মাস্টার্স অব সায়েন্সের (এমএস) পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি পেতে হলে যেকোনো সেমিস্টারে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীকে ১৮ মাসের শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে হয়। শ্রেণি কার্যক্রমে শতকরা ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি থাকতে হয় এবং বিভাগগুলোর নিয়মিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে হয়। কিন্তু এই নিয়ম মানা হচ্ছে না সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিকৃবিতে। বরং নিয়মের বাইরে গিয়ে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
জানা গেছে, ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা থাকছেন চাকরিতে ব্যস্ত, এমনকি তারা ক্লাস ও বিভাগীয় পরীক্ষায়ও অংশ নিচ্ছেন না। কিন্তু শেষ বেলায় তারা এসে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের ব্যত্যয়। শিক্ষার্থীরা নিয়ম না মানলেও পরীক্ষার সুযোগ দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এভাবে প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের নিয়মবহির্ভূত সুযোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি দিচ্ছে সিকৃবি। এমন স্পর্শকাতর অভিযোগ উঠেছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যায়লয়ের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে একাধিক শিক্ষক সোচ্চার হলে সার্জারি বিভাগের এমএস পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি অনিয়মে অভিযুক্তের তালিকায় নাম উঠে আসায় বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ৪০ শিক্ষার্থীর ফাইনাল পরীক্ষা আটকে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় প্রত্যেকটি বিভাগের বিরুদ্ধেই রয়েছে এমন অভিযোগ।
এ কথা অকপটে স্বীকারও করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ বিভাগের ডিন প্রফেসর ড. মেহতাজুল ইসলাম বলেন, অতীতে অনিয়মের মাধ্যমে ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ মিথ্যা নয়। আমরাও পেয়েছি।
বর্তমানে যাদের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে এবং আটকে দেওয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, আগে যা-ই হয়ে থাকুক, আমরা সেই সুযোগ দেব না। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এসব অনিয়ম দূর করার প্রতি সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছি। আগামীতে কেউ অনিয়ম করে ডিগ্রি নিতে পারবে না বলেও জানান তিনি।
একাধিক সূত্র জানায়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স অব সায়েন্সে (এমএস) প্রতি বছর দুটি সেমিস্টার রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, জানুয়ারি-জুন এবং জুলাই-ডিসেম্বর। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ বিভাগের মধ্যে ৪৫টি বিভাগে সার্কুলার দিয়ে এমএস-এ শিক্ষার্থী ভর্তি করে সিকৃবি। মোট ৪৭টি ডিগ্রি দেওয়া হয় এই বিভাগগুলো থেকে। এরমধ্যে এমএস ইন সার্জারি, এমএস ইন এ্যানাটমি, এমএস ইন ফার্মাকোলজি, এমএস ইন মেডিসিন, এমএস ইন ফিজিওকোলজি অন্যতম। এগুলোর মধ্যে সার্জারি বিভাগ থেকে দেওয়া হয় দুটি ডিগ্রি। সার্জারি এবং থিউরোনলজিতে। যেকোনো সেমিস্টারে ভর্তি হলে শিক্ষার্থীদের ১৮ মাসের শ্রেণি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। প্রত্যেক শিক্ষক সর্বোচ্চ পাঁচজন শিক্ষার্থী সুপারভাইজর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভর্তির নিয়ম অনুযায়ী চাকরি করার সুযোগ না থাকলেও সিকৃবির বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থীই কোথাও না কোথাও চাকরি করেন। তবে কেউ চাকরি করলেও তাকে যথাযথ কর্তৃক্ষের ছুটি ও একই সঙ্গে পড়াশোনার অনুমতি নিয়ে আসতে হয়। যা তারা করেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরীক্ষা স্থগিত হওয়া সার্জারি বিভাগের এই কোর্সে সাত শিক্ষার্থী রয়েছেন। তারা ভর্তি হন গত জুলাই-ডিসেম্বর সেমিস্টারে। তাদের তিনজনই চাকরি করেন। কিন্তু ভর্তির সময় তারা নিজেদের চাকরির তথ্য গোপন রাখেন। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী কোনো শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেননি। দুটি টার্ম পরীক্ষা ও ফাইনাল পরীক্ষার আগে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে তা জমা দিতে হয়। এই তিনটির কোনোটিই তারা সম্পন্ন করেননি। নিয়ম অনুযায়ী এগুলো সম্পন্ন না করে ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণ করা যাবে না। কিন্তু সার্জারিতে সেটি অনুসরণ করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। বিভাগের চেয়ারম্যান তার বিভাগের সংশ্লিষ্ট সুপারভাইজর শিক্ষকদের নিয়ে কোনো সভা না করে শিক্ষার্থীদের তালিকা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বিভাগের ডিনের কাছে পাঠিয়ে দেন। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীরা ফাইনাল পরীক্ষা।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ বিভাগের ডিন প্রফেসর ড. মেহতাজুল ইসলাম বলেন, আগের সময়ে বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও শিক্ষকরা নৈতিকতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ছিলেন। তারা কী কারণে অনৈতিক সুযোগ শিক্ষার্থীদের দিয়েছেন, আমি জানি না। তবে অনিয়ম হয়েছে। আমি এসে সেটি বন্ধ করেছি। জানিয়ে দিয়েছি, আগে কীভাবে কী হয়েছে, সেটি অতীত। এখন ক্লাস করে, পরীক্ষা দিয়ে, সব নিয়ম মেনেই ডিগ্রি নিতে হবে। চাকরি করে এসে ডিগ্রি নিয়ে যাবেন, সেটি হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :