পাহাড়ে জলপাই চাষে জনপ্রিয়তা বেড়েছে অর্থনীতিতে গতি আশার প্রত্যাশা জলপাই চাষ থেকে। জলপাই চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেকে। স্থানীয় ভাবে এবং দেশের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে জলপাই ফলের। টক জাতীয় ছোট ফল জলপাই দেখলেই জিভে জল চলে আসে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ভাষায় জলপাইয়ে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেলসহ ভেষজ উপাদান, খাদ্যআঁশ, আয়রন, কপার, ভিটামিন-ই, ফেনোলিক উপাদান, অলিক অ্যাসিড এবং বিভিন্ন প্রকারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এই ফল শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেই সাহায্য করে না, একইসঙ্গে ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। এতো সব উপকারী একটি ফল রাঙামাটিতে বাণিজ্যিক চাষাবাদে ছিল অবহেলিত। তবে চাষিরা ধীরে ধীরে এর গুরুত্ব বুঝে চাষ শুরু করছেন। ফলে পাহাড়ে বাড়ছে সম্ভাবনাময় জলপাই চাষ।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে জলপাই অতি পরিচিত মুখরোচক ফল। কাঁচা ও পাকা যে কোন অবস্থায় এ ফল খাওয়া যায়। তবে আচার, চাটনি, জ্যাম, জেলি ও তেল তৈরিতে বেশী ব্যবহার হয় এই ফল। চলতি মৌসুমে রাঙামাটিতে জলপাইয়ের বাম্পার ফলনে রপ্তানি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। দাম ভালো পাওয়ায় জলপাই চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। জলপাই চাষ গ্রামীন অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হওয়ার কারনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ জেলার জমি ও আবহাওয়া বেশ ভালো জলপাই চাষের জন্য। রাঙামাটি জেলায় প্রত্যেকটি বাড়িতে একটি-দুইটি করে জলপাই গাছ দেখা যায়। এর বিস্তার ঘটানো গেলে বাণিজ্য প্রসার করা সম্ভব।
সরেজমিনে গিয়ে লংগদু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে মৌসুমি ব্যবসায়িরা গাছ থেকে জলপাই সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাইকাররা বাড়ি বাড়ি ঘুরে জলপাই সংগ্রহ করে এক জায়গায় একত্রিত করে বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করছেন। রাঙামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু উপজেলাতে শীত মৌসুমে জলপাইয়ের বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটতে দেখা গেছে।
রাঙামাটির লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম বলেন, আমি শখ করে বাড়ির পাশের পাহাড়ি ঢালু জমিতে ২০টি জলপাই গাছ লাগিয়েছি। এই গাছ দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফল ধরেছে। জলপাই গাছে এতো ফল আসে,যা পাতা থেকে ফল বেশি। এই ফলের অনেক চাহিদা। ফলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয় না। বাড়িতে পাইকারী ব্যবসায়িরা এসে নিয়ে যান। এবছর দুই লক্ষ টাকার জলপাই বিক্রি করেছি।
একই ইউনিয়নের রবিউল ইসলাম রুবেল বলেন, আমি আমার বাড়িতে একটি জলপাই গাছ লাগিয়েছি। এছাড়াও পাহাড়ের ২একর ঢালু জমিতে ৫০টির মত জলপাই গাছের বাগান করেছি। শীতের শুরুতে এর ফল দেওয়া শুরু হয়। ফল ধরেছে পাতার চেয়েও বেশি। প্রাথমিক পর্যায়ে দাম ৫০-৬০ টাকা কেজি। উৎপাদনে খরচ কম,লাভ বেশি। পরিশ্রম ও করতে হয় না।ফলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ মন্দ নয়। অনেক লাভ চাষাবাদ জলপাই।
আরেক বাগান মালিক সরোয়ার হোসেন জানান, আমিও তিন একর জমিতে ১০৫টি জলপাই গাছ লাগিয়েছি ২ বছর আগে। প্রথম বছরেই বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম ফলনেই আমি প্রায় ৩লাখ টাকার জলপাই বিক্রি করেছি। আশা করি, গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতিবছর ফলনের পরিমানও আরো বাড়বে এবং অর্থের পরিমাণও বাড়বে। সকল চাষিকে জলপাই চাষে মনোযোগ দেওয়ার আহবান জানাই।
রাঙামাটিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, রাঙামাটি জেলায় ৫শ’হেক্টর জমিতে জলপাই গাছ রয়েছে। এবার ৬ হাজার ২শত মেট্টিক টন ফল উৎপাদন হয়েছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৫০০ কোটি টাকা। জলপাই ক্রমবর্ধমান চাহিদায় ভবিষ্যতে এই জেলার অর্থনীতিতে আরও ব্যাপক গতি বাড়াবে। জলপাই উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। জলপাই দিয়ে আচার, চাটনি, জ্যাম-জেলি প্রভৃতি তৈরি করা হয়। জলপাই গাছে তেমন কোনো পোকামাকড় ও রোগ বালাই আক্রমণ করে না। বাংলাদেশের মাটিতে যেকোনো স্থানে সহজে জন্মাতে পারে। তাই এ পুষ্টি সমৃদ্ধ ফলটি চাষ করে পরিবার ও দেশের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ফল বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে।
কেবল গ্রাম বা জেলা শহর নয়, ঢাকাসহ বড় শহরে জলপাই গাছ লাগানো যেতে পারে অতি সহজেই, যোগ করেন তিনি।
সূত্রে আরো জানা যায়, একটি গাছে কমপক্ষে দেড় থেকে ২ মণ জলপাই ধরে। বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এছাড়া ফল হিসেবেই নয়, এর তেলও খুব স্বাস্থ্যকর। জলপাই তেলে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ-সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। খাবারে জলপাইয়ের তেল ব্যবহারে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আপনার মতামত লিখুন :