৫ এর শুভ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল রানা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসব কমিটির আহবায়ক আবুল কালাম মোস্তফা লাবু। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব গোলাম আম্বিয়া নুরী, জেলা বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হামিদুল হক মোহন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে দর্শকের উপস্থিতিতে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ লাঠিখেলা, ও মেয়েদের হাডুডু খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ পিঠা মেলায় ৪২ টি স্টলে স্থান পেয়েছে দুধের পিঠা, ভাপা, নকশি, চিতই, পাঠিসাপটা, জামাই বরণ পিঠা, ডাল ও তালের পিঠা সহ বিভিন্ন রকমের পিঠার সমারাহ।
মেলায় দর্শনার্থীরা জানায়, কুয়াশার সকালে কিংবা সন্ধ্যায় হিমেল বাতাসে মুখরোচক পিঠার স্বাদ নেওয়া ভোজন বিলাসী বাঙালির ঐতিহ্যের অংশ।
চলচ্চিত্র পরিচালক ও মেলায় অংশগ্রহণকারী বাইস্কোপ পিঠাঘরের স্বত্বাধিকারী রিয়াজুল রিজু জানান, নবীন ও প্রবীণ এর সমন্বয় এই পিঠার পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে এজন্য আমি আনন্দিত। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে দেশীয় পিঠার পরিচয় করিয়ে দিতে আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানান তিনি। প্রতি বছর যেন এ রকম লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয় এমনটা প্রত্যাশা তার।
মেলায় ঘুরতে আসা টাঙ্গাইল সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক প্রকৌশলী জাহিদ রানা জানান, দীর্ঘদিন পর টাঙ্গাইলে একটি ব্যতিক্রমধর্মী লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসবের আয়োজনে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমি প্রতিটি পিঠার স্টল ঘুরে দেখেছি। স্টলে বিভিন্ন রকমের পিঠার ডালি সাজিয়ে রেখেছে দোকানিরা। খুব ভালো লাগলো। নতুন নতুন অনেক পিঠার সাথে পরিচিত হলাম। সেগুলোর সাদ নিলাম। পিঠাগুলো খুব মজার ছিল।
লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসব কমিটির সদস্য সচিব অনীক রহমান বুলবুল জানান, ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসবে থাকবে, লাঠি খেলা, ছেলেদের ও মেয়েদের হাডুডু খেলা, সং যাত্রা, যাদু প্রদর্শন, যাত্রাপালা,পুথি পাঠ, লোকজ গান, গোল্লাছুট, ওপেন টু বাইস্কোপ, বাইস্কোপ,কুতকুত, খেলা সহ, হামদ, নাথে রাসুল, কীর্তন, শ্যামা সংগীত সহ দেশোজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই পিঠা উৎসবের মূল আকর্ষণ হল মেলায় ঢেঁকিতে প্রকাশ্যে চিড়াকোটা ও মুড়ি ভাজা হবে। পিঠা কিভাবে তৈরি হয় সেটা দর্শক ও শিশুদের দেখানো হবে।
লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসব কমিটির আহবায়ক আবুল কালাম মোস্তফা লাবু জানান, দীর্ঘ সময় ধরে এই বাংলাদেশে লোকজ সংস্কৃতি বিলুপ্তি প্রায়। যান্ত্রিক যুগে মোবাইলের কারণে শিশুরা লোকজ ও সাংস্কৃতিক থেকে একেবারে দূরে সরে গেছে। লোকজ সংস্কৃতি কি, শিশুরা তা জানে না। সম্প্রতি অভিভাবকের কাছে জানতে পারলাম, শিশু তার বাবাকে প্রশ্ন করেছে মুড়ি কোন গাছে হয়। মুড়ি যে গাছে ধরে হয় না,শিশুর এমন প্রশ্ন দোষের না। কারণ শিশুরা মাঠে-ঘাটে খেলাধুলার বাস্তবতা থেকে অনেকটাই দূরে। সেই অনুভব থেকে আমরা এ রকম লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসবের আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ লোকজ ও সাংস্কৃতি আগত ও বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
তিনি আরো জানান, মেলায় বাঙালি কৃষ্টি ও লোকজ ঐতিহ্যের স্মারক বাহারি পিঠা প্রদর্শন, ক্রয়, বিক্রয় ও ভোজনৎসবের পাশাপাশি উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আপনার মতামত লিখুন :