ঢাকা বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫

নওগাঁয় ডাক্তারের দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ সেবা প্রত্যাশীরা

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০৪:২৪ পিএম

নওগাঁয় ডাক্তারের দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ সেবা প্রত্যাশীরা

ডাক্তার এএসএম রেজাউল মাহমুদ । ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও ৪০০ বছর আগে গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস চিকিৎসা পেশায় নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধের শপথ লিখে গিয়েছিলেন। সেটার আধুনিক সংস্করণ আজও চালু আছে। সেখানে বলা আছে, হৃদ্যতা, সহমর্মিতা দিয়ে রোগীদের কথা শুনে তাদের সমস্যা উপলব্ধি করা শল্য চিকিৎসকের ছুরি বা রসায়নবিদের ওষুধের চেয়ে বেশি কার্যকর। চিকিৎসা শিক্ষায় সেই শপথ পাঠ করানোর রেওয়াজ বাংলাদেশেও রয়েছে।

তবে পেশায় ঢুকে তা মনে রাখেন-এমন ডাক্তারের দেখা এ দেশে খুব কম রোগীই পায়। ডাক্তারের মমত্ববোধে মুগ্ধ হওয়ার বদলে দুর্ব্যবহারে ভীত হওয়ার অভিজ্ঞতাই রোগীদের বেশি। এ দেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ডাক্তারদের দুর্ব্যবহারের মুখে রোগীদের অসহায় হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। শুধু এই কারণেই রোগীদের চিকিৎসা নিতে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার নজিরও দিন দিন বাড়ছে। ঠিক তেমনই একজন ডাক্তার নওগাঁ সদর হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত রেডিওলজিষ্ট ও শহরের গোডাউন মোড় এলাকায় অবস্থিত সাফেঈন ডায়াগষ্টিক সেন্টার এর মালিক ডাক্তার এএসএম রেজাউল মাহমুদ। রোগিদের সাথে দুর্ব্যবহার, অশালীন আচরণ ও গালিগালাজসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। একজন দুজন নয় এই ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন অন্ত নেই।

জান্নাত ওরফে নাইমা নামের একজন সেবা প্রত্যাশী বলেন, সাফেঈন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আমি বাজরে ব্যবহারের শিকার হয়েছি। আমি গত বৃহস্পতিবার আল্ট্রাসনোগ্রাফি রুম থেকে বের হয়ে অনেক কান্না করছি। এত খারাপ ব্যবহার কোনো শিক্ষিত মানুষ করতে পারে? সে নিজেকে ডাক্তার বলে দাবি করে কিন্তু ব্যাবহার এতো নিম্ন। সাইকো টাইপের, রোগির একটু শোয়ার ভুল বা একটু নড়া চড়া করলেই খারাপ ব্যাবহার শুরু করে। এক কথা রিপিট ভাবে বলে, সে একটা পুরুষ মানুষ মাঝে কোনো পর্দাও দেওয়া নেই, আবার মাঝে মাঝে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে করতে হাতও লাগতেছিল। আমি শুধু বলছিলাম আমার একটা প্রশ্ন আছে, কি প্রশ্ন না শুনে কুকুরের মতো ব্যাহার করলো। আমি এমনিতেই অনেক টেনশনে ছিলাম, এতো অপমান উপহাস। এই ডাক্তারকে বয়কট করা উচিত।

প্রবির পাল নামের শহরের একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, উনি চেক আপ ভাল করে এটা ঠিক। কিন্তু তার ব্যবহার খুবই খারাপ। নিজেই নিজের ঢোল পিটায়, আর তার কোন ইক্যুইপমেন্টে হাত পড়লে সেটার দাম শুনায়। তার কক্ষে মোবাইল সাইলেন্ট করে ঢুকলেও বকাবকি করে। নির্লজ্জ একজন লোক তিনি।

সোহেল আলম নামের সেবা প্রত্যাশী বলেন, শুধু অহংকারী না প্রচন্ড ধরনের একজন বেয়াদব লোক। তার ছেলে কোথায় চাকরি করে তার মেশিনের দাম কত। তুমি কি আমার ছেলের মত হতে পারবে গোল্ডের কয়েন দিয়ে আমি মুখ দেখেছি কেউ কল্পনা করতে পারবে এসব কথা বলে অহংকারের শেষ নেই।

একে সাজু নামের স্থানীয় একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ডাক্তার এএসএম রেজাউল মাহমুদ যে ফাজিল তার প্রমাণ আমি নিজেও। বেশ কিছুদিন আগে আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে আমি ছোট বোন বলে পরিচয় দেওয়াই সে অযথা আমার উপর ক্ষেপে যান। সেই সাথে বাজে ব্যবহার করেন। সফিউল আজম টুটুল, আবুল বাসার চঞ্চল, মেহেদী হাসান ডালিমস সহ আরও বেশ কয়েকজন বলেন, ডাক্তার রেজাউল মাহমুদ এর ওখানে টেষ্ট করাতে সবাই যাই তার কারন টেস্ট মোটামুটি ভালো করেন। তবে তার আত্নঅংকার ও ব্যবহার খুবই খারাপ। রোগির সাথে ভালো ব্যবহার ও উৎসাহমূলক কথা বললে রোগি আরও সুস্থতার দিকে ধাবিত হবে। কিন্তু তিনি খুবই উগ্র মেজাজের একজন ডাক্তার। তাকে বয়কট করা উচিত সবার।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে অভিযুক্ত ডাক্তার এএসএম রেজাউল মাহমুদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো পুরোটা সঠিক নয়। অনেক রোগির টেষ্ট করার সময় ভুল ভাবে শুয়ে পড়ে আবার কেউ কেউ ইক্যুইপমেন্টে হাত দেয় যার কারনে একটু কথা বলতে হয়। আবার আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার সময় অনেক রোগি শ্বাস নিয়ে ছেড়ে দেয় যার কারনে একটু জোড়ে কথা বলতে হয়। আর আমার আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনের দাম প্রায় ৮০ লাখ টাকা।এত টাকা দিয়ে মেশিন কিনেছি এটাতো বুঝতে হবে নাকি। যা নওগাঁ শহরে অন্যকোন ক্লিনিকে এত মানসম্মত ও দাবি মেশিন নাই। আমার ভালো দিকও আছে মানসম্মত সেবা দেই। অনেক রোগিদের ফ্রি সেবাও দিয়ে থাকি। তারপরও যদি ভুল করে থাকি তার জন্য আমি অনুতপ্ত।

অভিযোগের বিষয়ে কথা হলে নওগাঁর সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, সকল ডাক্তারের উচিত রোগীর সাথে সুন্দর ও নমনীয় ব্যবহার করা। ডাক্তার এএসএম রেজাউল মাহমুদ এর বিষয়ে যদি কেউ অভিযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আরবি/জেডআর

Link copied!