ঢাকা রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫

বৃদ্ধ মায়ের ভরণ-পোষণ দেয়না সন্তানরা

দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম

বৃদ্ধ মায়ের ভরণ-পোষণ দেয়না সন্তানরা

রাশিদা বেগম। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

একটি নয় পাঁচ পাঁচটি জীবন যিনি পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন আর তার নিজের জীবনের আলো নিভে যাওয়ার পথে। একমুঠো খাবারের জন্য যাকে দেখে তার দিকেই একটি থালা এগিয়ে দেয়। কাউকে ঘরে ঢুকতে দেখলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। জীর্ণশীর্ণ শরীর আর অবস হয়ে যাওয়া সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে উঠে বসার। ঘরে নেই কোন খাবার, নেই কোন ঔষধ। প্রতিবেশীদের দয়ায় ও দেখভালে কোন রকম বেঁচে আছে মৃত্যু পথযাত্রী রাশিদা বেগম (৬০)। পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কলবাড়ি বাজারের উত্তর দিকে রাস্তার পাশে অরক্ষিত দরজা, জানালা বিহীন ঘরে বসবাস করেন পাঁচ সন্তানের মা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত অসুস্থ রাশিদা বেগম। সৌদি প্রবাসী স্বামী ফারুক হাওলাদার বেশ কয়েক বছর পূর্বে পাঁচ সন্তানের জননী রাশিদা বেগমকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেছেন। অপরদিকে তিন ছেলে সবাই বিয়ে করে স্ত্রী সন্তানসহ ঢাকায় থাকে। দুই মেয়ে বিবাহিত স্বামীর সাথে থাকেন। পাঁচ ছেলে মেয়েরা কেউ অসুস্থ প্যারালাইসিসে আক্রান্ত বৃদ্ধ মায়ের ভরণ-পোষণ ও খোঁজ খবর নিচ্ছে না। তিন ছেলের প্রত্যেকেই মায়ের চিকিৎসার ভার ও ভরণ-পোষণ করতে পারবেনা বলে প্রতিবেশীদের জানিয়েছেন।

ফাতেমা বেগম নামের এক প্রতিবেশী জানান, দেড় বছর যাবৎ রাশিদা বেগম প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। ছেলেরা অসুস্থ মাকে খোলা ঘরে ফেলে রেখে ঢাকায় চলে গেছে। খাওন পড়ন তো দুরের কথা খোঁজ খবর পর্যন্ত নেয় না। আমরা বাড়ির আশে পাশের লোকজন যে যা পারি খাবার দেই। অসুস্থ রাশিদা বিছানা থেকে উঠতে পারেনা। পায়খানা প্রস্রাব করে বিছানায়। আমরা যে যখন পারি পরিস্কার করে দেই।

অপর এক প্রতিবেশী দলিল উদ্দিন হাওলাদার  বলেন, রাশিদা বেগম লোকজন দেখলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। ইশারায় নিজের কষ্টের কথা বলতে চায় কিন্তু কথা বুঝা যায় না। এ অবস্থায় ছেলেমেয়েরা কোন খোঁজ খবর পর্যন্ত নেয় না। অসুস্থ রাশিদা বেগম অযন্ত অবহেলায় ও খাবারের অভাবে ক্রমশই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এখন তার ছেলে মেয়েদের জরুরি  চিকিৎসা ও সেবাসহ কাছে থাকা দরকার।

মো. আরমিয়া হাওলাদার বলেন, রাশিদা বেগমের বড় ছেলেকে এ বিষয়ে জানানো হলে তিনি মাকে ভরণ-পোষণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে তিন ছেলে যাতে মায়ের চিকিৎসা ও দেখাশুনা করে তার জন্য যথাযথ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

রাশিদা বেগমের বড় ছেলে মো. জুলহাস হাওলাদারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিজের স্ত্রী সন্তানসহ ঢাকায়  অবস্থান করায় মায়ের খোঁজ খবর ঠিকমতো নিতে পারছেন না। তাছাড়াও আমাদের বাধা সত্ত্বেও মেঝ ভাই জাকির হোসেন মায়ের নামের সম্পত্তি বিক্রি করায় মনোমালিন্যের কারণে মায়ের খোঁজ খবর নেওয়া হয় না। ছোট ভাই রাকিব‌ মায়ের কোন ভরণ-পোষণ ও খোঁজ খবর বন্ধ করে দিয়েছে অনেক আগেই। তার সাথে আমার সাথেও কোন যোগাযোগ নাই। মেজ ছেলে মো. জাকির হোসেনের ভাষ্য,  মায়ের জমি বিক্রি করে ঘর তুলতে এবং চিকিৎসা করাতে আমি অনেক দেনা হয়েছি। এমনকি কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। এ অবস্থায় আমার ৪ ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীসহ ঢাকায় থাকার খরচ ও ঋনের কিস্তি দিতে হচ্ছে। এজন্য মায়ের ভরন পোষণ দিতে পারছিনা। বড় ভাইকে বার বার বলার পর‌ও তিনি মায়ের খোঁজ খবর নেয় না। আর ছোট ভাই রাকিবকে মোবাইল কল দিলে সে ফোন ধরে না এবং আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ‌ও রাখেনা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. নাসির উদ্দিন হাওলাদার বলেন, তাঁর ছেলেদের সাথে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়েছি, তার ভরণ-পোষন ও ঔষধে অনেক টাকার প্রয়োজন। এলাকার লোকজনের কাছ থেকে সব সময় ম্যানেজ করা সম্ভব হয় না।

এ বিষয়ে মুরাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) হাফিজুর রহমান ফোরকান জানান, তিন ছেলের অবহেলায় অসুস্থ মায়ের ভরন পোষন ও চিকিৎসা হচ্ছে না। তিনি তাঁর সন্তানের সাথে যোগাযোগ করে সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।

দুমকি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহীন মাহমুদ জানান, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে বিধি মোতাবেক সহায়তা করার কথা জানান।

সন্তানেরা ভরণ-পোষণ না করার বিষয়ে বলেন, যদিও এটি মোবাইল কোর্টের আওতায় না তবে ভুক্তভোগী যদি আদালতে মামলা করেন তাহলে সুবিচার পেতে পারেন।

আরবি/জেডআর

Link copied!