সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পরিধি বেড়েছে। আগে যেখানে ২৭টি ওয়ার্ড ছিল, এখন সেখানে ৪২টি। ব্যয়ও বেড়েছে স্বাভাবিকভাবে। এলাকা দ্বিগুণ হওয়ায় বেড়েছে উন্নয়ন কাজের প্রয়োজনীয়তা।
উন্নয়নের ফাইল জমে হয়ে আছে স্তূপ। কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছে না। টাকার অভাবে থমকে আছে সব উন্নয়ন। কোনো কোনো কাজ মাঝপথে আটকে আছে। ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তা, ড্রেন ভাঙা অবস্থায়।
অর্থ সংকটে প্রায় ১০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ থমকে আছে। বাইরের চিত্রের মতো ভেতরেও একই অবস্থা। টাকাকড়ির টানাটানিতে ‘নগরসংসার’ চালানোই দুরূহ হয়ে পড়েছে। অর্থ সংকটের কারণে উন্নয়ন কাজ থমকে আছে, যেসব কাজ চলছে সেগুলোর ক্ষেত্রেও ঠিকাদারদের বিল ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না নগর কর্তৃপক্ষ।
ঠিকাদারদের ৫০ কোটি টাকার মতো বিল পাওনা রয়েছে নগর কর্তৃপক্ষের কাছে। ঠিকাদাররা কাজ ফেলে রেখেই চলে গেছেন। আর নগরের উন্নয়নে নেওয়া ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাতিল হয়ে গেছে ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর।
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান নগর ভবনের দুরবস্থার কথাটি অকপটেই স্বীকার করে নেন। তিনি জানান, অর্থ সংকটে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। উন্নয়ন কাজ তো থমকে আছেই, জরুরি কাজগুলো সম্পাদনেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি জানান, জরুরি সংস্কার কাজের জন্য সেপ্টেম্বরে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল, এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।
সিসিক সূত্র জানায়, সিকি শতাব্দীর জীবনে এমন দুর্দশায় কখনোই পড়েনি সিসিক। উন্নয়ন তো দূরের কথা নৈমিত্তিক কাজগুলো চালিয়ে নিতেও হিমশিম খাচ্ছে নগর ভবন। নগরজুড়ে পড়ে থাকা অর্ধসমাপ্ত কাজগুলো যেন চোখে আঙুল দিয়েই দেখিয়ে দিচ্ছে।
মূলত গত নির্বাচিত পরিষদের উন্নয়ন প্রস্তাব বাতিল ও কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সিসিকে সংকট দেখা দেয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প জমা দিয়েছিল তৎকালীন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পরিষদ।
সড়ক, ড্রেন, ছড়া-খাল, কালভার্ট, ওয়াকওয়ে, স্ট্রিট লাইট, ফুটপাতসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ পরিচালনার জন্য প্রথমে তিনি ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে।
ওই প্রকল্প জমা দেওয়ার পরের মাসে অর্থাৎ ২০২৪ সালের মে মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. শামীম আলমের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল সিলেট আসে। ৩ দিন সিলেটে অবস্থান করে ঢাকায় ফিরে গিয়ে তারা প্রকল্পটির আকার কমিয়ে আনেন আড়াই হাজার কোটি টাকায়। এরপর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। ওলট-পালট ঘটে সবকিছুতেই।
পরে প্রকল্পটির ‘অকালমৃত্যু’ ঘটে। গেল ৫ সেপ্টেম্বর প্রকল্প যাচাই কমিটির সভায় স্থানীয় সরকার সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান প্রকল্পটি বাতিল করে দেন। প্রকল্পটি অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিত উল্লেখ করে তা বাতিল করা হয়।
এদিকে, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যা ও ২০২৪ সালের দুই দফা বন্যায় নগরীর রাস্তাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে ক্ষতও সামাল দিতে পারেনি সিলেট সিটি করপোরেশন। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে মন্ত্রণালয়ে চাওয়া হয়েছিল ৫৮৮ কোটি টাকা।
বিপরীতে বরাদ্দ আসে মাত্র ২ কোটি। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর এ খাতেও আর নতুন করে কোনো বরাদ্দের ব্যবস্থা হয়নি। প্রলেপ না পড়ায় দিনে দিনে তাই রাস্তার সে ক্ষতগুলো আরও বিস্তৃত হচ্ছে।
অতীতে সিসিকের উন্নয়ন কাজের বিল নিয়ে কখনোই ভাবতে হয়নি মন্তব্য করে প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, অর্থ সংকটের কারণে ঠিকাদারদের অন্তত ৫০ কোটি টাকার বিল দেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া শতকোটি টাকার প্রকল্পে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :