ঢাকা শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

দীর্ঘ ৩৫ বছরের ভারসাম্যহীন শরীফকে খোঁজে পেল পরিবার

মিজানুর রহমান মিজান, টেকনাফ, কক্সবাজার

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ০৭:৪৬ পিএম

দীর্ঘ ৩৫ বছরের ভারসাম্যহীন শরীফকে খোঁজে পেল পরিবার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দুই বছরে চট্টগ্রাম থেকে নিখোঁজ মানসিক ভারসাম্যহীন শরীফকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে টেকনাফের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানসিক রোগী তহবিল-মারোত। 

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকালে টেকনাফ পৌরসভাস্থ মারোত কার্যালয়ে স্বজনদের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

মারোতের সংশ্লিষ্টরা জানান, মানবিক দায়বোধ থেকে মারোতের স্বেচ্ছাসেবী সেবা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। মূলত পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ও নিখোঁজ হয়ে টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন লোকজনকে খাবার সরবরাহ, চিকিৎসা ও সেবা প্রদানের তৎপরতা চালাচ্ছেন। ভবিষ্যতে সেবার আওতা ও পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তারা।

মোহাম্মদ শরীফ ওরফে বাইল্যা চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গুনদন্ডী শামু চৌধুরী পাড়ার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। তার বয়স এখন ৪০ বছর। তিনি শৈশবে এলাকার অন্য শিশুদের মত স্বাভাবিকভাবে হেসে খেলে বড় হচ্ছিলেন। কিন্তু ৮ বছর বয়সে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। সেই থেকে দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে তিনি অসুস্থ।

স্বজনরা জানিয়েছেন, গত দুই বছর আগের একদিন মোহাম্মদ শরীফ প্রতিদিনকার মত বাড়ীর আশপাশের এলাকায় ঘুরাঘুরি করছিলেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা ও রাতের কোন এক সময় বাড়ীতে ফিরলেও ওইদিন আর ফিরেননি। পরে স্বজনরা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীসহ সম্ভাব্য বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করলেও তার সন্ধান পাননি। সেই থেকে শরীফ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজের এক পর্যায়ে গত দেড় বছর আগে টেকনাফ পৌরসভা এলাকায় পৌঁছান। সেই থেকে শরীফ টেকনাফ পৌরসভাস্থ পুরাতন বাস টার্মিনাল এলাকার আবাসিক হোটেল রাজমহলের নিচে আশ্রয় নেন। প্রতিদিন টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরাঘুরি করলেও রাতে হোটেলটির নিচে কাটাতেন।

এদিকে মানসিক ভারসাম্যহীন শরীফকে নিয়মিত একই জায়গায় দেখতে পেয়ে একদিন কাছে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন স্থানীয় সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ কামাল। কিন্তু শরীফ ছিলেন ভাবলেশহীন। প্রথমদিকে কামালের সঙ্গে কোন কথাই বলতেন না। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই আলাপের চেষ্টা চালিয়ে যান তিনি। শরীফকে খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি কিছুটা পরিচর্যাও করেন মানবিক কামাল । বেশ কিছুদিন চেষ্টার পর শরীফের সঙ্গে ভাব জমে কামালের। এতে প্রায় বছরখানেক চেষ্টার শরীফের কাছ থেকে বাড়ীর ঠিকানা জানতে পারেন। তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে শরীফকে বাড়ী পাঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মারোতের সহায়তায় শরীফের স্বজনদের সন্ধান পান।

মানসিক ভারসাম্যহীন শরীফের খোঁজ পেয়ে বাড়ী নিয়ে যেতে টেকনাফ আসেন ভগ্নিপতি মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ। দীর্ঘ দুই বছর ধরে নিখোঁজ শ্যালকের অবশেষে সন্ধান পেয়ে দারুণ খুশি তিনি। আর মানবিক কাজের জন্য মারোতের সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন স্বজনরা।

মারোতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সর্বদক্ষিণের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে আনাগোনা রয়েছে বেশ কিছুসংখ্যক মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের। তাদের মধ্যে অনেকে ৮/১০ বছরের বেশী টেকনাফে অবস্থান করছিলেন। এসব ভবঘুরে মানুষের মানবেতর জীবনযাপন দেখে মর্মাহত স্থানীয় কয়েকজন যুবক মিলে বিগত ২০১৭ সালে গড়ে তুলেন ‘মানসিক রোগী তহবিল’-মারোত নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আর সংগঠনটি সেই থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের চিকিৎসা, খাবার সরবরাহ ও স্বজনদের খোঁজ নিয়ে বাড়ী পৌঁছানোর ব্যবস্থাসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার বিকালে দীর্ঘ দুই বছর ধরে নিখোঁজ শরীফকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলো সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা।

আরবি/জেডআর

Link copied!