ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

সরিষার লক্ষ্যমাত্রায় ধস, বিপর্যয়ের শঙ্কা নেই

নজরুল ইসলাম দয়া, বগুড়া

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৭:২৫ পিএম

সরিষার লক্ষ্যমাত্রায় ধস, বিপর্যয়ের শঙ্কা নেই

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চলতি রবি মৌসুমে বগুড়ায় সরিষা চাষের জমি কমেছে। কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদনে বিমুখ চাষিরা। ভোজ্যতেল হিসেবে জেলায় সরিষা চাষের চাহিদা থাকে। তবে এ বছর সবজির আবাদ বেড়েছে। এ অবস্থায় সরিষা উৎপাদনে খুব একটা প্রভাব পড়বে না, বলছে কৃষি বিভাগ। বৃষ্টিপাত ও বন্যায় চলতি বছর আমন আবাদে নির্ধারিত সময় জমি প্রস্তুত করতে পারেননি কৃষকেরা। 

চলতি রবি মৌসুমে বগুড়ায় ৪৭ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। তবে আবাদ হয়েছে ৩৭ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে। প্রায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে এবার সরিষার আবাদ হয়নি। গত বছর জেলার ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে তেলবীজ জাতীয় এই ফসলের আবাদ হয়েছিল। কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমন আবাদে ধান কাটতে দেরি হয়েছে। কিছু জমিতে সবজি চাষের কারণে সরিষার জমি কমেছে। এখন পর্যন্ত ছত্রাক বা রোগবালাই না থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন। 

বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া, কাহালু, আদমদীঘি, শেরপুর, সোনাতলা ও গাবতলী উপজেলায় সরিষার আবাদ বেশি হয়। গত বছর সরিষা উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৭৫ হাজার টন। চলতি মৌসুমে ফলন ৬০ হাজার টন উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে নন্দীগ্রাম উপজেলার কড়ইহাট, রণবাঘা, কুন্দারহাট, পন্ডিতপুকুর, নামুইটসহ বিভিন্ন মাঠে গিয়ে চোখ মেললেই মন জুড়িয়ে যায়। আবাদি মাঠগুলো সরিষা ফুলের হলুদ রঙে সেজেছে। মৌমাছি, প্রজাপতির অবিরাম খেলা গ্রামীণ জনপদকে আরো মুগ্ধ করে তুলেছে। চাষিদের পদচারণায় প্রকৃতি হলুদ গালিচায় সেজেছে। নন্দীগ্রামের কুমিড়া পন্ডিতপুকুর এলাকার সাকিব হোসেন চার বিঘা জমিতে আলু উৎপাদনের পর পাঁচ বিঘা জমিতে করছেন সরিষা চাষ। শশিনগরের দেলোয়ার হোসেন দুই বিঘায় আলুর পর তিন বিঘা জমিতে সরিষা এবং মাধবকুড়ির জালু মিয়া তিন বিঘা জমির আলু তুলে ৬ বিঘা জমিতে সরিষা বুনেছেন।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, সরিষা চাষে জমির উর্বরতা বাড়ে। বীজ বপন থেকে ৭০-৭৫ দিনে তেমন সেচ দিতে হয় না। মাটির নিচে সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার দিলেই চলে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে খরচ কম। এতে চাষিরাও লাভের মুখ দেখেন।

নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চাষিরা ৫ হাজার ৪৬৬ হেক্টর জমিতে আবাদ করছেন। এ বছর সরিষা চাষের জমি কমেছে। গত মৌসুমে ৭ হাজার হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষাবাদ ও রেকর্ড পরিমাণ সরিষা উৎপাদন হয়েছিল। সোনাতলা উপজেলায় আমন ধান কাটার পর কৃষকেরা ইরি-বোরো মৌসুমের আগেই সরিষা চাষ করেছেন।

কাহালু উপজেলার বীরপ্রতাপ গ্রামের চাষি আব্দুল বাছেদ ও নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুর গুন্দইল গ্রামের চাষি বেলাল হোসেন টুকু জানান, চলতি মৌসুমে সরিষা চাষ কমেছে। অনেকে সবজি চাষ করছেন। গত বছর বিঘা প্রতি জমিতে গড়ে ৭-৮ মণ সরিষা ফলন হয়েছিল। চলতি মৌসুমের ২৫ অক্টোবর থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে বীজ বপন করেছেন। সরিষার ফুল ফুটেছে। এখনো রোগবালাই নেই, চাষিরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন।

নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ গাজীউল হক জানান, এ বছর কৃষকেরা সরিষায় বেশি লাভবান হবেন। চাষের জমি কমলেও উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে সরিষা চাষের জমি কমেছে ৯ হাজার ৫৪৮ হেক্টর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার উচ্চ ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ফলন ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৬ টন। ৬০ হাজার টন সরিষা উৎপাদন হতে পারে।

আরবি/জেডআর

Link copied!