মানিকগঞ্জের সিংগাইরে এলজিউডি রাস্তার পাশে জনবসতি এলাকায় তিন ফসলি উর্বর জমিতে যত্রতত্র গড়ে ওঠেছে অসংখ্য ইটের ভাটা। প্রশাসনের তৎপরতা ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নজরদারির অভাবে প্রতি বছরই এসব ভাটায় গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি। অন্যদিকে তিন ফসলি জমিকে এক ফসলি দেখিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রদানে সচেতন মহলে নেতিবাচক প্রশ্ন ওঠেছে। সিংগাইরের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমিতে মাটি কাটা বন্ধে অসংখ্য লিখিত অভিযোগ ও মানববন্ধন হলেও রহস্যজনক কারণে বন্ধ হচ্ছে মাটি কাটা ও অবৈধ ইটের ভাটা। অপরদিকে ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়াতে স্থানীয়দের বিভিন্ন ভয়ভিতি দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছে তাদের ইটভাটা কর্মযজ্ঞ এমনটাই অভিযোগ করেন ভুক্তোভুগী ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা।
জমির উপরিভাগের ২০ সে.মি. পর্যন্ত ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই টপ সয়েল কেটে এ এলাকার উর্বর কৃষি জমি নষ্ট করে চলছে ভাটা মালিকদের কোটি কোটি টাকার কামানোর মহোৎসব। আর তাতে প্রত্যেক বছরই কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ।
সরেজমিনে ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, সিংগাইর উপজেলার বলধারা, খোলাপাড়া, পারিল, গোলাইডাঙ্গা, সায়েস্তা, হাতনি-জামির্ত্তা, মানিকনগর, মাধবপুর-রিফাইতপুর, চক-চান্দহর, সোনাট্যাংড়া, বাঘুলি, ইসলামপুর-আটিপাড়া এলাকায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি ইটের ভাটা। বেশিরভাগ ইটের ভাটা পরিবেশ আইন অমান্য করে গড়ে ওঠেছে আবাসিক এলাকায় ও তিন ফসলি জমির মাঠকে দখল করে। এসব ভাটায় প্রতি নিয়ত পুড়ছে কাঠ ও কয়লা। আর এ থেকে উৎপন্ন কার্বনডাই মনোঅক্সাইড বাতাসে মিশে চরমভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এর প্রভাবে শিশুসহ বয়োবৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিল-কঠিন রোগে।
বাঘুলি গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী, সোনাট্যাংড়ার অলি মিয়া, আজিমপুরের নজরুল ইসলাম, চর আজিমপুরের এমদাদ, জইল্যার শাকিব, মাধবপুরের মশিউর রহমান আলাল, আতিকুর রহমান হেলাল, চাপরাইলের বিশিষ্ট লেখক ও চিন্তাবিদ ইঞ্জি. আবু সায়েমসহ অনেকেই বলেন, সিংগাইরে ইটের ভাটাগুলো এখন আমাদের চাষীদের দু:খের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। জমির টপ সয়েল চলে যাচ্ছে ভাটায়। এতে উর্বর জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়াতে বাধ্য হয়ে নাম মাত্র দামে ভাটা মালিকদের কাছে বিক্রি করছে জমির মালিকরা। ভাটা মালিকরা টার্গেট করে একটি চকের কিছু জমি চড়া দামে কিনে খাল তৈরী করে চারপাশের জমির মালিকদের জিম্মি করে নামমাত্র দামে তাদের টপ সয়েল কিনে সেখানেও পুকুর ডোবা বানিয়ে ফেলছে দেদারছে। আর এসব মাটি কাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ ভেকু। অতপর সে মাটি পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে চার চাকা বিশিষ্ট অনুমোদনহীন ড্রামট্রাক ও মাহিন্দ্র। সচতেন মহল মনে করছেন, এভাবে হতে থাকলে এক সময় নিজেদের খাবারের জন্য যে পরিমাণ খাদ্য প্রয়োজন তা অচিরেই সংকট দেখা দিতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ ইউসুফ আলী সাংবাদিক পরিচয়ে বক্তব্য চাইলে তিনি অনলাইনে মিটিংয়ে আছেন এবং পরে কথা বলবেন বলে লাইনটি কেটে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মনোয়ার হোসেন মোল্লা দৈনিক রূপালি বাংলাদেশকে বলেন, আসলে আমাদের তো লোকবল সংকট। তারপরও নিয়মিত সারা জেলা জুড়ে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। তিন ফসলি জমিকে এক ফসলি দেখিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অসৎ কর্মকার্তদের ছাড়পত্র প্রদানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :