হাতে বেত ও শিক্ষকের টেবিলের ওপর বসিয়ে তিন বছর বয়সী নিজের কন্য শিশুকে দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর পাঠদান করালেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ৩৯নং হাজারীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হাফছা খানম ওরফে প্রিয়া ইসলাম। ওই সময় শ্রেণীকক্ষে দাঁড়িয়ে নিজের কোলের শিশুর পাঠদানের ভিডিও চিত্র মোবাইলে ধারন করে ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট করেছেন শিক্ষিকা নিজেই। ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে নিজের শিশু কন্যাকে ম্যাডাম আখ্যা দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ম্যাডাম যখন দ্বিতীয় শ্রেণীর ইংরেজি ক্লাসে বাঘবাকুম পায়রা কবিতা শেখায়।’ পাঠদানকারী ওই শিশু তার ছোট মেয়ে। এমন একটি ভিডিও সোমবার বিদ্যালয়ে শ্রেণী কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে তার নিজের ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট করলে মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় শিক্ষক ও অবিভাবকদের মধ্যে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক অভিভাবক জানান, এই শিক্ষিকা যদি প্রকৃত পড়াশোনা করে শিক্ষকতা পেশায় আসতো তাহলে এমন জ্ঞানহীন কাজ করতো না। তিনি সম্ভবত শ্রেণী কক্ষটাকে নিজের বসতঘর মনে করেছে। ওনার কাছ থেকে আমাদের সন্তান কি ধরনের শিক্ষা অর্জন করবে?
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শিক্ষিকা হাফছা খানম ওরফে প্রিয়া ইসলাম জালিয়াতি করে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় পাশ করেছেন। জালিয়াতির পুরো প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেছেন তার স্বামী শ্রমিক লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম সবুজ। তার স্বামী চরফ্যাশন পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি থাকার সুবাদে তিনি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষায় নিজে অংশগ্রহন না করে টাকার বিনিময়ে অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।
৩৯নং হাজারীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মামুন বলেন, এমন কোন কাজ কোন শিক্ষক করতে পারেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
ওই শিক্ষিকা হাফছা খানম ওরফে প্রিয়া ইসলাম জানান, দুষ্টামির ছলে ওই ভিডিওটি তিনি ধারন করে ফেসবুকে পোস্ট করেছি। বিষয়টি এমন হয়ে যাবে তা আমার জানা ছিলনা। এখনই আমি ভিডিওটি ডিলেট করে দিবো।
চরফ্যাশন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাশেম উদ্দিন বলেন, শিক্ষিকার এমন কর্মকান্ডের কথা শুনে আমি বিম্মিত হয়েছি। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম মুঠোফোন বলেন, `যদি কোন শিক্ষক এমনটা করে থাকে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, বিষয়টিকে তদন্ত করে দেখা হবে।
জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান জানান, কোন শিক্ষক বিদ্যালয়ের শ্রেনী কক্ষে তাদের শিশু সন্তান নিয়ে যাওয়ার কোন নিয়ম নেই। তার শিশুকে দিয়ে শ্রেণীর পাঠদান করানোর কোন বৈধতা নেই। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :