‘বন্ধ হচ্ছে বিমানের সিলেট-ম্যানচেস্টার ফ্লাইট’ এমন খবরে যখন সিলেট-লন্ডন তোলপাড়, হতাশা বিরাজ করছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ঠিক তখনই আশার খবর শোনাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। জানানো হলো, বন্ধ হচ্ছে না সিলেট-ম্যানচেস্টার ফ্লাইট।
বন্ধের যে খবর শোনা গেছে, সেটি সঠিক ছিল না উল্লেখ করে বিমান জানিয়েছে, শুধু হজ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে অনিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ২৭ এপ্রিল থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত এই রুটে সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। তবে এ সময়ে সিলেট-ঢাকা হয়ে ম্যানচেস্টার রুটে ফ্লাইট চালু রাখা হবে। হজ ফ্লাইট শেষে ১১ জুলাই থেকে আবার সরাসরি সিলেট-ম্যানচেস্টার রুট চালু করা হবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সিলেটের জেলা ব্যবস্থাপক শাহনেওয়াজ মজুমদার বলেন, আসলে কখনোই রুট বন্ধের চিন্তা করা হয়নি। আমাদের এয়ারবাস সংকটের কারণে হজ ফ্লাইট পরিচালনার স্বার্থে কিছুদিন বিকল্প উপায় রেখেই সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এর বেশি কিছু নয়।
এদিকে বিমানের সিলেট-ম্যানচেস্টার ফ্লাইট বন্ধ হচ্ছে না এমন খবর জানাজানি হলে সিলেটে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়। লন্ডনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সন্তোষ প্রকাশ করেন।
ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (অ্যাটাব) সিলেট জেলা শাখার সভাপতি দেওয়ান রুশো চৌধুরী বলেন, শিডিউলে বিমানের টিকিট বিপত্তির কারণে একটি ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। রুট বন্ধ হয়ে যাচ্ছেÑ এমন খবরে বিমানের সঙ্গে কথা হলে তারা সব সময়ই আমাদের জানিয়েছিলেন, এমন সিদ্ধান্ত তাদের হয়নি। বিমান গত সপ্তাহে চূড়ান্তভাবে জানিয়েছে, সিলেট-ম্যানচেস্টার রুট বন্ধ হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিভিল অ্যাভিয়েশনের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের তহবিলে ডলার সংকট। এদিকে হজ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে নিয়মিত শিডিউলের বাইরে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে। এ অবস্থায় নতুন একটি নিমান ভাড়া করে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করতে রাজি নয় সরকার। যেসব দেশে একাধিক ফ্লাইট আছে, সেখান থেকে এনে নিজস্ব বহরের উড়োজাহাজ দিয়ে হজ মৌসুম পার করার সিদ্ধান্ত থেকে সিলেট-ম্যানচেস্টার রুট আপদকালীন সময়ের জন্য বন্ধ করার পথে যায় সিভিল অ্যাভিয়েশন।
সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে খবর চাওড় হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে তাদের সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করে দিচ্ছে। সিলেট থেকে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার শহরে বিমান সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করত। পরবর্তীতে কোনো ঘোষণা ছাড়াই একটি কমিয়ে দুটিতে নামিয়ে আনলে সন্দেহের ডালপালা মেলতে শুরু করে। এ নিয়ে বিমানও তাদের অবস্থান খোলাসা করেনি। এ অবস্থায় গেল বছরের শেষদিকে অনলাইনে ১ এপ্রিলের পর থেকে বিমান টিকিট বুকিং নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এটিই প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সন্দেহের বীজ অঙ্কুরিত করে। পরবর্তীতে জানাজানি হয়ে যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সিলেট-ম্যানচেস্টার রুট বন্ধ করে দিতেই অনলাইনে বুকিং নিচ্ছে না।
এ সময় লন্ডন ও সিলেটে শুরু হয় আন্দোলন। সিলেট ও ম্যানচেস্টারে প্রবাসী এবং সিলেটিরা স্মারকলিপি প্রদান করেন কর্তৃপক্ষ বরাবর। সিলেট আসে লন্ডন কমিউনিটির একটি প্রতিনিধিদল। তারা ঘন ঘন বসতে থাকেন বিমানের কর্তা ও সিলেটের শীর্ষ রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে। প্রবাসীদের পক্ষ থেকে রুট বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা বরদাস্ত করা হবে না জানিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়। প্রবাসীদের কথা বিবেচনা করে তাদের সঙ্গে যোগ দেন সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতারা। সাবেক মেয়র, সিলেটের জনপ্রিয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরীও অবস্থান নেন প্রবাসীদের সঙ্গে। গণমাধ্যমে বিষয়টি আলোচনায় এলে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রভাব ফেলে।
প্রবাসীদের হয়ে অ্যাটাবও মাঠে নামে। তারাও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক স্মারকলিপি প্রদান করে। জানিয়ে দেয়, এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে যেন তারা সেখান থেকে ফিরে আসে। সূত্র মতে, বিমান প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রুট বন্ধ করার। কিন্তু পরবর্তীতে চারদিক থেকে সমালোচনা, আন্দোলন ও চাপ সৃষ্টি হলে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি সেখান থেকে ফিরে আসে। সিদ্ধান্ত হয়, হজ মৌসুমে হজের অনিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা শেষে সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে আবার সরাসরি ফ্লাইট চালু করা হবে। হজ মৌসুমে শুধু সরাসরি রুট বন্ধ থাকবে। বিমান জানায়, সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে তিনটি ফ্লাইটের মধ্যে এখন দুটি চালু রয়েছে। তবে চিন্তাভাবনা আছে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর। হজের পরে সেটি বিবেচনায় এনে অন্তত আরও একটি বাড়ানো হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :