ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অগ্নি মহড়া

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ১০:৫৪ পিএম

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অগ্নি মহড়া

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

২১ জানুয়ারি মঙ্গলবার বেলা ১২টায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ‘পূর্ণাঙ্গ অগ্নি নির্বাপন মহড়া-২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়। এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল কোনো উড়োজাহাজে দুর্ঘটনার পর অগ্নি নির্বাপণ এবং যাত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া অনুশীলন করা। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার যৌথ সমন্বয় এবং তড়িৎ কার্যক্রমের মাধ্যমে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই মহড়ায় ফায়ার ক্রুদের দক্ষতা ও পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধি এবং সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা যাচাই করা হয় যাতে কোনো ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা দ্রুত সমাধান করে বাস্তব দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিশ্চিত করা যায়।

মহড়ায় বেবিচক, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, র‍্যাব, এপিবিএন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল চট্টগ্রাম, বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা, এয়ার এস্ট্রা এবং নভোএয়ারসহ বিভিন্ন সংস্থা একযোগে অংশ নেয়।

মহড়ায় দেখা যায়, সর্বমোট ৬৫ জন যাত্রী এবং কেবিন ক্রু  নিয়ে নেপচুন এয়ারলাইন্সের একটি মাঝারী ধরনের উড়োজাহাজ ‘এয়ারবাস-৩২০’, যার কলসাইন নেপচুন ৪০৬, শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে-২৩ তে পূর্ব দিক থেকে অবতরন করে। রানওয়ে-২৩ তে অবতরনের পর পরই বিমানটি অপ্রত্যাশিতভাবে রানওয়ে থেকে সরে ট্যাক্সিওয়ে ব্রাভোর ২০০ ফুট দূরে কার্গো এপ্রোনের সামনে গিয়ে ছিটকে পড়ে। সহসাই উড়োজাহাজ এর ডান পার্শ্বের ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। 

মুহূর্তের মধ্যে কন্ট্রোল টাওয়ার বিষয়টি অবলোকন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ক্রাস এলার্ম সুইচ অন করার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবগত করে। সেইসাথে কন্ট্রোল টাওয়ার বিমানবন্দরের ফায়ার স্টেশন, অত্র বিমানবন্দর পরিচালক, স্যাটো, সহকারী পরিচালক (ফায়ার) কে তাৎক্ষণিকভাবে অবগত করে।

ইতোমধ্যে উড়োজাহাজ এর নীচ অংশ দিয়ে আগুন দেখা দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটিতে পুরোপুরি আগুন ধরে যায়।

সর্বশেষ, ৪০ জন যাত্রীকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভবপর হয়, ২১ জন আহত হয় এবং ৪ জন মারা যায়।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সচিব নাসরীন জাহান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া, ওএসপি, বিইউপি, এনডিসি, এনএসডব্লিউসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তৃতার শুরুতে মহড়ায় অংশগ্রহণকারী সব সংস্থার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) নির্দেশিকা অনুযায়ী, বিমানবন্দরে কর্মরত ফায়ার ক্রুদের দক্ষতা ও পেশাগত জ্ঞান উন্নত করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতিগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগের সময় কার্যকরভাবে ব্যবহারের উপযোগিতা যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারই অংশ হিসেবে আজকের এই মহড়া আয়োজন করা হয় এবং সবাই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আজকের এই মহড়া সম্পন্ন হয়।

তিনি আরও বলেন, এই ধরনের মহড়া আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগায় যে, যেকোনো অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারব।

বিশেষ অতিথি বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়মিতভাবে এমন মহড়া আয়োজন করা হয়। এই ধরনের মহড়া জরুরি মুহূর্তে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা বিমানের অগ্নি নির্বাপন ও যাত্রী উদ্ধার তৎপরতায় প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করছি।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই মহড়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রস্তুতিকে আরও শাণিত করার সুযোগ পাচ্ছি উল্লেখ করে বলেন বিশেষ অতিথি বলেন যে কোন অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য আমাদের সকলকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকতে হবে। পরিশেষে, তিনি সফলভাবে মহড়া পরিচালনার জন্য বিমানবন্দরের পরিচালকসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বেবিচক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনসহ মহড়ায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সংস্থার ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাবৃন্দ।

আরবি/জেডআর

Link copied!