ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

সরিষার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ০২:৫৮ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সরিষার হলদে ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে জয়পুহাটের আক্কেলপুর উপজেলার ফসলের মাঠ। দেখে মনে হবে যেন হলদে রাজকুমারীর গায়ে হলুদ। এসব মাঠে এসেছে প্রজাপতি, মৌমাছি, পোকামাকড় থেকে শুরু করে অন্যান্য পাখিরাও। এমনই চোখ ধাঁধানো প্রকৃতির রূপ দেখা যায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।

যত দূর চোখ যায়, তত দূর দেখা যায় হলদে রঙের সরিষা ফুল। বিশাল এ মাঠ দূর থেকে দেখে মনে হয় বিশাল আকৃতির হলুদ চাদর বিছানো। ধুলা আর কুয়াশায় ধূসর প্রান্তরের মাঝেও দূর থেকে চোখে ভেসে উঠে সরিষার হলুদ। বিস্তীর্ণ মাঠের চারদিকে হলুদের সমাহার। মাঘের ভর শীতেও প্রকৃতিতে মনে হচ্ছে বসন্তের ছোঁয়া। বসন্তের ছোঁয়া নিতে মাঠগুলোতে এসে যুবক-যুবতীরা ছবি ও সেলফি তুলতে ব্যস্ত।

উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রতিটি গ্রামেই চাষ করা হয়েছে সরিষার। তবে উপজেলার আক্কেলপুর পৌরসভাসহ তিলকপুর, রায়কালি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সরিষার আবাদ করেছে স্থানীয় কৃষকরা।

যদি অনুকূল আবহাওয়া থাকে তাহলে সরিষাতে ধানের চেয়ে বেশি লাভজনক হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। তাঁরা সরিষা ঘরে তুলেই ধান চাষের জন্য জমি তৈরি করতে শুরু করবেন। এখন এসব এলাকার চাষিরা সরিষার পরিচর্যা নিয়ে ব্যাপক সময় পার করছেন। জমি থেকে পাকা সরিষা সংগ্রহ করতে পারলেই কৃষকদের চিন্তা দূর হবে। চলতি মৌসুমে পুরো উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৪শত ১০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বাজারে আলুর চাহিদা বেশি থাকায় কৃষকেরা সরিষার পরিবর্তে আলু চাষের দিকে ঝুকে পড়েছে। এতে করে সরিষার লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগেরও কম হবে বলে অফিস সূত্রে জানা যায়। কৃষকের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ হলেও বারি ৯, ১৪, ১৭, ১৮, বিনা ৯ এর মধ্যে বারি ১৪ ও ১৮ জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ।

আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের তেমারিয়া গ্রামের কৃষক রাশেদুল ইসলাম পাইলট বলেন, গত মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। জমি তৈরি করা থেকে ফলন ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা আবাদে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে এসব জমি থেকে প্রায় ২৪ মণ সরিষার ফলন পাবেন বলে আশা করছেন।

একাধিক কৃষক জানান, অন্যান্য ফসলের মতো সরিষা আবাদে তেমন শ্রমের প্রয়োজন হয় না। জমি থেকে পাকা সরিষা সংগ্রহ ও মাড়াই করে ফসল ঘরে তোলার জন্য পরিবারের পুরুষের পাশাপাশি নারী সদস্যরাও নিয়মিতভাবে কাজ করেন। সরিষা চাষে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি ধানের ফলনও ভালো হয়।

তিলকপুর ইউনিয়নের শিয়ালাপাড়া গ্রামের কৃষক মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, আলু চাষে ঝুকি বেশি। অপর দিকে ভোজ্য তেলের দামও বেশি। অল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে সরিষার ফলন ঘরে তোলা যায়। ঝড় বৃষ্টি তেমন না হওয়ায় চলতি মৌসুমে সরিষার ফলনও হয়েছে বেশ। গত বছর ৪বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছিলাম। এবার সাড়ে ৫বিঘা জমিতে সরিষা বোপণ করছি। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদিত হয় কম পক্ষে ৬ থেকে ৭ মণ । জমিতে হাল চাষের পর বীজ বোপন, সার ও সেচ দিতে হয় । প্রতি বিঘা জমিতে কাটা মাড়াই খরচ হয় গড়ে  ৯ থেকে ১০ হাজার  টাকা। আর প্রতি মণ সরিষা বিক্রি হবে ৩হাজার ৫শ থেকে ৪ হাজার টাকায়। উৎপাদন ব্যয়ে প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করে কমপক্ষে ১৮ থেকে ১৯হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।

উপজেলার রায়কালি ইউনিয়নের নারিকেলী গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, সরিষার আবাদের পরে ধানের ফলনও ভালো হয়। গত বছর সরিষা চাষে যে লাভ হয়েছে এর আগে ধান আবাদ করে কোনভাবেই সম্ভব হয়নি। তাই এবার আগাম জাতের ধান রোপণ করেছিলাম। ধান কেটেই ৭ বিঘা জমিতে সরিষা বোপণ করছি এবং ফলন অনেক ভালো হয়েছে। রোদে শুকিয়ে গুদামজাত করে পরে বিক্রি করতে পারলে সরিষার বাজারদর আরও বেশি পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইমরান হোসেন বলেন, সরিষা আক্কেলপুর উপজেলার একট সম্ভাবনাময় ফসল। এবছর কৃষক আলু চাষে অধিক আগ্রহী হওয়ায় ও নভেম্বর মাসে পর পর দুই বার বৃষ্টি হওয়ায় সরিষা আবাদ গত বছরের তুলনায় কম হয়েছে। তবে অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় সরিষার বাম্পার ফলন আশা করা যাচ্ছে ও পাশাপাশি কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন বলে মনে করছি। এ পর্যন্ত উপজেলায় ১ হাজার ৬শত ২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা অর্জিত হয়েছে।