ময়মনসিংহে ট্রেন স্টেশনে রেখে পালিয়েছেন চালক। এতে বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা স্টেশন মাস্টার নাজমুল হক খানকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এদিকে, টিকিট করেও গন্তব্যে যেতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা। টিকিটের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল সোয়া ১০ টায় ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে ক্ষুব্দ যাত্রীরা এমন ঘটনা ঘটনায়। এর আগে সোমবার মধ্যরাত থেকে সারাদেশের ন্যায় ময়মনসিংহ অঞ্চলেও ২৮ জোড়া ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন কয়েক হাজার যাত্রী।
সুত্র জানায়, মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহাল না করায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ (লোকোমাস্টার, গার্ড, টিটিই)।
সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ক্ষুব্দ ট্রেন যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ে ট্রেন চালক খোঁজতে থাকেন। ট্রেন চালককে খোঁজে না পেয়ে স্টেশন মাস্টার নাজমুল হক খানকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ময়মনসিংহ থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেনে যাতায়াত করেন প্রায় ৬ হাজার মানুষ। বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের কর্মবিরতির কারণে ট্রেন চলাচল না করায় ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন এ অঞ্চলের যাত্রীরা। টিকিট করেও গন্তব্যে যেতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা। যথাসময়ে টিকিটের টাকা পেতেও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে তাদের।
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যাত্রী আশরাফ আলী বলেন, ৯ দিন আগে হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের চারটি টিকিট অনলাইনে করেছি, স্টেশনে এসে শুনি ট্রেন চলবে না। এখন টিকিটের টাকাও ফেরত পাচ্ছি না। কর্তৃপক্ষ বলছেন, তিনদিনের মধ্যে টাকা পাব। এর কোন মানে হয় না। দাবি আদায়ের আন্দোলনে আমরা কেন ভুগছি।
সোহেল খান নামে আরেক যাত্রী বলেন, ঢাকা যাব তাই পূর্বেই কাউন্টার থেকে টিকিট খেটেছি, এখন বলছে আন্দোলনের জন্য ট্রেন বন্ধ। টিকিটের টাকাও ১০টার পড়ে কাউন্টার থেকে ফেরত দিবে। যদিও জরুরি কাজ ছিল ঢাকায়, এখন তা আর হল না।
কর্মবিরতিতে থাকা রেলওয়ে রানিং স্টাফ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ময়মনসিংহ কেওয়াটখালী শাখার অতিরিক্ত সম্পাদক মো. হানিফ বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোন ট্রেন চলবে না। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। যদিও আমাদের এই আন্দোলন পূর্ব ঘোষিত। সরকার আমাদের দাবি মেনে নিলেই কর্মে ফিরব।
সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তিতে দুঃখ প্রকাশ করে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নাজমুল হক খান বলেন, আন্দোলন মানেই ভোগান্তি যা স্টেশনে আসা যাত্রীদের দেখলেই বুঝা যায়। এই অঞ্চলে ২৮ জোড়া ট্রেনে প্রায় ৬ হাজার যাত্রী চলাচল করে। ট্রেন বন্ধ থাকায় সকলেই ভোগান্তিতে পড়েছে। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তাও বলতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, যারা পূর্বে অনলাইনে টিকিট করেছে তারা তিনদিনের মধ্যে টাকা ফেরত পাবে, আর কাউন্টার থেকে যারা টিকিট খেটেছে তারা সকাল সাড়ে আটটার পর থেকে টাকা ফেরত পাচ্ছেন।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকতার হোসেন বলেন, সকাল সোয়া ১০ টার দিকে মোহনগঞ্জ হাওর এক্সপ্রেস স্টেশনে পৌছায়। ট্রেন স্টেশনে পৌছানোর সাথে সাথে চালক পালিয়ে যায়। পরে যাত্রীরা ট্রেন চালককে খোঁজতে থাকেন। তবে, যাত্রীরা চালককে খোঁজে না পেয়ে স্টেশন মাস্টারকে অবরোদ্ধ করে যাত্রীরা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্টেশনে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ট্রেন বন্ধের ক্ষোভে যাত্রী কর্তৃপক্ষের মধ্যে যেন কোন ধরনের বাদানুবাদ না তা খেয়াল রাখা হচ্ছে। যাত্রীরা সহজে যেন টিকিটের টাকা ফেরত পান সেই সহযোগিতা করছি।
এরআগে গত ২ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাইলেজের দাবিতে সারাদেশের মত ময়মনসিংহেও কর্মবিরতি হয়। তখন তিনটি রেলপথে ৮ জোড়া এবং ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথে ভাওয়াল মেইল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
আপনার মতামত লিখুন :