শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জামাল উদ্দিন বাবলু, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ০৮:৩৬ পিএম

পিলখানা হত্যাকাণ্ড

সাক্ষী না দেওয়ায় আসামি হয় ঝাড়ুদার বাবুল

জামাল উদ্দিন বাবলু, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ০৮:৩৬ পিএম

সাক্ষী না দেওয়ায় আসামি হয় ঝাড়ুদার বাবুল

পরিবারসহ বাবুল হোসেন ইকবাল। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিথ্যা সাক্ষী দিতে বাধ্য করার পরও সাক্ষ্য না দেওয়ায় বিনাদোষে বেসামরিক কর্মচারী (ঝাড়ুদার) বাবুল হোসেন ইকবালকে আসামি করা হয়। তার বিরুদ্ধে সাক্ষী না থাকায় ২০১৩ সালে তিনি হত্যা মামলা থেকে অব্যহতি পায়। এরপরও বিস্ফোরক মামলার আসামি দেখিয়ে তাকে কারাবন্দি করে রাখা হয়। ফ্যাসিবাদী সরকার পালিয়ে যাওয়ায় গত ১৯ জানুয়ারি বাবুলসহ ১২৬ জনকে জামিন দেয় আদালত। ২৩ জানুয়ারি তারা কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন। 

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) এক সাক্ষাতকারে রূপালী বাংলাদেশকে তিনি এসব কথা বলেন। তবে তার সবচেয়ে বড় দুঃখ হচ্ছে, তার মা আয়েশা বেগমের মৃত্যুর খবর সময় মতো তিনি পাননি। শেষ বারের জন্য মায়ের মুখটিও তিনি দেখতে পারেননি। তার ইচ্ছে ছিল, কারামুক্ত হলে তিনি মাকে তার সঙ্গে রাখবেন। নিজেই মায়ের সেবা করবেন। কিন্তু একবছর আগে তার মা মারা যায়। মায়ের সঙ্গে শেষ দেখা হল না তার।

জামিনপ্রাপ্ত বাবুল লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালালবাজার ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মহাদেবপুর গ্রামের মহররম আলী বেপারী বাড়ির মৃত মিজহারুল ইসলামের ছেলে। তিনি পিলখানার ঝাড়ুদার (এনসি) ছিলেন। ১৯৯৭ সালে নিলা বেগমকে তিনি বিয়ে করেন। তার চাকরির বয়স যখন ১৫ বছর, তখন তার মেয়ে নিলার বয়স ছিল সাড়ে ৬ কিংবা ৭ বছর। নিলা তখন প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের পর প্রায় ১ মাস সে পিলখানাতেই চাকরিরত ছিল। তখন মোবাইলফোনে নিয়মিত তিনি বাড়িতে যোগাযোগও করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী না হওয়ায় আসামি হয়ে তাকে কারাগারে যেতে হয়। ১৫ বছর ১০ মাস পর কারাবন্দি থেকে তিনি মুক্ত হয়েছেন। 

বাবুলের মেয়ে ফারজানা আক্তার নিলা বলেন, প্রায় ১৬ বছর বাবা কারাগারে বন্দি ছিল। আমি বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছি। অনেক কষ্টে মা আমাকে পড়ালেখা করিয়েছে। এরপর আমি প্রায় ৪ বছর একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি। বিয়ের পরে ছেড়ে দিতে হয়েছে। আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। 

বাবুলের স্ত্রী নিলু বেগম বলেন, বিনাদোষে আমার স্বামীকে হত্যা মামলায় কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। পরে খালাস পেলেও আরও একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আর বের হতে দেয়নি। অনেক কষ্টে আমাদের দিনাতিপাত করতে হয়েছে। ২০১১ সালে বাবুল আমাকে বলেছিল, জীবন নষ্ট না করে ননদের কাছে মেয়েকে রেখে চলে যেতে। আমি বলেছি, যাবো না। আমি মেয়েকে নিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগীতায় বাবুলের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ সে মুক্ত। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, বাবুলকে যেন চাকরি ফিরিয়ে দেয়। ২০১০ সালের অক্টোবর মাসের পর থেকে তার বেতন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তা যেন আমাদেরকে দিয়ে দেয়। 

বাবুলের ভগ্নিপতি মনির আহমেদ হক সাহেব বলেন, বিনাদোষে বাবুলের কারাবন্দি পুরো পরিবারকে অসহায় করে দিয়েছে। তার মা মারা গেছেন। কিন্তু শেষবারের মতো তার মায়ের মুখটা দেখা হলো না। 

