ঢাকা সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫

ভালোবেসে সজারু পোষ মানালেন টাঙ্গাইলের লিটন

মনিরুজ্জামান মনির, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৫, ০৬:১৪ পিএম

ভালোবেসে সজারু পোষ মানালেন টাঙ্গাইলের লিটন

সজারু সঙ্গে সুমন আহমেদ লিটন। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ভালোবেসে বন্যপ্রাণীকেও পোষ মানানো যায়, কথাটির যথার্থ প্রমাণ মিলে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সুমন আহমেদ লিটনের সাথে বন্যপ্রাণী সজারুর ভালোবাসা দেখে। এ যেনো বনের প্রাণীর সাথে মানুষের ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী দুইটি সজারুকে পোষ মানিয়েছেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কুশারিয়া গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে সুমন আহমেদ লিটন। পেশায় তিনি একজন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাচালক। অটোরিকশা চালানোর সুবাদে পাশের এলাকায় মুমূর্ষ অবস্থায় ছোট্ট একটি সজারুর বাচ্চা কুঁড়িয়ে পান লিটন। এরপর বাড়ি নিয়ে এসে চিকিৎসা ও সেবা যত্ন করে সুস্থ করে তুলেন।

পোষা প্রাণীর মতোই সজারুর বাচ্চাটিকে লালন পালন করতে থাকেন লিটন, বাচ্চাটি আস্তে আস্তে বড় হয় এবং তার আদর যত্ন ও ভালোবাসায় একপ্রকার বন্ধুত্বের মতো সম্পর্ক হয়ে যায়। সজারুটি লিটনের বাড়িতেই গর্ত করে সেখানে থাকে।  লিটনের বাড়ি ফেরার শব্দ পেলেই সজারুটব দৌড়ে গেটের কাছে চলে যায় তার কাছ থেকে আদর পাওয়ার জন্য। বাড়িতে ঢুকেই লিটন সজারুটিকে আদর করে।  গর্তের কাছে গিয়ে ডাকলে লিটনের ডাকে সাড়া দিয়ে বেরিয়ে আসে। তার হাতে খাবার খায়, তার সাথে ঘুরে বেড়ায়।  নিবিড় এক বন্ধুত্ব দুজনের মধ্যে।

এরকম বন্যপ্রাণী সাধারণত বন জঙ্গলে থাকতেই পছন্দ করে, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই লিটনের আদর-যত্নে বড় হওয়ার পর তার বাড়ি ছেড়ে কোথাও যায় না। এক রকম লিটনের পরিবারের সদস্য হয়ে গেছে বন্যপ্রাণী সজারু।  কিছুদিন আগে শিকারির হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া আরেকটি আহত সজারুর বাচ্চা শরীরে শিকারির আঘাতে ক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন লিটন। সেটাকেও সেবা-যত্ন করে সুস্থ করে তোলেন। সজারু দুইটি বন্যপ্রাণী হলেও লিটনের বাড়িতে তাদের ঘুরাফেরা, চলাচল ও আচরণ গবাদি পশুর মতই। লিটনের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও সজারু দুইটিকে খুবই আদর যত্ন করেন। আশেপাশের প্রতিবেশীরাও লিটনের সজারু দুইটিকে প্রতিনিয়ত দেখতে আসে এবং ভালোবেসে আদর করে। লিটনের বাড়ির এবং আশেপাশের শিশুদের সাথেও সজারু দুইটি খেলা করে, তাদের হাতে খাবার খায় এবং  ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন প্রকার কাঁচা শাকসবজি, ফলমূল, এমনকি রান্না করা খাবারও খায় এই সজারু দুইটি।

ছোটবেলা থেকেই লিটনের পশু পাখির প্রতি অগাধ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকেই লিটন সজারু দুইটিকে সন্তান স্নেহে লালন-পালন করে আসছেন।

লিটনের প্রতিবেশী মো. দুলাল খন্দকার জানায়, ছোটবেলা থেকেই লিটনের বন্য প্রাণীর প্রতি প্রচুর ভালোবাসা, কিছুদিন আগে প্রথমে একটি সজারু মুমূর্ষ অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে এসে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন এবং পরবর্তীতে আরেকটি সজারুর বাচ্চা এনে লালন পালন করছেন। সজারু দুটিকে বনে ছেড়ে দিয়ে আসলেও, লিটনের ভালোবাসায় আবার তারা বাড়িতে ফিরে আসে। আশেপাশের অনেক এলাকা থেকেও লোকজন সজারু দুটিকে দেখতে আসে। বিষয়টি আমাদের কাছেও খুব ভালো লাগে। আমরাও সজারু দুটিকে আদর করি।

লিটনের ভাতিজা কুশারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. পাপন হোসেন জানায়, এক বছরের মতো  সময় ধরে তার চাচা সুমন আহমেদ লিটন সজারু লালন পালন করতেছেন। শরীরে কাটাযুক্ত বন্য প্রাণী হওয়ায় কারনে প্রথমে বাড়ির লোকজন ভয় পেলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তারাও সজারু দুটিকে আদর যত্ন করেন এবং  খাবার খাওয়ান।  একরকম পরিবারের সদস্যের মতো হয়ে গেছে। তার সহপাঠীরাও বিষয়টি শুনে রীতিমতো অবাক হয় বলে জানান।

লিটন মিয়ার প্রতিবেশী শুকু ভানু জানায়, দীর্ঘদিন ধরে লিটন মিয়া সজারু দুইটিকে লালন-পালন করতেছেন। সজারু দুইটি লিটনের ডাকে সাড়া দেয় এবং ছোট বাচ্চাদের মতো তার পিছন পিছন ঘুরে বেড়ায়। মানুষের সাথে বন্যপ্রাণীর ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক লিটনের এই সজারু দুইটিকে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো না।

এ বিষয়ে সুমন আহমেদ লিটন জানায়, পশুপাখি এবং বন্যপ্রাণীর প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকে তিনি কবুতর ও গরু- ছাগল পালন করেন।  অটোরিকশা চালানোর সুবাদে পাশের এলাকায় গেলে মুমূর্ষ অবস্থায় একটি সজারুর বাচ্চা দেখতে পান এবং সেখান থেকে নিয়ে এসে চিকিৎসা ও সেবা যত্নের মাধ্যমে সজারুটি সুস্থ হয়। পরবর্তীতে অন্য আরেকটি এলাকা থেকে আহত আরেকটি সজারুর বাচ্চা উদ্ধার করে নিয়ে এসে লালন পালন করতেছেন। সন্তানের মতোই তাদের ভালোবাসেন বলে জানান। যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিনই সজারু দুটিকে ভালোবেসে লালন পালন করবেন বলে জানান সুমন আহমেদ লিটন।

আরবি/জেডআর

Link copied!