ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা। জেলা সদর থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রতিদিন গড়ে অন্তত প্রায় পাঁচশত রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু ডাক্তার সংকটে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় গারো পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত সাধারণ খেটে মানুষদের। চিকিৎসক সংকটে হাসপাতালটি যেন নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
হাসপাতালে ডাক্তারের পদ রয়েছে ২৮ জন। বর্তমানে স্বামী স্ত্রী দুজন মাসুদ রানা ও নুসরাত জাহান অসিন কর্মরত আছেন। একজন জরুরী বিভাগে সেবা দেন বাকী একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে প্রায় পাঁচশত রোগীর চিকিৎসা। প্রতিদিন সকালে আউটডোরে এক জন ডাক্তারের কক্ষে ভীড় করেন সাধারণ রোগীরা।বাকী কক্ষগুলো তালাবদ্ধ থাকে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ রোগী। ধোবাউড়া হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে কর্মরত থেকে সাতজন মেডিকেল অফিসার বিশেষ কারণ দেখিয়ে অন্য হাসপাতালে ডেপুটেশনে রয়েছেন।
ডা. তন্বী দত্ত, হালুয়াঘাট হাসপাতাল, ডা.খাদিজা বেগম, কুর্মিটোলা হাসপাতাল, ডা. প্রপ্তি প্যাট্রিসিয়া হাগিদক, ডিজি অফিস,ডা. শফিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহ অফিসে,ডা. আহমেদুল কবির, ঢাকা মেডিকেলে, নাহিদা নাজনীন নিপা, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ,ডা. রাজশ্রী দেবনাথ, মৈত্রি হাসপাতালে সংযুক্ত রয়েছেন। এই অবস্থায় ভেঙ্গে পড়েছে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা। একযুগ আগে ৩০ শয্যা থেকে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। জরুরি মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। ডাক্তার না থাকায় ইনডোর ও আউটডোর সেবা চলে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ও সাব-সেন্টারের চিকিৎসক দিয়ে।ফলে কাঙিাখত সেবা পাচ্ছেনা এই জনপদের মানুষ।পঞ্চাশ শয্যার জন্য আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হলেও নেই কোন কার্যক্রম।
মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় সরেজমিনে হাসপাতাল আউটডোরে গিয়ে দেখা যায়, ডাক্তারের কক্ষ খোলা কিন্তু ডাক্তার নেই। মেডিকেল অফিসার মাসুদ রানা ও তার স্ত্রী নুসরাত জাহান অসিন রোগীদের ছাড়পত্র লিখছেন। এদিকে রোগী ভীড় করছেন কক্ষের সামনে। কোন মেডিকেল অফিসার না থাকায় কোন রকম সেবা দিচ্ছেন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার হাবিব ও দিপেষ বিশ্বাস। দুজন রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা ধোবাউড়া গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, এক ঘন্টা ধরে দাড়িয়ে আছি ডাক্তার দেখাতে পারছিনা।
সাদোয়ার কান্দা গ্রামের সাইদুল ইসলাম বলেন, এই হাসপাতালের সেবার উন্নতি কোনদিন হবেনা, অনেকক্ষণ ধরে আসছি কিন্তু ডাক্তারের কোন খবর নেই, এই হাসপাতালে মানুষ এসে কি করবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাস বলেন, বড় সমস্যা হচ্ছে সাতজন ডাক্তার ডেপুটেশানে রয়েছে অন্যত্র। কবে আসবে তাও জানা নেই। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুত চিকিৎসক সঙ্কট দূর হবে। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ ফয়সল আহমেদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে সাতজন ডাক্তার সংযুক্তিতে রয়েছে এই বিষয়টা খুবই দুঃখজনক, আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তাদের সংযুক্তি আদেশ বাতিল চেয়ে চিঠি লিখেছি, কিন্তু অদ্যাবধি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :