ঠাকুরগাঁওয়ে একটি অত্যাধুনিক মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে গরু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে নিরাপদ গরুর মাংস। এই উদ্যোগ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্থানীয় যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকায় স্থাপিত এই প্লান্টে স্থানীয় প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে গরু সংগ্রহ করে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে জবাই করে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়।
আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ), ডেনমার্ক দূতাবাস (ড্যানিডা) এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর আর্থিক সহায়তায় ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) বাস্তবায়িত "রুরাল মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট (আরএমটিপি)-এর আওতায় এই প্লান্টটি স্থাপিত হয়েছে।
উদ্যোক্তা মাসুম বিল্লাহর নেতৃত্বে এটি একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণের পর এটি প্রতি কেজি ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। উদ্যোক্তা মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমাদের ‘ভিলেজ মিট’-এর লক্ষ্য হলো গ্রাহকদের কাছে নিরাপদ মাংস পৌঁছে দেওয়া। আমরা শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাংস প্রক্রিয়াজাত করছি এবং অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমেই মাংস বিক্রি করা হয়। এই উদ্যোগে ইএসডিও ও পিকেএসএফ-এর সহযোগিতা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডা. বাবুল চন্দ্র বলেন, এখানে কনট্রাক্ট খামারিদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়। গরুগুলো পর্যবেক্ষণের পর শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে হালাল উপায়ে জবাই করা হয় এবং প্যাকেটজাত করে বাজারে সরবরাহ করা হয়। এই মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্ট ঠাকুরগাঁও জেলায় খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর মাংস সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গ্রাহকের সন্তুষ্টি মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্ট থেকে মাংস কিনে সন্তুষ্ট গ্রাহকরা।
ঠাকুরগাঁওয়ের এক বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, আমরা আগে বাজারের মাংস নিয়ে সবসময় শঙ্কিত থাকতাম। কিন্তু এখান থেকে মাংস কিনে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে এটি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত।
নাহিদা সুলতানা নামে অপর একজন গ্রাহক জানান, এই প্লান্ট থেকে মাংস কেনার পর রান্না করতে সুবিধা হয়। কারণ এটি পরিষ্কার এবং তাজা। অনলাইনে অর্ডার দেওয়ার পর সময় মতো বাসায় ডেলিভারিও পেয়ে যাচ্ছি।
স্থানীয় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের রেস্তোরাঁর জন্য আমরা এখান থেকে নিয়মিত মাংস কিনি। এর মান খুব ভালো এবং আমাদের গ্রাহকরাও সন্তুষ্ট। এই প্লান্ট আমাদের ব্যবসার জন্য বড় সুবিধা এনে দিয়েছে।
গ্রাহকদের এমন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এই উদ্যোগকে আরও সফল করতে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মাংস সরবরাহ নিশ্চিত করতে এই প্লান্টের অবদান প্রশংসনীয়।
উল্লেখ্য, এই উদ্যোগটি ঠাকুরগাঁও জেলায় ২য়।এরপূর্বে ৯০ এর দশকে জেলার রানীশংকেল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রথমবারের মতো মাংস প্রক্রিয়াজাত করণ কারখানা স্থাপন করা হয়। সেখান থেকে দেশে ও বিদেশে এই মাংস সরবরাহ করা হতো। কিন্তু এই উদ্যোগ লাভের মুখ না দেখায় তা শেস পর্যন্ত মুথ থুবড়ে পড়ে।
আপনার মতামত লিখুন :