বান্দরবানে আইন অমান্য করে নির্বিচারে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। প্রশাসনের নাকের ডগায় পাহাড় কাটার মহোৎসব চললেও নেই কোন ব্যবস্থা। এক্সেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে রাত দিন। ইটভাটা ও ভিটা ভরাটে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কাটার নামে ধ্বংস করা হচ্ছে পাহাড়। পরিবেশ অধিদপ্তর দেখেও না দেখার ভান ধরে থাকার অভিযোগ স্থানীয়দের। পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পাহাড় খেকো সিন্ডিকেট দিন রাতে পাহাড় কাটছে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র।
বিভিন্ন এলাকা ও উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, জেলা শহরের বনরূপা, ছিদ্দিকনগর, রূপনগর, ক্যাচিংঘাটা, নতুন পাড়া, বালাঘাটা, কালাঘাটা, লেমুঝিড়ি, সুয়ালক, টংকাবতী,থানচিতে সদর, বলিবাজার, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষছড়ি, কাগজিখোলা ফাইতং, আজিজ নগর, ফাসিয়াখালি, লামা সদর, আলী কদমে আবাসিক, চৈক্ষ্যং, নয়াপাড়া, পানবাজারেরসহ জেলা ও বিভিন্ন জায়গায় চলছে পাহাড় কাটা। জেলা শহর ও উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখে উচু উচু পাহাড় কাটা হচ্ছে । দেখে বুঝার উপায় নেই, কারো বসত ঘর বা নাকি পাহাড়। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে এটি করা হলেও, পাহাড় কাটার বিরষটি জানে না এমন কোন দপ্তর নেই। জন্য এভাবে টিনের বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে পাহাড়টি। গভীর রাতের ভেকু মেশিন (এক্সেভেটর) দিয়ে কাটা হয় সুবিশাল পাহাড় ও ফসলি জমি। অনেক গুলো ডাম্পার ট্রাকে করে। ভরাট কাজ ছাড়াও মাটি চলে যায় ইটভাটায়। প্রতি গাড়ী মাটি বিক্রি করে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায়।
এদিকে লামা, আলীকদম, থানচি, নাইক্ষছড়ি উপজেলায় পাহাড় কেটে মাটি নিচ্ছে ইটভাটায়। রাত হলেই ট্রাক ও ভেকুর শব্দে শহরে পরিণত হয় নিরব এলাকাগুলো। রাস্তা সংস্কারের নামে অনুমতি ছাড়াই পাহাড় কেটে বিলীন করা হচ্ছে। প্রশাসনকে জানালেও পাহাড় কাটা বন্ধে নেওয়া হয় না কোন পদক্ষেপ। যার কারণে দিন দিন বেপোয়ারা হচ্ছে পাহাড় খেকোরা অভিযোগ স্থানীয়দের।
জেলা শহরের বনরূপা পাড়ার বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পাড়ার বিভিন্ন জায়গায় উচু উচু পাহাড় কাটছে একটি চক্র। তাদেরকে পাহাড় না কাটার জন্য বাঁধা দিলেও আমাদের কথা শুনে না। হুমকির মুখোমুখি হতে হয় প্রতিনিয়ত। রাতের অন্ধকারে ভেকু দিয়ে পাহাড় কেটে সমতল শত শত একর একর জায়গা। চলাচলের রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে পাহাড় কাটা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এই এলাকায় পাহাড় বলতে কিছুই থাকবে না,সব সমতল হয়ে যাবে। তাই আমরা চাই অবৈধভাবে পাহাড় কাটা দ্রুত বন্ধ করুক প্রশাসন।
লামা ফাইতংয়ের বাসিন্দা বশিরুল আলম বলেন, এক সময় ফাইতংয়ে শত শত পাহাড় ছিল। কিন্তু এখন অধিকাংশ নেই। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার পর ইটভাটা চলছে। আর ইট ভাটার মাটির জোগান হিসেবে পাহাড় কাটা হচ্ছে নির্বিচারে।
বিষয়টি স্বীকার করে ভেকুর মালিক টিটু বড়ুয়া বলেন, ছোট এস্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা কন্ট্রাক্ট নিয়েছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি।
মাটি কাটায় জড়িত বদি আলম ও ইলিয়াস বলেন, পাহাড়ের মালিক ঘর করবে তাই পাহাড় কেটে সমতল করছে। মাটি কেন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জমির মালিকের টাকা দরকার। শত শত পাহাড় কাটা হচ্ছে প্রশাসন না চাইলে পাহাড় কাটা সম্ভব? পাহাড়ের মাটি তো কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
এ বিষয়ে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, পাহাড় কাটছে অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে করেছি। আমাদের লোকবল সংকট। পাহাড় কাটে গভীর রাতে। গভীরবরাতে ঘটনাস্থলে যাওয়া সম্ভব না। পরবর্তীতে গেলে কাউকে পাওয়া যায় না। অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযান চলছে নিয়মিত। মামলার পাশাপাশি জরিমানাও করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :