ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

স্বাস্থ্য সেবার নামে বিলের টাকা আত্মসাৎ

মনিরুজ্জামান মনির, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৫, ১২:২৪ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

টাঙ্গাইল পৌরসভার পক্ষ থেকে পৌর-নাগরিকদের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান টাকা বরাদ্দ থাকলেও সরকারি টিকাদান কর্মসূচি ছাড়া অন্য কোনো প্রকার প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেনা পৌরসভার বাসিন্দারা।

টাঙ্গাইল পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় নাগরিকদের কাছ থেকে জানা যায় পৌরসভার প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার বিষয়ে কেউ জানেই না।

করোনা কালীন সময়ে পৌর এলাকার করোনা পজিটিভ ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য কয়েক ধাপে ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্রয় করার বিল উত্তোলন করা হয়েছে। রেজিস্ট্রারে ১৭টি উল্লেখ থাকলেও সরেজমিনে সিলিন্ডার রয়েছে ১টি। বিভিন্ন সময়ে পৌর নাগরিকদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য ঔষধ ক্রয় বাবদ বড় অংকের টাকার বিল উত্তলোনও করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল পৌরসভার বিশ্বাস বেতকা এলাকার মো. ওবায়দুল্লার মেয়ে আবিদা রহমান কয়েক বছর ধরে  শ্বাসকষ্টরোগে ভুগছে। ঠান্ডায় তার শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তখনই তাকে অক্সিজেন নিতে হয়। অক্সিজেন নেয়ার জন্য তাকে হাসপাতালেও যেতে হয়। পৌরসভার পক্ষ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয় এই বিষয়টি তিনি কখনো শুনেননি বলে জানান। তিনি আরও জানান, শ্বাসকষ্টরোগের জন্য মাঝেমধ্যেই অক্সিজেন বা নেবুলাইজার নিতে হয়। একদিন রাত ২টার দিকে তীব্র শ্বাসকষ্টের কারণে হাসপাতালে নিয়েছিল পরিবার থেকে।পৌরসভার কোন নাগরিকই হয়ত জানেন না অক্সিজেন সিলিন্ডার সেবার বিষয়টি। যদি এমন সুযোগ থাকার পরেও পৌরসভার পক্ষ থেকে সেবা না দিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়ে  থাকে তাহলে তো তারা বিলের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

করোনাকালীন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা পেতে হিমশিম খেতে হয়েছিল রোগীদের। ওই সংকট মূহুর্তে অনেক সরকারি, সায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় এগিয়ে এসেছিল। এসময় শ্বাসকষ্ট রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া দুষ্কর ছিল। তখন থেকে টাঙ্গাইল পৌরসভা অক্সিজেন সিলিন্ডার যুক্ত স্বাস্থ্যসামগ্রীর কেনা শুরু করে। এরপর প্রতি অর্থবছরে চতুর্থ কিস্তি পর্যন্ত স্বাস্থ্য সামগ্রী কিনেছিল পৌরসভার স্বাস্থ্য শাখা। যা পৌরসভার সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা সুভাশীষ চন্দ্র দাসের অধীনে স্বাস্থ্য সামগ্রী কেনা হয়েছে।

অনুসন্ধানে এসব ক্রয় সংক্রান্ত নথিপত্রে স্বাস্থ্য সামগ্রীর মধ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডারের বিল উত্তোলণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার টাকা।
করোনাকালীন সময়ে পৌরসভার নাগরিকদের জরুরীসেবা দেয়ার জন্য এসআর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয়েছিল। বাজারমূল্যের প্রায় দুইগুন বেশি দামে ক্রয় করা এসব অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই পৌরসভায়। একটি সিলিন্ডার ব্যতিত বাকি ১৬টি সিলিন্ডার কোথায় সেটার তথ্য দিতে পারেননি দায়িত্বরত সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা সুভাশীষ চন্দ্র দাস।

সরেজমিনে টাঙ্গাইল পৌরসভার স্বাস্থ্য শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিভিন্ন অর্থবছরে কেনা একটিমাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া বাকিগুলো নেই। পৌরসভার স্বাস্থ্য শাখার অন্যান্য কর্মীদের সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, ইপিআই কক্ষে একটি সিলিন্ডার পড়ে রয়েছে বহুদিন ধরে। সেটার কোন ব্যবহার হয়নি। কয়টা অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয়েছে বা কি কাজে সেটি ব্যবহার হবে সেই সম্পর্কে কোন ধারণা স্বাস্থ্যকর্মীদের দেয়া হয়নি।

সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা সুভাশীষ চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে পৌরসভার কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার দুইজন কর্মকর্তা বলেন, সাবেক পৌরসভার মেয়র এস,এম সিরাজুল হক আলমগীরের একক নির্দেশনায় ওষুধ বা স্বাস্থ্য সামগ্রী কেনার জন্য সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা সুভাশীষ চন্দ্র দাসকে স্বাস্থ্য শাখার দায়িত্ব দেয় মেয়র। এরপর থেকে সুভাশীষ সরাসরি কেনাকাটার বিষয়ে একক মেয়রের সাথে কথা বলে মালামাল ক্রয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শুধু অক্সিজেন সিলিন্ডারের টাকা আত্মসাত করেনি এর সাথে, অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সামগ্রী বাড়তি দামে কিনে সেই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা সুভাশীষ চন্দ্র দাস প্রথমে বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে পৌরসভায় যোগদান করেন। পরে পৌরসভার সাবেক মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন তিনি। এরপর তাকে ওই পদ থেকে সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়। এরসাথে স্বাস্থ্য শাখার দায়িত্ব দেন মেয়র। তখন থেকেই স্বাস্থ্য শাখার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সামগ্রী কেনাকাটায় অনিয়ম শুরু করেন তিনি।

তথ্যমতে, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসআর এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স ব্যবহার করে অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্রয় করেন সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা সুভাশীষ চন্দ্র দাস। এর বিনিময়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নামমাত্র টাকা দিতে হত লাইসেন্স ব্যবহারের জন্য। 

ওই প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে তিনধাপে ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয়। যা প্রত্যেকটির দাম ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার টাকা। তবে ১৭টি সিলিন্ডারের জন্য বিল উত্তোলণ করা হয়েছিল ৩ লাখ ৭ হাজার টাকা।

প্রিমিয়াম ব্যাংকের মাধ্যমে কেনাকাটার চেক উত্তোলন করা হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসআর এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর সেলিম হোসেন আত্মগোপনে রয়েছেন। অপরিচিত কারোর ফোনও রিসিভ করছেন না তিনি। বক্তব্য নিতে তার ব্যবহৃত মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে কোন জবাব পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনাকালীন সময়ে টাঙ্গাইল পৌরসভায় জনগনের মাঝে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে তৃতীয় পর্যন্ত ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয়। বেসরকারি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসআর এন্টারপ্রাইজকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের আগষ্ট ও নভেম্বর এবং ২০২২ সালের মার্চ ও আগষ্ট মাসে সর্বমোট ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করে।

সরবরাহ করা অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম দাম যাচাই করতে টাঙ্গাইল শহরের ময়মনসিংহ রোডের একটি মেডিকেল সার্ভিসেস শোরুমে যাওয়া হয়। টাঙ্গাইল মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি ভালমানের একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম জানিয়েছে ৬ হাজার ৮০০ টাকা। এরসাথে বাড়তি সিলিন্ডার ক্যাপ ও ট্রলি যুক্ত করলে দাম গিয়ে দাড়ায় ৮ হাজার ৮০০ টাকা।

এছাড়া স্বাস্থ্য সামগ্রী বিলের সাথে ওয়ানটাইম মাক্স, হ্যান্ডস্যানিটাইজার, সাবান, থার্মাল স্ক্যানার, মশক নিধন ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, ফগার মেশিনের ডেসিস, স্প্রে মেশিন কেনা হয়েছে বাজার মূল্যের বেশি দামে। কেনা এসব পন্যের বাজার দরও যাচাই করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২১ আগষ্ট ২০২৩ সালে  এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা এবং ২৭ জুন ২০২৪ সালে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৯০০ টাকা কোন স্মারক না দেখিয়ে ডেঙ্গু মশক নিধনের প্রকল্পে ভুয়া বিল ভাউচারে টাকা উত্তোলন করা হয়। সর্বশেষ ওই অর্থ বছরের ১৬ জুন তৃতীয় কিস্তির ৩ লাখ ১৪ হাজার এবং একই মাসের চতুর্থ কিস্তির ৪ তারিখে ৩ লাখ ৬২ হাজার টাকার পৌরসভার নাগরিকদের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা সহায়তার বিল উত্তোলণ করা হয়।

টাঙ্গাইল পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় করোনাকালিন সময়ে অনেক ছোট-বড় সংগঠন গড়ে উঠেছিল। তারা শ্বাসসকষ্ট রোগীদের জন্য ব্যক্তিগত টাকায় কেনা অক্সিজেন সিলিন্ডার বিনামূল্যে সরবরাহ করতো। 

পৌরসভার বাজিতপুর এলাকার রাসেল, হৃদয় ও শামসুর রহমান মিলনসহ কয়েকজন বন্ধু দুইটা অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে করোনাকালিন সময় রোগীদের সেবা দিয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের বিষয়ে তারাও শুনেননি বলে জানান।
এদিকে পৌরসভায় স্বাস্থ্য সামগ্রী সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসআর এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানের দেয়া ঠিকানা টাঙ্গাইল সদর উপজেলার এনায়েতপুরে গিয়ে তাদের কোন অফিস বা কার্যালয় পাওয়া যায়নি।

টাঙ্গাইল পৌরসভার এনায়েতপুর, বৈল্ল্যা, সাবালিয়া, কাগমারা, বাজিতপুর, আদি টাঙ্গাইল, আকুর-টাকুরপাড়া, বিশ্বাস বেতকা, আশিকপুর, আদালতপাড়া, থানাপাড়া, কলেজপাড়া এলাকায় গিয়ে সেখানকার মানুষজনের সাথে কথা বলে জানা যায় পৌরসভার স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া বিষয়ে পৌরসভার পক্ষ থেকে কখনো জানানো হয়নি,  তারা কেউ এসব সেবার কথা জানেন না। তারা জানিয়েছেন, পৌরসভা থেকে করোনাকালিন জনপ্রতিনিধিরা এলাকাগুলোতে সার্জিক্যাল মাক্স বিতরণ করেছে শুধুমাত্র এর বাইরে কোন সেবা তারা পায়নি। এছাড়া ইপিআই কার্যক্রমের মধ্যে শিশুদের টিকাদান ছাড়া কিছুই জানেন না তারা।

টাঙ্গাইল পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সাথে কথা বললে তারা জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় এটা জানেন। তবে পৌরসভায় যে নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য সামগ্রী দেয়া হয় তারা জানেন না। প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে হতবাক হয়েছেন অনেক মানুষজন। জরুরীসেবার জন্য যে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয়েছে পৌর নাগরিকদের জন্য সেটাও জানেন না তারা। তবে কোন কোন এলাকায় করোনার সময় কিছু সাবান ও মাক্স পেয়েছিলেন তাও আবার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে।

পৌরসভার সাবালিয়া এলাকার দরিদ্র দিপালী রানী অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালান। রোগে আক্রান্ত হলেই তাকে যেতে হয় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। তিনিও জানেন না পৌরসভায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পাওয়ার বিষয়টি।

এনায়েতপুর এলাকার মুদি দোকানী ফরহাদ আলী বলেন, পৌরসভায় এসব সেবা রয়েছে সেটা আমিসহ এলাকার কেউ জানেন না। কোনদিন এই সেবা কেউ পেয়েছে বলে জানা নেই। একই কথা জানালেন অটোরিকশা চালক মনির হোসেন।
এবিষয়ে এসআর এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী সেলিমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে  মোবাইলে এসএমএস দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘শ্বাস’ এর সমন্বয়কারী সাম্য রহমান বলেন, শ্বাসকষ্ট বা জরুরী রোগীদের জন্য পৌরসভায় অক্সিজেন সিলিন্ডার সেবা রয়েছে সেটা জানা ছিল না। এই প্রথম জানতে পারলাম।

করোনাকালীন সময়ে অনেক মানুষজনের অক্সিজেনের প্রয়োজন ছিল খুবই। করোনার সময়ে সংগঠন থেকে পৌরসভার বহু মানুষকে সেবা দিয়েছি বিনামূল্যে। এখনও এই সেবা চলমান রয়েছে। এখনও অনেক মানুষের প্রয়োজন পড়ে। আমরাই যেহেতু এই সেবার বিষয়টি জানিনা সেক্ষেত্রে অবশ্যই এটা দুর্নীতি হয়েছে। এতে তারা স্বাস্থ্যসেবার নামে টাকা আত্মসাৎ করছেন।

টাঙ্গাইল পৌরসভার মশক নিধন কর্মী কুরান আলী বলেন, পৌরসভায় কোন অক্সিজেন সিলিন্ডার দেখিনি কখনও। কেনা হয়ে থাকলে সেটার বিষয়টি সুভাশীষই বলতে পারবেন।

পৌরসভার যান্ত্রিক শাখার বৈদ্যুতিক হেলপার রোকন আলী বলেন, পৌরসভায় ২৫ বছর ধরে কাজ করছি। এই সময়ে কোন অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। এটা হাসপাতাল ছাড়া থাকে না। স্বাস্থ্য শাখায় শুধু টিকাদান ছাড়া কোন স্বাস্থ্যসেবা জিনিষপত্র পাওয়া যায় না। এছাড়া করোনাকালিন সময়ে সার্জিক্যাল মাক্স, মশার স্প্রে, সাবান কিনেছিল সে সময়। তা ছাড়া স্বাস্থ্যসেবার কোন জিনিষ নেই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা সুভাশীষ চন্দ্র দাস বলেন, বিভিন্ন সময়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার টাকা উত্তোলণ করা হয়েছিল ঠিকই। তবে একটি সিলিন্ডার ব্যতিত কোন সিলিন্ডার নেই পৌরসভায়। সিলিন্ডারের টাকায় ওষুধ কেনা হয়েছে।

অক্সিজেন সিলিন্ডারের টাকায় ওষুধ কেনা যায় কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা করা যায় না। করার নিয়মও নেই। সাবেক পৌরসভার মেয়রের নির্দেশনায় এমনটি হয়েছিল।
উত্তোলণ করা বিলে টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহওনেয়াজ পারভীনের স্বাক্ষর ও সীল থাকলেও তিনি এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। তবে তিনি বলেন, কেনাকাটার ফাইলে মেয়রের স্বাক্ষর থাকলে সেখানে আমাকেও স্বাক্ষর দিতে হয়। সে টাকায় কি কিনা হয়েছিল বা কি কি কেনা হবে এসব বিষয়ে জানিনা। সুভাশীষ সরাসরি মেয়রের সাথে কথা বলে ফাইল রেডি করে পাঠাতো। সেখানে মেয়র হিসাবরক্ষকের স্বাক্ষর থাকতো। ফলে সেটাতে অনেক সময় বাধ্য হয়ে স্বাক্ষর দিতে হয়েছে।

টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জেলার উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) মো. শিহাব রায়হান বলেন, ৫ আগষ্টের পর সরকার আমাকে পৌরসভায় প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে। পূর্বের কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়ে থাকলে সেটা আমার জানা নেই। আর স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে আমি জেনে বলতে পারবো। যদি সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা এমন অনিয়মের সাথে জড়িত থাকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


(টাঙ্গাইল পৌরসভায় অনিয়মের ১ম পর্ব)