চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে আগুনে পুড়ছে রাবার বাগান। আগুনের অতিরিক্ত তাপে উৎপাদন ক্ষমতা হারাচ্ছে রাবার গাছ। মরছে নানা প্রজাতির কীটপতঙ্গ। এতে করে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
শনিবার সরেজমিনে উপজেলার দাঁতমারা রাবার বাগান এলাকায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এসময় আবুল কালাম নামে এক টেপার আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও আগুনের তাপ এবং লেলিহান শিখা অতিরিক্ত হওয়ায় তাঁর একার পক্ষে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছিলনা।
বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের আওতায় এশিয়ার বৃহত্তম বাগান হচ্ছে দাঁতমারা রাবার বাগান। দাঁতমারা রাবার বাগানের ইসলামপুর সেলফি রোড এলাকার দক্ষিণ পাশ্বে সারি সারি আগুনে পুড়ছে ঝরে পড়া রাবার গাছের পাতা। রাবার বাগান কর্তৃপক্ষের ও দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে বিপন্ন হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও কীটপতঙ্গ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রাবার বাগান এলাকায় বিভিন্ন ধরনের পাখি, বিরল প্রজাতির কাঠবিড়ালি, বানর, খরগোশ, বন মোরগ, বেজি, খেকশিয়াল, টিয়া, ময়না, ঘুঘু, শালিক, বক, বাবুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর বসবাস। রাবার বাগান কর্তৃপক্ষ প্রতিবছরই বাগান সম্প্রসারণ করতে এবং টিলা পরিষ্কার করতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আবার এক শ্রেণির স্থানীয় দুর্বৃত্ত এসে পাতার স্তূপে আগুন লাগায়। আগুনে বনে থাকা পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ পুড়ে যায়। এ ছাড়া মারা পড়ে মাটির কেঁচো ও অণুজীব। নষ্ট হয়ে যায় পশুপাখির আবাসস্থল। স্থায়ী বাসস্থান হারিয়ে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে এসেও হত্যার শিকার হয়। প্রতি বছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে এ আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
রাবার বাগানে কর্মরত একাধিক টেপার জানান, প্রতি বছর জুন জুলাই মাসে বাগানের জঙ্গল পরিস্কার করার জন্য প্রতি একরে ৩২০ টাকা করে বরাদ্দ দেয় বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন। কিন্তু বাগানের শ্রমিক নেতাসহ কর্মকর্তারা এসব বরাদ্দ নিজেরা বাগ বাটোয়ারা লুটেপুটে খায়। এরপর স্বেচ্ছাশ্রমে জঙ্গল পরিস্কার করার জন্য টেপিং শ্রমিকদেরকে চাপ প্রয়োগ করে।
টেপিং শ্রমিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কর্তৃপক্ষের চাপে পড়ে কোন শ্রমিক জঙ্গল কাটলেও বেশিরভাগ জঙ্গল রয়ে যায়। এরপর শুষ্ক মৌসুমে (ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি) বাগানের ব্লক গুলোতে আগুন লাগিয়ে পরিস্কার করা হয়। এতে করে আগুনের অতিরিক্ত তাপে উৎপাদন ক্ষমতা হারাচ্ছে রাবার গাছ। এবং বিপন্ন হচ্ছে নানা প্রজাতির কীট পতঙ্গের।
সাম্প্রতিক সময়ে দাঁতমারা রাবার বাগান এলাকায় দুটি সেলফি রোডে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভ্রমন পিপাসু শত শত পর্যটকরা আসেন। এ ধরনের আগুনের ঘটনায় প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন পর্যটকরাও।
দাঁতমারা রাবার বাগানের ডিজিএম রুহুল আমিন বলেন, `অনেক স্থানে লাইন পরিষ্কার করতে আমরা নিজেরাই আগুন লাগাই। আবার আমরাই প্রতিরোধ করি। বন্যপ্রাণী কীটপতঙ্গ নষ্ট হবার বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এটি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।`
আপনার মতামত লিখুন :