রাজশাহীতে বিএনপি নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে দলীয় কোন্দল, গ্রুপিংয়ের ব্যস্ত। এতে দলীয় নেতাকর্মীরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। দলীয় কোন্দল, আধিপত্য বিস্তার, দখলদারি নিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা কোন দিকে যাবেন তা ঠিক করতে পারছেন না।
দলের জন্য সুসময় এলেও নিজেদের অধিকার নিয়েই ব্যস্ত তারা। এতে বেশ কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত রাজশাহী মহানগর ও জেলার নেতাকর্মীরা। তাদের কোনো অফিস খুঁজে পাচ্ছেন না। নগরীর মালোপাড়ায় পূর্বে যে ভবনে ভাড়ায় ছিল, সেই পুরোনো ভবন ভেঙে ফেলেছেন তার মালিক। তারপর গত ছয় মাসেও নতুন কোনো কার্যালয় নেয়নি বিএনপি।
কার্যালয় না নেওয়ার পেছনেও রয়েছে অন্তর্দ্বন্দ্ব। কে কোন নেতার সঙ্গে ভিড়বেন তা নিয়েও চলছে হতাশা। এতে গ্রুপের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের দাপ্তরিক কোনো কাজের জন্য ঘুরে বেড়াতে হয় নেতাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে অথবা বাসায়।
রাজশাহী জেলা এবং মহানগর বিএনপির ভেতরে বেশ কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে আগে থেকেই। ৫ আগস্টের পর এটা প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। দলটির ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এতে কর্মীদের দলছুট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। একেকজন নেতা একেকটা অফিসে বসছেন।
বর্তমানে পূর্বের দলীয় অফিসের পাশেই রয়েছে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদার চেম্বার। সেখানে তার অনুসারীরা আসা-যাওয়া করেন। অন্যদিকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশা এবং সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুনের রয়েছে আলাদা আলাদা চেম্বার। সেখানে তাদের নিজ নিজ অনুসারীরা আসা-যাওয়া করেন।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি ছাড়াও রয়েছে দুটি গ্রুপ। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনু জাতীয় নেতা হলেও রাজশাহীতে তার একটি বলয় রয়েছে। এখন তিনি রাজশাহীর চলমান রাজনীতির বাইরে অনেকটা।
তার অনুসারীরা অনেকেই বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে নেই। কিছুদিন ধরে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশা এবং সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুনের দেওয়া ওয়ার্ড কমিটির বিপরীতে দেওয়া হয় নতুন কমিটি।
এ ছাড়া বিএনপির নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনের রয়েছে আলাদা গ্রুপ।
একই আসনে টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছেন সাবেক ছাত্রনেতা রাহেনুল আলম। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নিজস্ব গ্রুপ। তিনি সামনের মেয়র নির্বাচনের জন্য মাঠ গোছাচ্ছেন।
রাজশাহী মহানগরে তরুণদের নেতৃত্বে আরও একটি সক্রিয় গ্রুপ রয়েছে। সেটার নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি, নগর যুবদলের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন। তিনি স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় যুবদলের মেইনটেইন করেন।
রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ ও সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকারের আলাদা কোনো গ্রুপ না থাকলেও এই দুই নেতা কেন্দ্রের দু’ট গ্রুপে আলাদা গুরুত্ব বহন করেন।
এ ছাড়া জেলায় আলাদা আরেকটি গ্রুপ আছে জেলার সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা মামুনের নেতৃত্বে। বাঘা-চারঘাট আসনের জন্য নির্বাচনে আবু সাইদ চাঁদের সঙ্গে প্রতিযোগী সাবেক ছাত্রদল নেতা ও যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল।
এদিকে রাজশাহী-৪ বাগমারা আসন নিয়েই জেলা বিএনপির মধ্যে গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এখানে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ডি এম জিয়া থানা বিএনপির সদস্যসচিব কামাল হোসেনের সঙ্গে প্রতিযোগী হয়ে উঠেছেন তরুণ নেতৃত্ব আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রগামী জেলা যুবদলের সদস্যসচিব রেজাউল করিম টুটুল।
এ বিষয়ে মিজানুর রহমান মিনু বলেন, আমাদের বড় দল, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে, ছোটখাটো সমস্যা থাকবে, রাজশাহীতেও কিছুটা আছে, সেগুলো আমরা কেন্দ্রকে জানিয়েছি। আশা করা যায়, দ্রুতই সেটা সমাধান হয়ে যাবে।
তারেক রহমান ম্যাডামের চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবেন ইনশাআল্লাহ্। তিনি দেশে ফিরলে দলীয় শৃঙ্খলা দ্রুতই ফিরবে।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুন দলীয় কোন্দলকে অস্বীকার করে বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি, এর থেকে বেশি কিছু বলতে চাই না।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহসম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন বলেন, বর্তমানে যারা রাজশাহী বিএনপির নেতৃত্বে রয়েছেন, তারা যেকোনো কারণেই ব্যর্থ।
শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তাদের সক্ষমতা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের প্রশ্ন রয়েছে। এটা নিয়ে কেন্দ্রকে নতুনভাবে ভাবা দরকার। নিজের মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :