রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রংপুর ব্যুরো

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০৬:৪৭ পিএম

রংপুরে ঠান্ডাজনিত রোগে শিশুদের নিয়ে উৎকণ্ঠা

রংপুর ব্যুরো

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০৬:৪৭ পিএম

রংপুরে ঠান্ডাজনিত রোগে শিশুদের নিয়ে উৎকণ্ঠা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রংপুরে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশায় দিনেও সূর্যের দেখা মিলছে না। ফলে দিন হোক বা রাত-একই রকম শীত অনুভূত হচ্ছে। এমন বৈরী আবহাওয়ায় বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। বিশেষ করে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ রোগী আসছেন হাসপাতালে। আক্রান্তের বেশির ভাগই শিশু। তাদের অসুস্থতায় চরম উৎকণ্ঠায় পড়েছেন বাবা-মা। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ। রয়েছে ওষুধের সংকটও।

সরেজমিন শমিবার সকালে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখা যায়, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে ভিড় করছেন বাবা-মা। ঘন কুয়াশার মধ্যেও তারা শিশুদের নিয়ে হাসাপাতালে আসছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে এ ভিড় আরও বাড়তে থাকে। চিকিৎসক থাকলেও ওষুধ সংকটের অভিযোগ করেছেন অনেকে। 

প্রচণ্ড ঠান্ডায় তিন দিন ধরে পাতলা পায়খানা করছিল এক বছরের রেখা মনি। মা মালেকা  বেগম তাকে নিয়ে উপজেলার বেতগারি এলাকা থেকে হাসপাতালের শিশু কর্নারে আসেন। তিনি বলেন, ‘দাক্তার ছাওয়াক দেকি খালি স্যালাইন দেচে, কোনো ওষুধ দেয় নাই।’ 

সর্দি-জ্বরসহ দেড় বছরের শিশু আফাজকে কোলে নিয়ে বড়বিল এলাকা থেকে আসেন বাবা সেতু মিয়া। তিনি বলেন, দু’দিন ধরে ঠান্ডায় তাঁর ছেলে কাহিল হয়ে পড়েছে। তাই হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। 

দুই মাসের আরিশারও সর্দি-জ্বর ও কাশি। তাকে নিয়ে নানি দুলালি বেগম এসেছেন অভিরাম এলাকা থেকে। তিনি বলেন, ‘ঠান্ডায় ছাওয়াটা কাহিল হয়্যা গেইচে, মনে হয় আর বাঁচে না। দাক্তার দেকলো, 

কিন্তুক সউগ ওষুধ হাসপাতালোত নাই।’ একই বক্তব্য শরীরে ব্যথা নিয়ে আসা গান্নারপাড় এলাকার ষাটোর্ধ্ব আইয়ুব আলীর। তিনি বলেন, ‘দাক্তার ছয় রকমের ওষুধ দিচে; পাওয়া গেল দুটা। বাকিগুলো বাজার থাকি কেনা নাগবে।’ 

শিশু কর্নারের দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স ফরিদা বানু জানান, স্বাভাবিক সময়ে বহির্বিভাগে গড়ে ৩৫ রোগী আসেন। ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় শীতজনিত রোগে শনিবারসহ তিন দিনে প্রায় ২০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। 

চিকিৎসক শ্যামলী আক্তার বলেন, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, জন্ডিস, সর্দি-জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও বয়স্করাই আসছেন। তবে বেশির ভাগই শিশু। তাদের যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কয়েক দিনে ৫০ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শনিবার ৫ জন, শুক্রবার ১০ জন, বুধবার ১৬ জন এবং মঙ্গলবার ১৯ জন ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত বেশি। 

শুক্রবার ভর্তি হওয়া বকশীগঞ্জ এলাকার ষাটোর্ধ্ব মজিদ ইসলাম বলেন, শীতের কারণে অ্যাজমা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি থাকা একই রোগে আক্রান্ত গজঘণ্টা এলাকার আনু মিয়ার অভিযোগ, প্রতিদিন সকালে একবার ডাক্তারের দেখা মেলে; মাঝখানে আর তেমন কাউকে পাওয়া যায় না। এমন অভিযোগ পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা প্রায় সব রোগীরই।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার বলেন, স্বাভাবিকের তুলনায় শীতের কারণে রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে বেশির ভাগই বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শীতজনিত রোগীর চিকিৎসা দিতে বহির্বিভাগে নেবুলাইজার মেশিনসহ স্যালাইন ও জিংক রাখা হচ্ছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স থাকলেও ওয়ার্ডবয় সংকটে ভর্তি রোগীদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ওষুধ সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, অর্থবছর শেষে এখনও বরাদ্দ না আসায় সব ওষুধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। 

এ বিষয়ে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী জানান, ২০১৯ সালের পর থেকে বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো ওষুধ সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু অর্থবছর শেষে জুলাইয়ের পর উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ আসতে দেরি হয়। এ জন্য ওষুধ সংকটে রোগীকে সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। শীতজনিত রোগ– বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে গরম কাপড় পরানো জরুরি। মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন বাচ্চাদের ঠান্ডা না লাগে। বেশি অসুস্থ মনে হলে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এদিকে তীব্র শীতের কাহিল রংপুরের জনজীবন। শনিবার বেলা বারোটা পেরিয়ে গেলেও দেখা নেই সূর্যের। শনিবার সকাল ৯ টায় রংপুরের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রংপুরের আবহাওয়া  অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, এ অবস্থা আরো দুই থেকে তিন দিন থাকতে পারে। সরকার হিসাব মতে রংপুরে ছিন্নমুল মানুষের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে তা অতি নগণ্য। 

আরবি/জেডআর

Link copied!