সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (পিআর) নির্বাচন পদ্ধতি চালু করতে প্রয়োজনে গণভোট করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনগুলো অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার সময়ের বড় দাবি। তাই দেশের প্রচলিত নির্বাচনকে সংঘাতমুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও প্রতিনিধিত্বমূলক করার জন্য এবং পেশি শক্তি ও কালো টাকার খেলা থেকে বাঁচার জন্য পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চালু করতে হবে।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে ভোলা সরকারি স্কুল মাঠে জামায়াতে ইসলামী ভোলা জেলা শাখা আয়োজিত বিশাল কর্মী সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামী ভোলা জেলা শাখার আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মুহাম্মদ জাকির হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও বরিশাল অঞ্চল পরিচালক এ্যাড. মুয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও বরিশাল মহানগরীর আমীর অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা ও বরিশাল অঞ্চল টিম সদস্য এ. কে. এম ফখরুদ্দিন খান রাযী। সম্মেলনে ভোলা জেলা এবং বিভিন্ন উপজেলার নেতৃবৃন্দও বক্তৃতা করেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সকল ইসলামী দলসহ বড় বড় রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বচন করতে রাজি হয়েছে। আর যারা আবার একটু ডাকাতি-টাকাতি করতে চায় তাদের ধান্দা আলাদা। আমরা তো ডাকাতি করতে পারিনা। এজন্য সততা, নিয়মশৃঙ্খলা ও ভালো পদ্ধতিই কিন্তু সব লোকেরা চায়। সংস্কার ও নির্বাচন আমরাও চাই। তবে, যেভাবে রাস্ট্রের সব সেক্টরে দুর্নীতিতে ভরে গেছে তাতে সব সেক্টরেই আগে সংস্কার দরকার। এসব সেক্টরের সংস্কার না করে কোন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য হবে না। তবে, কেউ কেউ সংস্কার ছাড়াই নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে গেছে। তারা বলছেন নির্বাচন আর সংস্কার একসাথে হবে। এ কথার সাথে আমরা অন্য গন্ধ পাই। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরাও মনে হয় আওয়ামী লীগের মতো কেটেকুটে বাক্স ভর্তি করতে চাও। কিন্তু আমরা জামায়াতে ইসলামী। আমাদের মাস্তানও নেই। টাকাও নেই। আমরা তো ব্যালট কাটতে পারবো না। আমরা কেন্দ্র দখল করতে পারবো না। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেই আমাদের লাভ। তাই, আমরা বলি বাংলাদেশের মানুষ চায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীর এ আন্দোলনকে বাংলাদেশের দুর্জয় ঘাঁটিতে পরিনত করবে। ভোলা জেলার সাতটি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে, পাড়ায়-মহল্লায় জামায়াতে ইসলামীর ইউনিট গঠন করার আহ্বান জানান জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভোাটাধিকার হরণ করা হয়েছিল। তিনটা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট মানুষ দিতে পারেনি। ভোটকেন্দ্রে গেলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্র লীগ আর পুলিশ লীগের দখলে ছিল ভোটকেন্দ্র। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে ইসলামী ছাত্রশিবির-জামায়াতে ইসলামীর তরুণ ৭ জন যুবককে হত্যা, সকল গুম, ক্রসফায়ার, নির্যাতন ও আয়নাঘরের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা। তার নির্দেশেই দেশের সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পরে সেই লাশ আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। এতবড় নিষ্ঠুরতাকে আল্লাহ পছন্দ করতে পারেননি। তাই, শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হলো।
কর্মী সম্মেলনে আসার পথে এক কর্মীর মৃত্যু:
বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে ভোলায় জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে যোগ দিতে আসার সময় জামায়াতে ইসলামীর কর্মী আব্দুল হালিম (৩৫) হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। তিনি বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জামায়াত নেতা মাওলানা মোহাম্মদ অলিউল্ল্যাহ। নিহত হালিম কাচিয়া ইউনিয়নের মাওলানা নজির আহমেদের ছেলে।
আপনার মতামত লিখুন :