প্রতিবেশী মজিবুল হক বলেন, বাবুল ভালো মানুষ। দীর্ঘ ১৬ বছর জেলে খেটে এখন বাড়িতে এসেছে। তার মুক্তিতে এলাকার মানুষ খুব খুশি হয়েছে। 

বাবুল হোসেন ইকবাল বলেন, আমরা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলাম। অস্ত্র চালানোতো দূরের বিষয়, কাছে যাওয়ারও সুযোগ ছিল না। আমাকে হত্যার ঘটনায় সাক্ষী দিতে বলা হয়। সাক্ষী না দেওয়ায় আমাকে হত্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়। আমার বিরুদ্ধে কোন সাক্ষী না থাকায় মামলা থেকে আমাকে খালাস দেওয়া হয়। আমাদেরকে বের হতে দেবে না বলেই, পরে আবার বিস্ফোরক মামলায় কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। 

বাবুল আরও বলেন, ২০০৯ সালে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের সময় আমি পিলখানাতেই ছিলাম। তবে আমি গোলাগুলির আওয়াজ শুনেছি। কি হয়েছে, কারা করেছে, তা দেখিনি। শুধু দেখেছি ১০-১৫ জন সৈনিক অস্ত্র নিয়ে দৌঁড়ে যাচ্ছে। এরপর প্রায় ১ মাস পিলখানাতেই ছিলাম। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সারাহ খাতুন বলেছেন ‘তোমরা আমার সন্তান, তোমরা কোন কিছু করবা না, তোমাদেরকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছে, তোমরা এখানে থাকো’। কিন্তু ২৩ মার্চ আমাকে গাড়িতে করে প্রথমে আদালতে ও পরে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। সিআইডি, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, একটি প্যান্ট পড়ে আমি দেড় থেকে দুই মাস ছিলাম। পিলখানাতে সাড়ে ৩০০ টাকা বেতন থেকে কেটে নিয়ে একটি স্যান্ডো গেঞ্জি, একটি লুঙ্গি ও একটি গামছা দেওয়া হয়েছিল। খালি ফ্লোরে মাথায় বোতল দিয়ে ঘুমিয়েছি। ফ্যাসিবাদ সরকার পালিয়ে গেলেও বিজিবি থেকে আমাদের কোন খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি। 

ফের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বাবুল বলেন, আমি ১৫ বছর চাকরি করেছিলাম। জেলে না গেলে এখন আমার চাকরির বয়স ৩১ বছর হতো। আমার এখনো চাকরির বয়স আছে। চাকরি ফিরিয়ে দিলে আমি চাকরি করবো। আর যদি পেনশন দিতে চাই, তাও দ্রুত ব্যবস্থা করে দিন। আমি ক্ষতিপূরণ চাই। 

হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া নিয়ে বাবুল বলেন, হত্যা মামলায় সাক্ষী আমার নামে কোন সাক্ষ্য দেয়নি। পরে জজ কাগজপত্র যাচাই করে দেখেন, আমার নাম আছে সাক্ষী নেই। এতে আমাকে মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে আবার বিস্ফোরক মামলায় আমাকে আসামি দেখিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। ১৬ বছর কেরানীগঞ্জ আর কাশিমপুর কারাগারে আমার জীবনটা গেল। কষ্ট ছাড়া আমি কিছুই পাইনি। 

পরিবার নিয়ে তিনি বলেন, মেয়েটাকে প্রায় সাড়ে ৬ বছরে রেখে গেছি। মানুষের কাছে হাত বাড়িয়ে খাবার খেয়েছে। আমি কিছুই দিতে পারিনি। আমার শ্যালকসহ স্বজনরা না থাকলে, পরিবার রাস্তায় নেমে যেতো। অনেক সাহায্য করেছে তারা। জেল থেকে বের হয়ে ঢাকায় তাদের বাসায় ছিলাম। আমার স্ত্রীকে অনেকবার বলেছি তুমি চলে যাও। এ কষ্টের মধ্যে আমি তোমাকে দেখতে চায় না। তারপরেও মেয়েটাকে নিয়ে আমার আশায় থেকে গেছে। আমি কখনো ভাবতে পারিনি জেল থেকে আমরা বের হতে পারবো। গেল রমজানের আগে আমার মা মারা গেছেন। মারা যাওয়ার কয়েকদিন পর আমি জানতে পেরেছি। শেষে বারের মতো মাকে একটিবার দেখতে পারলাম না। সবচেয়ে বড় আক্ষেপ, আমি মায়ের সেবা করতে পারলাম না। 

আরবি/জেডআর

Link copied!