বগুড়ার শেরপুরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ তুলে ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে অনাস্থ প্রস্তাব এনেছে সকল ইউপি সদস্যরা। এমন অভিযোগ উঠেছে উপজেলার সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. নুরনবী মন্ডলের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে গত ১৫ জানুয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, গত ৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর জেলার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জিন্নাহ মামলাজনিত কারণে পলাতক থাকায় প্যানেল চেয়ারম্যান-১ ইউনিয়ন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মো. নুরনবী মন্ডলকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তিনি ২০২৪-২০২৫ অর্থ-বছরে প্রায় ৬ লাখ টাকা ট্যাক্স আদায় করে আত্মসাৎ, পরিষদের সিদ্ধান্তের বাইরে নিজের ইচ্ছামতো টিসিবি কার্ড প্রদান, নিজের ইচ্ছামতো ২শ জনকে বিধবা ও বয়স্ক ভাতার কার্ড আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে প্রদান, সে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাকরী করার কারণে নিয়মিত পরিষদে না আসায় সেবা প্রার্থীরা চরমভাবে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে, মাঝে মাঝে পরিষদে আসলেও সেবা প্রার্থীদের সাথে খারাপ আচরন, গ্রাম আদালত পরিচালনায় টাকা ছাড়া কোন বিচার শালিস না করা, সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর নিলেও কোন কাজে সদস্যদের মূল্যায়ন না করা এবং সদস্যদের মতামতের গুরুত্ব না দেয়া এমনকি সদস্যদের হুমকি দিয়ে স্বাক্ষর নেওয়া, ২শ কম্বল গরীবদের বাদ দিয়ে নিজের পছন্দের লোকদের প্রদান করা সহ নানা অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন। এসব কারণে ওই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. নুরনবী মন্ডল (হিটলার) এর বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যরা গত ১৪ জানুয়ারী কার্য্যনির্বাহী সভার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৫ জানুয়ারী ইউপি সদস্য মো. আবু হাসান ওই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অপরদিকে একই দিনে ইউনিয়নের সকল ইউপি সদস্যরা বর্তমান চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে চেয়ারম্যান প্যানেল- ১, বিভিন্ন অনিয়ম করে অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে বলে দাবীর করে। স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইন- ২০০৯ ধারা ৩৩ উপধারা (৩), (৪) এর বিধান অনুযায়ী ইউপির বিশেষ সভায় উপস্থিত সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চেয়ারম্যান প্যানেল- ১ এর পরিবর্তে চেয়ারম্যান প্যানেল- ২ কে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এমনটাই দাবী করে পৃথক একটি আবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ৭, ৮ ও ৯নং সদস্য আনজু মনোয়ারা বলেন, চেয়ারম্যান প্যানেল-১ নুরনবী মন্ডল (হিটলার) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে অযোগ্য। তাকে দিয়ে পরিষদ চালানো সম্ভব না।
প্যানেল চেয়ারম্যান-২ আবু হাসান জানান, ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহনের পর আর্থিকসহ বিভিন্ন অনিয়ম করে পরিষদ পরিচালনায় অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। যার কারনে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ মিটিংয়ের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে অপসারণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেয়। এব আমাকে চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালনের জন্য সর্বসম্মত হিসেবে রেজুলেশন করে দেয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. নুরনবী মন্ডল বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পুর্ন মিথ্যা। দায়িত্ব নেয়ার পর আমি যা করেছি ইউপি সদস্যদের সাথে নিয়েই করেছি।
তাছাড়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে এ অভিযোগে সংক্রান্ত ঘটনার দু/চার দিনেই সমাধান হবে দাবী করে ওই চেয়ারম্যান।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক খান অভিযোগ প্রাপ্তীতা স্বীকার করে বলেন, সুঘাট ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :