ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

অতিথি পাখিতে মুখর গোপীনাথপুর বিল

সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৫, ১০:৩২ এএম

অতিথি পাখিতে মুখর গোপীনাথপুর বিল

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

শীতের পাখায় ভর দিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও গোপীনাথপুর বিলে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাখিপ্রেমীরা দল বেঁধে আসছেন পাখি দেখতে মানিকগঞ্জের গোপীনাথপুর বিলে। বিলটির অবস্থান মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলায়। 

শীতকাল এলেই এই গোপীনাথপুর বিল অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে। খুব বড় না হলেও বিলটি পাখির কারণে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। পাখির বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি, উড়ে চলা, নীরবে বসে থাকা- মানুষকে আকৃষ্ট করে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন একনজর পাখি দেখার জন্য এখানে আসেন। 

শুধু গোপীনাথপুর বিলেই নয়, হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নদী-খাল-বিলসহ পদ্মা নদীতে জেগে ওঠা চর- সবখানেই বিচরণ অতিথি পাখির। এসব পাখির কিচির-মিচিরে মুখরিত পরিবেশ। বাহারি রঙের এসব অতিথি পাখির খুনসুটি আর ছোটাছুটি যে কারো মনকে আনন্দিত করে তোলে। 

মূলত উত্তর মেরুর দেশগুলোর প্রকৃতি যখন পাখির জন্য প্রতিকূল হয়ে ওঠে তখন অপেক্ষাকৃত অনুকূল পরিবেশ পেতে এসব অঞ্চলের পাখি অতিথি হয়ে চলে আসে আমাদের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাওর, বিল, জলাশয়, লেক ও চরাঞ্চলে। পুরো শীত মৌসুমজুড়ে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে এসব অঞ্চল। পাখিগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই চোখ জুড়ানো তাদের খুনসুটি। 

সরেজমিনে গোপীনাথপুর বিলে গিয়ে অতীতের মতো পানির দেখা না মিললেও এ বিল পরিণত হয়েছে অতিথি পাখিদের মিলনমেলায়। ভেসে বেড়াচ্ছে সরাল ও বালিহাঁসের দল। মাঝে মধ্যে দেখা যায় ছোট পাখির আর রোদেলা দুপুরে স্বচ্ছ পানির ঝিকিমিকি, সে এক অন্যরকম অনুভূতি। এর সঙ্গে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পাখির কিচিরমিচির বিলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে আরও এক ধাপ।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর শীত শুরুতেই এসব অতিথি পাখির দল এ বিলে আসে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি এসব পাখি বিলে থাকলেও রাতে আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন গাছে চলে যায়। ভোর হলেই আবার ফিরে আসে বিলে। 

সারাদিন এসব পাখি জলরাশির উপরে থাকা কচুরিপানার ওপর বসে গোসল, খেলাধুলা ও রোদে শরীর শুকাতে দেখা যায়। কখনো কখনো আকাশে দলবেঁধে উড়তে দেখা যায়। এ এক অন্যরকম অনুভূতি, যা দেখতে বিভিন্ন এলাকার লোকজন এসে থাকেন।

এলাকায় পাখি চেনেন বা জানেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিলের জলভাগে যেসব পাখি রয়েছে এদের অধিকাংশই সরাল ও বালিহাঁস। এ ছাড়াও পিয়াংহাঁস, রাজসরালি, গ্যাডওয়াল, লেঙজা হাঁস, পাতিকূট, দেশি জাতের শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নিহাঁসসহ বিভিন্ন প্রজাতির নাম না-জানা অতিথি পাখি, বিল এলাকা মুখরিত করে তুলছে। এ বছর তিব্বতীয় মানিকচক, সাইবেরিয়ান ফিদ্দাসহ অনেক নতুন অতিথি পাখি চোখে পড়েছে। এসব পাখির দলবদ্ধ বিচরণ মুগ্ধ করে সবাইকে।

স্থানীয় গোপীনাথপুর ডেগিরচর গ্রামের মো. সাব্বির নামের এক কিশোর বলেন, গোপীনাথপুর বিলে নানা রঙের হাজার হাজার পাখি এসেছে। অনেক সুন্দর দেখতে। ওদের ডাকও খুব সুন্দর। 

সারাদিন পাখিরা বিলে মাছ ধরে খায়। রাতে আশপাশের কাঠবাগান ও গাছে থাকে। বিলে আসলে ওদের দেখতে পাই, ডাক শুনি; খুব ভালো লাগে।

স্থানীয় সাংবাদিক সায়েম খান বলেন, মূলত নভেম্বর মাসের শেষের দিকে অতিথি পাখিরা এখানে আসতে থাকে। আবার মার্চের শেষ দিকে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়।

এ বিষয়ে বিলে ঘুরতে আসা মো. রিফাত নামের এক দর্শনার্থী বলেন, বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই পাখিগুলো আরও বৃদ্ধি করেছে। পাখি হত্যা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে আইন আছে। পাখি হত্যার মতো বেআইনি কাজ যারা করবে তাদের ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে।

মানিকগঞ্জ পাখি লালন করি (পালক) কমিটির নির্বাহী সদস্য গোলাম ছারোয়ার ছানু বলেন, অতিথি পাখি রক্ষা বা সংরক্ষণ করার জন্য সরকারিভাবে যে আইন করা হয়েছে প্রশাসন সেদিকে তেমন খেয়াল করে না এবং নজর দেয় না। 

আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। অতিথি পাখিদের বিচরণ নিরাপদ করার জন্য পাখি শিকার ও বিক্রি বন্ধ করতে হবে। সেইসঙ্গে বিক্রয়কারীদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। সাধারণ মানুষের একটু সচেতনতাই হতে পারে অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য।

হরিরামপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মুমিন খান বলেন, পাখি প্রকৃতির অলংকার। অতিথি পাখি নিধন আইনত অপরাধ। এদের ধ্বংস করা মানে পরিবেশকে ধ্বংস করা। 

অতিথি পাখিরা মুক্ত আকাশে, খালে, বিলে, হাওর-বাঁওড়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে গিয়ে যাতে শিকারির দ্বারা আক্রান্ত না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় তৎপর রয়েছে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!