নওগাঁর বদলগাছীতে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সাবরিন মোস্তারীর যোগসাজসে পূর্বের ওএমএস ডিলার হাসানুজ্জামানের সহযোগিতায় ওএমএস ডিলারের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে চাল উত্তোলন করে টিসিবি ডিলারকে সরবরাহ করে ডিলারদেরকে নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়ে গত ৫ মাসে প্রায় ৫ লাখ টাকা পকেটে ভরেছে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সাবরিন মোস্তারী বলে অভিযোগ তুলেছেন ওএমএস এর ডিলাররা।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের আগে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার ও ওএমএস এর ডিলারেরা মিলে খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তলোন করে টিসিবির ডিলারদের কাছে হস্তান্তর করতেন। এবং সেই চাল টিসিবির ডিলাররা কার্ডধারীদের মাঝে বিক্রয় করতেন। কিন্তু গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ই আগস্ট উপজেলার সকল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পুরাতন ১৬ জন খাদ্যবান্ধব ডিলারকে বাতিল করে এবং ১৬ই আগস্টে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে খদ্যবান্ধব ডিলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে গত ১২ নভেম্বর উপজেলার নতুন খাদ্যবান্ধব ডিলারের তালিকা প্রকাশ করলে আবারও অদৃশ্য কারনে ১৮ই নভেম্বর নতুন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার স্থগিত করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
উপজেলায় ৫জন খোলা বাজারে খাদ্যশষ্য বিক্রয়ের ওএমএস ডিলার ছিলো। এর মধ্যে হাসানুজ্জামান নামক এক ডিলার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারের আবেদন সময় ওএমএস ডিলার থেকে পদত্যাগ করে। বর্তমানে বদলগাছী উপজেলাতে খাদ্য অধিদপ্তরের ৪জন ওএমএস এর ডিলার আছে।
জানা গেছে, বদলগাছী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ফ্যামেলি কার্ডধারীর সংখ্যা মোট ১১৭৮৮ জন। এরা প্রতি মাসে খাদ্য সহায়তা হিসেবে টিসিবির পণ্যের সাথে খাদ্য অধিদপ্তরের ওএমএসের ৫ কেজি করে চাল পান।
যা প্রতি মাসে জনপ্রতি ৩০ টাকা দরে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে (১১৭৮৮জন) ৫ কেজি করে মোট ৫৮৯৪০কেজি চাল ওএমএস ডিলারের সহযোগিতায় টিসিবি ডিলারগণ সেই চাল বিক্রয় করেন। খোলা বাজারে খাদ্যশষ্য বিক্রি করলে প্রতি কেজি চাল থেকে ওএমএস ডিলারগণ ২ টাকা করে কমিশন এবং টিসিবি ডিলারগণ ২ টাকা কমিশন পান। এতে প্রতি মাসে ১ লাখ ১৭ হাজার ৮ শত ৮০ টাকা কমিশন পান উপজেলার ওএমএস ডিলাররা এবং সমপরিমাণ কমিশন পান উপজেলার টিসিবি ডিলারগণ।
কিন্তু বিগত আগষ্ট মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৫মাসে ওএমএস ডিলারদের সবাইকে না জানিয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাবরিন মোস্তারী যোগশাজসে ও পূর্বের ডিলার হাসানুজ্জামানের সহযোগিতায় খাদ্যশস্য চাল উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে ডিলারদের নামে টাকা জমা করে। এবং ডিওতে প্রতিমাসে দুই/এক জন ডিলারের স্বাক্ষর না নিয়ে নিজেরা জাল স্বাক্ষর করে খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তলোন করে। প্রতিটি ওএমএস ডিলারদেরকে নাম মাত্র ৪ হাজার টাকা করে প্রদান করেন। এবং তারা জনেও না তাঁদের নামে কতো মেঃ টঃ চাল উত্তলোন হয়েছে। আর এসব চাল খাদ্য গুদামে বসে থেকে টিসিবির ডিলারগণকে ফোন দিয়ে ডেকে এনে চাল প্রদান করেছেন।
ওএমএস এর ডিলার আনোয়ার হোসেন টগর অভিযোগ করে বলেন, ৫ আগস্টের পর টিসিবির চাল উত্তলোনের জন্য আমার নামে কে ব্যাংকে টাকা জমা করে তা আমি জানিনা। আমার নামে কতো মেঃ টঃ চাল উত্তলোন হয়েছে সেটিও আমি বলতে পারবো না। গত আগস্ট থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত আমি প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা করে পেয়েছি। ডিসেম্বর মাসে আমাকে আড়াই হাজার টাকা দিয়েছে। আপনাকে কে এই টাকা দিয়েছে বললে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসানুজ্জামন আমাকে এই সব টাকা দিয়েছে। তাহলে চাল উত্তলোনের ডিওতে কি আপনি স্বাক্ষর করেন নি বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, যে সময় চাল উঠেছে সেই সময় আমি ডিওতে স্বাক্ষর করিনি পরে আমার কাছে কিছু কাগজ এনে ছিলো তখন নভেম্বর মাস পর্যন্ত আমি স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু ডিসেম্বর মাসের চাল উত্তলোনে আমি কোন ডিওতে ও খাদ্যগুদামের কাগজ পত্রে সাক্ষর করিনি।
তিনি আরো বলেন, পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি আমাদের নামে প্রতি মাসে ৫৮৯৪০কেজি চাল উত্তলোন হয়েছে। সেখানে আমরা লভ্যাংশ পাই ১১৭৮৮০ টাকা। প্রতি মাসে প্রতিজন ডিলাররা লাভের ভাগ পাবো ২৯৪৭০ টাকা করে ৫ মাসে মোট ১ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫০ টাকা। কিন্তু আমি ৫ মাসে টাকা পেয়েছি ১৮৫০০ টাকা। তাহলে সব ডিলারদের বাঁকী লাভের প্রায় ৫ লক্ষ টাকা গেলো কোথায় বলে অপর প্রশ্নে তিনি বলেন, সব খদ্য নিয়ন্ত্রক বলতে পারবেন।
এস এম মনিরুল ইসলাম সাজু নামের আরেক ওএমএস ডিলারের সাথে কথা বললে তিনিও একই সুরে বলেন ৫ আগস্টের পর আমাকে প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা করে দিয়েছে। সরকার পতনের পর আপনিতো দেশেই ছিলেন না তাহলে আপনার নামে চাল উত্তলোনের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা করলো কে আবার ডিওতে সাক্ষর করলো কে বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, চাল উত্তলোনের সময় আমি ডিও ও খাদ্য গুদামের কোন কাগজে স্বাক্ষর করিনি। কিন্তু আমি দেশে আসার পর কয়েকটি কাগজে আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছে। তাহলে আপনার নামে প্রতি মাসে কতো মেঃ টঃ চাল উত্তলোন হয়েছে বলে অপর প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কতো মেঃ টঃ চাল আমার নামে উঠেছে তাও আমি জানি না। এসব বিষয়ে হাসানুজ্জামান বলেন, আমি এ বিষয়ে জানিনা। খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস ভালো বলতে পারবে।
চাল উত্তলোনের সময় ওএমএস এর ডিলারেরা কি আপনাদের কাগজ পত্রে স্বাক্ষর করে ছিলো বলে জানতে চাইলে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল হাসন বলেন, আমি ডিও তে যে স্বাক্ষর পেয়েছি সেই স্বাক্ষর মিল করে নিয়েই চাল দিয়েছি। ডিলারের অভিযোগ যে তারা চাল উত্তলোনের সময় খাদ্য গুদামে আসেনি আবার স্বাক্ষরও করেননি বলে প্রশ্ন করলে তিনি আবারো একই কথা বলেন।
এ সব বিষয় নিয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাবরিন মোস্তারীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ওএমএসের ডিলারেরা চাল উত্তলোনের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা করেছে। তাই আমি ডিও দিয়েছি। ২/১ জন ডিলারা বলেছে ৫ ই আগষ্টের পর তারা ব্যাংকে চাল উত্তলোনের জন্য কোন টাকা জমা করেনি আবার ডিও নেওয়ার দিন ডিওতে স্বাক্ষরও করেনি তাহলে স্বাক্ষর করলো কে বলে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এরিয়ে যান। গত ৫ মাসে ওএমএস এর চালের লভ্যাংশ হিসাবে নাম মাত্র টাকা ডিলার দের দেওয়া হয়েছে কেন বলে অপর পশ্নের জবাবে তিনি এই প্রতিনিধিকে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফরহাদ খন্দকারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, আমি খোঁজ-খবর নিয়ে বিষয়টি দেখছি।
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইসরাত জাহান ছনি বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি আমি এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আপনার মতামত লিখুন :