শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ০৮:৫৫ পিএম

বাগেরহাটে কোটি টাকার ভবন ৩৮ লাখে নিলাম

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ০৮:৫৫ পিএম

বাগেরহাটে কোটি টাকার ভবন ৩৮ লাখে নিলাম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাগেরহাটে কোটি টাকা মূল্যের কালেক্টরেট ভবন সিন্ডিকেট ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মাত্র ৩৮ লাখ এক হাজার টাকায় যুবলীগ নেতার প্রতিষ্ঠানকে নিলাম দেওয়া হয়েছে। নিলাম গ্রহিতারা ইতোমধ্যে ভবন ভাঙ্গার কাজ শুরু করেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ চলছে।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী সরকারের আমলে শেখ পরিবারের ক্ষমতার দাপটে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খুলনা মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহজালাল হোসেন সুজনের প্রতিষ্ঠান এসকে ট্রেডার্সকে কাজ দেওয়া হয়েছে। মাত্র ৩৮ লক্ষ টাকায় দেওয়া এই ভবন অন্তত এক কোটি টাকায় বিক্রি করা যেত, বলে দাবি ঠিকাদারদের। শেখ শাহজালাল হোসেন সুজনকে ৩৮ লক্ষ টাকায় এই কাজ দেওয়ায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে ৬০ লক্ষ টাকার বেশি। অতিদ্রুত এসকে ট্রেডার্সের কার্যাদেশ বাতিল করে পুনরায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি জারির আবেদন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও বঞ্চিত ঠিকাদাররা।

গনপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৬ মার্চ বাগেরহাট কালেক্টরেট ভবনের ব্লক-১ ও ব্লক-২ (জেলা প্রশাসকের কার্যালয়) নিলামের জন্য দরপত্র আহবান করেন বাগেরহাট গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস। বিভাগের নির্ধারিত রেট অনুযায়ী ২টি ভবনের সর্বনিম্ন মূল্য ধরা হয় ৩৭ লক্ষ ৩ হাজার ২৯৩ টাকা। বাগেরহাট, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার ১৫০ জন ঠিকাদার শিডিউল ক্রয় করেন। এর মধ্যে মাত্র ১০জন ঠিকাদার দরপত্রে অংশগ্রহন করেন। বাকি ১৪০ জন ঠিকাদারের বেশিরভাগ ঠিকাদারকে দরপত্রে অংশগ্রহন করতে দেওয়া হয়নি।অনেককে শিডিউল কিনতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। আর যারা কিনেছিলেন, তাদের কাউকে ভয়ভীতি দেখিয়ে, আবার কাউকে এক হাজার টাকার শিডিউলের মূল্য মাত্র দুই হাজার টাকা দিয়ে শিডিউলের কপি নিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাগেরহাট জেলা যুবলীগেরর সভাপতি শেখ পরিবারের আস্তাভাজন সরদার নাসির উদ্দিন ও তার লোকজন এটা করেছে বলে অভিযোগ ঠিকাদারদের।

কয়েক দফায় বিভিন্ন অফিসিয়াল প্রক্রিয়া শেষ করার পরে গেল বছরের ১৯ নভেম্বর গনপূর্ত বিভাগ, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ শাহ আলম ফারুক চৌধুরী এসকে ট্রেডার্সের অনুকূলে কার্যাদেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে এসকে ট্রেডার্সের পক্ষে লিঠু হোসেন নামের এক ব্যক্তি এই ভবন ভাঙ্গা শুরু করেছেন। তার দাবি তিনি এসকে ট্রেডার্সের কাছ থেকে বৈধভাবে ভবনটি ক্রয় করেছেন। তবে কত টাকায় তিনি ক্রয় করেছেন তা বলতে নারাজ এই ব্যবসায়ী।

শিডিউল ক্রয় করেও ভয়ভীতির কারণে জমা দিতে না পারা ঠিকাদার মোঃ শওকত আলী বলেন, আমিসহ অনেকেই শিডিউল কিনেছিলাম।কিন্তু বাগেরহাট জেলা যুবলীগেরর সভাপতি শেখ পরিবারের আস্তাভাজন সরদার নাসির উদ্দিন ও তার সহযোগী যুবলীগ নেতা হুমায়ুন কবির পলির আমাকে দরেপত্র জমা দিতে দেয়নি। আগ্রহী সব ঠিকাদাররা যদি এই নিলামে অংশগ্রহন করত, তাহলে এটি অন্তত এক কোটি টাকায় বিক্রি হত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনার এক ঠিকাদার বলেন, বাগেরহাট জেলা যুবলীগের একজন নেতা আমাকে ফোন করে দরপত্র জমা দিতে নিষেধ করেন। বলেন কাজটা খুলনা মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন পাবেন।

বাগেরহাটের আরেক ঠিকাদার বলেন, গনপূর্ত বিভাগে যখন শিডিউল কিনতে গিয়েছিলাম তখন যুবলীগ নেতা হুমায়ুন কবির পলি ও তার লোকজন আমাকে শিডিউল কিনতে নিষেধ করেন। শিডিউল বিক্রির দায়িত্বে থাকা গনপূর্ত বিভাগের এক নারী কর্মকর্তাকে আমার কাছে শিডিউল বিক্রি করতে নিষেধ করেন। অনেক বাকতিন্ডা ও বিভিন্ন স্থানে ফোন করার পরে আমি শিডিউল কিনতে পারি। তবে পরে  বাগেরহাট জেলা যুবলীগেরর সভাপতি সরদার নাসির উদ্দিন ও পলির হুমকি-ধামকীতে দরপত্র জমা দিতে পারিনি।

গনপূর্ত বিভাগ থেকে পাওয়া ১৫০ জন ঠিকাদারের মধ্যে আমরা খুলনা ও বাগেরহাটের ২৫ জন ঠিকাদারের সাথে কথা বলেছি। এদের মধ্যে কেউ কেউ সংবাদকর্মী পরিচয় পাওয়ার পরে কথা বলতে চায়নি। বেশিরভাগ ঠিকাদার জানিয়েছেন বাগেরহাট জেলা যুবলীগেরর সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিনের ভয়ে তারা দরপত্র জমা দিতে পারেননি। কাউ কাউকে রেলরোডস্থ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ডেকে শিডিউল মূল্য এক হাজার টাকার স্থানে ২ হাজার টাকা দিয়ে কাগজপত্র রেখে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ আমলের এসব অনিয়মকে ভাত মাছ উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন, বাগেরহাটের সম্পাদক এসকে হাসিব বলেন, বিগত দিনগুলোতে বাগেরহাটে টেন্ডার সিন্ডিকেট ছিল ভাত-মাছের মত। নির্দিষ্ট মানুষদের পছন্দের লোকদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য সিন্ডিকেট করা থেকে শুরু করে, প্রকৃত ঠিকাদারদের হুমকি-ধামকী এমনকি মারধরও করা হত। কালেক্টরেট ভবন নিলামে অংশগ্রহনের জন্য ১৫০জন ঠিকাদার শিডিউল ক্রয় করেছিল, সেখানে মাত্র ১০জন ঠিকাদার নিলামে অংশগ্রহন করেছে। এ থেকেই বোঝা যায় এখানে কত বড় দূর্নীতি হয়েছে। এই অনিয়মের সাথে যারা জড়িত তদন্তপূর্বক তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনার দাবি জনান সুশীল সমাজের এই প্রতিনিধি।

গনপূর্ত বিভাগ, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ শাহ আলম ফারুক চৌধুরী বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গনপূর্ত বিভাগের রেট শিডিউলের থেকে বেশি দামে ভবন দুটি নিলামে বিক্রয় করা হয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম হয়নি। এটা পুনঃরায় নিলাম দেওয়ার কোন নিয়ম নাই।

আরবি/জেডআর

Link copied!